বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচিত সরকারের কোনো অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন তিনি।বুধবার (১১ জুন) যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর কারও এমন ইচ্ছা রয়েছে বলে মনে হয় না। নির্বাচিত সরকারের হাতে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় জনগণ যাতে খুশি হয়- তা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। তবে নির্বাচনটি সঠিক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিগত ১৭ বছর বাংলাদেশের তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। তাদের মতামতের মূল্যায়ন করা হয়নি। তারা নতুন বাংলাদেশের অপেক্ষায়। আগামী নির্বাচন শুধু নিয়ম রক্ষার ভোট হবে না; শুধু নতুন সরকারের জন্য নয়, ভোট হবে নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য। নতুন বাংলাদেশের সংজ্ঞায় তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এক. সংস্কার, দুই. বিচার ও তিন, নির্বাচন।সংস্কার কমিশন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন তৈরি করেছি। আমরা তাদের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা।এ সময় আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদ আসার জন্য অপেক্ষা করছি। এই সনদটি জাতির সামনে জুলাই মাসের সনদ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল।বুধবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ড. ইউনূসের সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।এর আগে, মঙ্গলবার সফরের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কমনওয়েলথের মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বচওয়ে বৈঠক করেন।এছাড়া এদিন ব্রিটিশ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) সদস্যরা, মেনজিস অ্যাভিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের নির্বাচন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। ভোট দিতে মুখিয়ে আছে ভোটাররা। যারা গত ১৭ বছর ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
১১ জুন ২০২৫ ১০:৩৫ পিএম
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে বিএনপি। দ্রুত সময়ে নির্বাচনি রোডম্যাপ আদায়ের জন্য কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবছে দলটি। ইতোপূর্বে নির্বাচন, সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে দলটির টানাপোড়েন থাকলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ না দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেটি আরো স্পষ্ট হয়েছে।এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না করে তা পেছাতে সরকারের মধ্যে কেউ কেউ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও মনে করছে দলটি। তাই তিন অঙ্গসংগঠনের চলমান তারুণ্য সমাবেশ ও সদস্য সংগ্রহ শেষ হওয়ার পর মূল দলের কর্মসূচির কথা ভাবছেন নেতারা। মূলত সরকারকে চাপে ফেলতে নেতাকর্মীদের রাজপথমুখী কর্মসূচির দিকেই এগোচ্ছে বিএনপি। সেই পরিকল্পনা থেকেই দলটি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদেরও মতামত নিচ্ছে। সবশেষ গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়গুলো উঠে এসেছে।বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী একটি দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচন চাইছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা বললেও এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না। তাই বিএনপি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় যা কিছুর করার দরকার তা করতে চায় বিএনপি। এছাড়া আদালতের রায়ের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়ানো নিয়ে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিএনপি নেতারা।জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। হাসিনা সরকারের এই পতনকে নিজেদের দীর্ঘ আন্দোলনের একটি পরিণতি বা সমাপ্তির অধ্যায় বলে মনে করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন তাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের শেষটা নামিয়েছে ছাত্র-জনতা। তাদের প্রত্যাশা ছিল- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুততম সময়ে মৌলিক সংস্কারের পর একটি নির্বাচন দেবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে সেটিই হবে গণতান্ত্রিক সরকার।যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সুফল পাবেন দেশের মানুষ। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নয় মাস পার হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সরকার সুষ্পষ্টভাবে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও গণতান্ত্রিক লড়াই শেষ হয়নি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফলে, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সরকারের উপর ক্ষুব্ধ মনোভাব তৈরি হয়েছে।এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি সরকারকে সংস্কারের জন্যে সময় দিচ্ছে। কিন্তু সংস্কারের নামে কেউ কালক্ষেপণ করতে চাইলে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে সেটা মেনে নিতে পারি না।তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে একটি সংস্কার করতে হলে অবশ্যই নির্বাচিত সংসদের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য এতদিন ধরে আমরা সরকারের কাছে যে আহ্বান জানিয়ে আসছি, সে ব্যাপারে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। যে কারণে আমরা দাবি আদায়ে কর্মসূচির কথা ভাবছি। তিনি আরো বলেন, আদালতের রায় দেওয়ার পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ইশরাক হোসেন শপথ পড়াতে এতো গড়িমসি কেন সরকারের। এসব কারণে সরকার এখন নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, সংস্কারের নামে এ সরকারকে মানুষ সারাজীবন ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অথচ সরকারের সেদিকে খেয়াল নেই বরং নির্বাচন পেছাতে নানামুখী কূটকৌশল চলছে। বিএনপি মানুষের ভোটাধিকার অধিকার লড়াইয়ের আন্দোলনে ছিল ও আছে। প্রয়োজনে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ফের কর্মসূচিতে যাবে দল।বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, গণতন্ত্রের জন্যেই বিএনপিসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রায় দেড় দশক ধরে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এখন একটি নির্বাচিত সরকার সবার চাওয়া। কারণ, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের কাছে প্রকৃত দায়বদ্ধতা থাকে না। দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু একটি পক্ষ নির্বাচন পেছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত বলেও দলটির অভিযোগ।কারণ হিসেবে তারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের নয় মাস পার হলেও সরকার সংস্কারকাজ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। সরকার বারবার বলার চেষ্টা করছে, ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া এখনই ভোট দিলে ফের আরেক স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিতে পারে। এমন বক্তব্যের পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্র নেতাদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনও ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি। কারণ, শুরুতেই এসব ছাত্র নেতারা নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করে সংস্কারকে জোর দিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যু ও জুলাই ঘোষণাপত্রসহ নানা গুরুত্বহীন ইস্যু নিয়ে তারা সময় কাটাতে চায়।বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা ন্যূনতম সংস্কার শেষে একটি জাতীয় নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নির্বাচনি রোডম্যাপ আদায়ে প্রয়োজনে কর্মসূচির ঘোষণার কথাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন তারা। বিশেষ করে আদালতের রায়ের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন থেকে নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ করে আন্দোলন করছে তার সমর্থকেরা। গত দুই দিন থেকে সেখানে ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এরপরও সরকার কর্ণপাত না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বিএনপি নেতারা।গতকাল মঙ্গলবারও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আদালতের রায় ঘোষণার পরও ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে অন্তর্বর্তী সরকার গায়ের জোর খাটাচ্ছে। চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত মেয়র হতে পারলে ইশরাক কী দোষ করল? অর্থাৎ সরকার গায়ের জোরে ইশরাককে মেয়র হতে দিচ্ছে না। খিলক্ষেতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত রাকিবুল হাসানকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।রিজভী বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বয়স অনেক কম। হঠাৎ গুরুতর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেয়ে গেছেন। এজন্য তার কথাবার্তায় ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত অপরাধীদের এখনও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। কাজের চাইতে অকাজ বেশি করছে অন্তর্বর্তী সরকার।এদিকে গত সোমবার বিকালে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সদস্য ফরম সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই সরকার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলছে ও কাজ করছে। দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা না হলে ড. ইউনূস তার সম্মান রক্ষা করতে পারবেন না। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দ্রুত শপথ গ্রহণ না করানো হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।তিনি আরো বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতা ভোগের স্বপ্ন দেখছেন। চক্রান্ত করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন। একজন নারী উপদেষ্টা দাবি করেছেন, তারা নাকি জনতা দ্বারা নির্বাচিত। প্রধান উপদেষ্টার উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, অন্যথায় তিনি নিজেও সম্মান রক্ষা করতে পারবেন না।সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নানা আলোচনা উঠে আসে। সরকার নির্বাচন আয়োজনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দিকে অগ্রসর না হওয়ায় বিএনপিতে নানা সন্দেহ তৈরি হয়েছে আলোচনা উঠে আসে। নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রও দেখছে বিএনপি। দলটি সরকারের উপরে চাপ তৈরিতে মাঠে নামতে চায়। এছাড়া সরকারের ইন্ধনে কিছু রাজনৈতিক দল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন ইস্যুতে আন্দোলনে নামার পর বিএনপি মনে করছে এটি নির্বাচন পেছানোর কৌশল। বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বৈচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে যে তারুণ্য সমাবেশ হচ্ছে সেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এছাড়া দুই মাসব্যাপী চলবে সদস্য সংগ্রহের কাজ। তারপরেই মূল দল বিএনপিও মাঠে নামতে চায় নির্দিষ্ট এজেন্ডোয়। