মো. রেজাউর রহিম
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০২:৩৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
বেতন-ভাতা বাড়নোর দাবিতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচির মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে তাদের বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠনো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সম্পর্কিত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বেসরকারি শিক্ষকরা ক্লাস বন্ধ রেখে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ এবং সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সরকার বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের আর্থিক সক্ষমতা অনুসারে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-১) সাইয়েদ এ. জেড. মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত এই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের মূল বেতনের শতকরা হারে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এর আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায় উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) অর্থ বিভাগে পাঠান। এর প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ একটি পত্রের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, মূল্যস্ফীতিসহ জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আগের ডিও লেটারের ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতকরা হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণের অনুরোধ সংবলিত একটি পত্র অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে। ওই পত্রে ৫, ১০, ১৫ ও ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হলে সম্ভাব্য আর্থিক সংশ্লেষের একটি প্রাক্কলনও তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতিসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অর্থ বিভাগের ৩০ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১০০০ টাকা হতে ১৫০০ টাকা নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণের মূল বেতনের শতকরা হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
এ বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং উপসচিব পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, শিক্ষকদের ভাতা ও সুবিধা বাড়নোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাড়ি ভাড়া ও ভাতাদি বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
ফলে ওই এলাকায় সকল প্রকার যান আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এবার শুধু প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে তারা অবরোধ তুলে নেবেন না; দাবি মেনে নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান থেকে সরবেন না।
অবশ্য, শিক্ষক-কর্মচারীদের নেতারা এর আগে গতকাল দুপুরের মধ্যে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় তারা শাহবাগ ব্লকেড (অবরোধ) কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, শিক্ষকরা শাহবাগের দিকে যাত্রা করলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। কিন্তু শিক্ষকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে ফেলেন।
উল্লেখ্য, ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবিতে এবং পুলিশের বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে গত রোববার থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল ছিল তাদের এ আন্দোলনের চতুর্থ দিন। ৩ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ স্লোগানে উত্তাল করে তোলেন। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। আর সারা দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকার কথা দিয়েও বারবার কথা রাখছেন না এবং তাদের দাবি মেনে নিতে টালবাহানা করছে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের এ লাগাতার কর্মসূচির কারণে বর্তমানে সারা দেশের বেশিরভাগ এমপিওভুক্ত স্কুলে কর্মবিরতি চলছে, যা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বিষয়টি নিয়ে অভিবাবকরাও উৎকন্ঠায় রয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করেছে; তবে এই ঘোষণা ৫ অক্টোবর প্রকাশিত হওয়ার পর শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়, যাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া অন্তত দুই থেকে তিন হাজার টাকা করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, শিক্ষকদের দাবীর বিষয়ে সরকার আন্তরিক। বিষয়টি সমাধানে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদেও শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে। আর বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের উচ্চ মহলের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