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা মিত্রদের সঙ্গে দলটি কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। তারা ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করছেন।বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব। নির্বাচন ছাড়া এভাবে দেশ চলতে পারে না। নির্বাচন না হলে দেশে আরো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।এ ব্যাপারে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশ সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়। সংস্কার যেমন দরকার তেমনি নির্বাচনও দরকার। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন আদায়ে বা সার্বিক বিষয়ে দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটি বাস্তবায়নে অতীতের মতো এখনো তৃণমূল মাঠে থাকবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
২১ মে ২০২৫ ০৬:১২ পিএম
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টায়ও ‘কৌশলী’ ভূমিকায় রয়েছে ইসলামী দলগুলো। একছাতার তলে এসে ‘এক বাক্সে’ ভোট পাঠানোর উদ্যোগে ছোট বড় ইসলামী দলগুলোতে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী দলগুলোর নেতাদের মধ্যে বোঝাপড়া বেড়েছে। জাতীয় সব ইস্যুতে দলগুলোর নেতারা ভেদাভেদ ভুলে এখন একমঞ্চে বসছেন প্রায়ই। সবশেষ নারী সংস্কার কমিশন বাতিলে দলগুলোর একাট্টা থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া এক বাক্সে ভোটার পাঠানো বা নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্য গড়তে অনেকেই সম্মত হয়েছে।তবে, এ বিষয়ে জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের শীর্ষ নেতারা দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন, তাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। একটু সময় লাগলেও মৌলিক জায়গায় তারা এককাতারে পৌঁছাতে পারবেন। তবে, যেহেতু নির্বাচনের এখনো কোনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি তাই তারা ধীরে এগোচ্ছেন। নানা আশঙ্কায় কোন প্রক্রিয়ায় ঐক্য হবে সেটিও প্রকাশ করতে চান না তারা। এছাড়া জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে অন্য দলগুলো যেমন কৌশলী ঠিক দলটিও ঐক্যের ব্যাপারে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতের ইসলামের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ইসলামী দলগুলোর বৃহৎ ঐক্যের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। আমাদের মধ্যে আলোচনা ও বোঝাপড়া দিনদিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। দেশের মানুষের ইসলামী দলগুলোর বিভিন্ন মত ও পথের নেতৃবৃন্দকে এককাতারে দেখতে চাওয়ার যে আকাক্সক্ষা রয়েছে সেটি পূরণ হবে বলে আমি মনে করি। ইতোমধ্যেই আমরা কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে বসেছি।জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের কথা বলে আসছি। এটা আমরা আওয়ামী লীগ পতনের পর বলছি সেইরকম নয়। আর বিষয়টিতে ইসলামী দলগুলোর আগ্রহও বেড়েছে। জোট করতে গেলে কিছু মতপার্থক্য থাকে। কে কতটুকু ছাড় দেবেন সেটা একটা বিষয়। সবমিলিয়ে তো একটা ঐক্য। ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের প্রক্রিয়া ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ঐক্য নিয়ে আলোচনা চলমান। এর লক্ষ্য হলো ইসলামী শক্তিগুলোকে এক জায়গায় আনা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষেরও একটা আগ্রহ আছে। কারণ তারা তো বিভিন্ন দলের ভূমিকায় হতাশ হয়েছেন। সাধারণ মানুষের চাওয়া আছে, ইসলামী শক্তি এক কাতারে আসলে তারা ভাল থাকবেন।জামায়াত ইসলামীর আকিদাগত সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, কোন কোন কওমি উলামা দলটির বিষয়ে আপত্তি থাকলেও আসলে একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকা ভালো কথা নয়। আমরা একের অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।জানা গেছে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত ইসলামী দল সব মিলিয়ে ৬০টিরও বেশি। এসব দলের মধ্যে হাতে গোনা ৭-৮টি দলের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম থাকলেও অনেক দল অস্তিত্ব বিলীনের পথে। নিবন্ধিত ইসলামী দল রয়েছে মাত্র ১১টি। নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো হলো- খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এর বাইরে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী এখন নিবন্ধনহীন। দলটির এক সময় নিবন্ধন ছিল। বারবার সংসদ নির্বাচনে নিজস্ব প্রতীক ‘দাড়িপাল্লা’ নিয়ে ভোট করে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিতও¡ করেছে দলটি। একটি রিটের পর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট।ওই বছরের ২ নভেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর জামায়াত ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। যদিও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। তারপর থেকে দলটির এখন আর নিবন্ধন নেই। আপিল বিভাগের জামায়াতের নিবন্ধনের ফিরে পেতে দলটির করা আপিলের রায় ঘোষণা হবে আগমী ১ জুন। ভোটের ক্ষেত্রে জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এখন মাঠ পর্যায়ে গুরুত্ব রয়েছে।গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফের ইসলামী দলগুলো নিজেদের মধ্যে ফের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। সেই জায়গা থেকে দলগুলোর নেতারা তারা একে অপরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। বিশেষ করে দুটি দলকে এ ব্যাপারে বেশ তৎপর দেখা গেছে। যার একটি হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী আর অন্যটি চরমোনই পীরের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইসলামী আন্দোলন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েও সভা সেমিনার করেছে।তবে, আওয়ামী লীগের পতনের পর ইসলামী দলগুলোকে একছাতায় আনার জোর চেষ্টা শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। যার অংশ হিসেবে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে জামায়াত ইসলামী।এর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজী আন্দোলনও ছিল। এছাড়া খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির আবু জাফর কাসেমী, জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মনিরুজ্জামান কাসেমীর মত আলেমদের সঙ্গেও জামায়াত নেতারা নানাভাবে বৈঠক করেন। মূলত ওই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল ইসলামী দলগুলো যেন একে অপরের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলা থেকে রিবত রাখা এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক ঐক্য গড়ে তোলা। যার প্রভাব মাঠ পর্যায়েও পড়ে। দলগুলোর বেশিরভাগ নেতাকর্মীর মধ্যে আশার সৃষ্টি হয়।ইসলামী দলগুলোর সেই ঐক্য প্রক্রিয়া এখন কোন পর্যায়ে সেটি জানতে ইসলামী ঘরানার রাজনৈতিক দলগুওেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর দৈনিক ভোরের আকাশ এর পক্ষ থেকে কথা যোগাযোগ করা হয়।নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের পর যে ঐক্য প্রক্রিয়া চলছিল সেটি এখনো চলমান। দলগুলোর নেতাদের পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তাও অব্যাহত রয়েছে।তবে, কিছুটা ধীর গতির কারণ হিসেবে বেশিরভাগ মাঠ পর্যায়ের কর্মী বলেছেন, দলগুলোর একে অপরের সঙ্গে বেশ ‘আকিদাগত’ অমিলই গতি মন্থর হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া জামায়াত ইসলামীকে অনেকে ‘মওদূদীবাদ’ মনে করাও নিজেদের মধ্যে ঐক্যে বাধার সৃষ্টি হয়।তবে, সব দলের প্রার্থী না হয়ে যেন একক প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয় সে ব্যাপারে সব দলের নেতাকর্মীর ইতিবাচক আগ্রহ অটুট রয়েছে। নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক বাড়াতে ইসলামী দলের নেতারা পরস্পরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধও বাড়িয়েছে।গত ২১ জানুয়ারি হঠাৎ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বরিশালে নিজ দলের কর্মী সভায় যোগ দেওয়ার আগে চরমোনাই সফর করেন। এসময় চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠকও করেন জামায়াত আমির।বৈঠক শেষে দুই ইসলামী দলের প্রধান বলেন, তারা ভোট কেন্দ্রে ইসলামী দলের পক্ষে একটি বাক্স পাঠাতে চান। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। এছাড়াও ইসলামী দলগুলোর নেতারা জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই একই মঞ্চে বসছেন। আলাপ আলোচনা করছেন তারা।গত ৩০ এপ্রিল জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া : করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বেশিরভাগ দলের নেতারা অংশ নেন। সেমিনারে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজসিল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটসহ সমমনা ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা এবং বিকর্তিত কমিশন কমিশন বাতিলে একাট্ট হন তারা।এর কয়েকদিন আগেও গত ২৩ এপ্রিল সমমনা ৫টি দলের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংলাপ করে। বৈঠক শেষে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছিলেন, আমরা সমমনা পাঁচটি ইসলামী রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পেরেছি।সামনে জাতীয় নির্বাচন, আমরা যেন ইসলামী দলগুলো একটি বাক্সে ভোট পাঠাতে পারি, বিষয়টি নিয়ে কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। অনেকের আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট। এছাড়া সংস্কার, নির্বাচন ও চলমান পরিস্থিতি সবাই একমত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ইসলামী দল হলেও ভিন্ন মতাদর্শের নেতাদের বৈঠকের পর একই সুরে বক্তব্য দেওয়ার পর ফের ঐক্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যেহেতু রাজনীতির মাঠ সরগরম হচ্ছে তাই অনেকে এখন মনে করছেন যে, দ্রুত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের গতি ত্বরান্বিত হবে। তবে, দলগুলোর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তফশিল ঘোষণার আগে বা নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর নেতারা স্পষ্ট করবেন। তারা এখন নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছন।একদিকে, বড় দলগুলোর মনোভাব বা পরিস্থিতি বুঝে তারা সামনের এগোনোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবেন। অন্যদিকে, আগে-ভাগে ঘোষণা দিলে সেটি কারো কারো মাথাব্যথার কারণ হতে পারে এমন বিষয়ও মাথায় রয়েছে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের। এছাড়া ঐক্যের ব্যাপারে জামায়াত ইসলামী যেমন কৌশলী আবার ঠিক বিপরীতে অন্যান্য দলগুলোও জামায়াত নিয়ে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
১৭ মে ২০২৫ ০৬:৪০ পিএম