প্রতিবেদক, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১১ এএম
ছবি সংগ্রহীত
পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন এলাকার স্বাভাবিক সৌন্দর্য রক্ষায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালুরচর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে সৈকতের জনপ্রিয় সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকার বালুচর দখল করে গড়ে তোলা অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযান চলাকালে বাধা দেওয়ার অভিযোগে হৃদয় নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
সুগন্ধা পয়েন্টের বালুচরে গড়ে ওঠা সারিবদ্ধ টং দোকানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দৃষ্টি কাড়ছিল। তবে এসব স্থাপনা ছিল অনুমোদনবিহীন। এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আজিম খান, ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদ পিয়ার ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী। অভিযানে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এর আগে, ১১ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় সৈকতের বালুরচরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা ব্যক্তিদের স্ব-উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কেউ সাড়া না দেওয়ায় প্রশাসন বাধ্য হয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “সাগর পাড়ের পরিবেশ রক্ষায় কেউই বালিয়াড়িতে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে দোকান বসাতে পারবে না। পুরাতন দোকানগুলোকে ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতকে পরিবেশ সংকটাপন্ন (ইসি) এলাকা ঘোষণা করে সরকার। সেই আইনের আওতায় জোয়ার-ভাটার সীমারেখা থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়াও, ২০১১ সালে উচ্চ আদালত সৈকতের বালিয়াড়ির সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশনার আলোকে ২০২২ সালে প্রায় ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে তিন শতাধিক স্থাপনা তখনও রয়ে যায়, যেগুলোর ব্যাপারে পরে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান অভিযানে সেসব অবশিষ্ট স্থাপনা উচ্ছেদেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন বলেন, “বালুরচরে আর কোনো অবৈধ দোকান বসতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ নিজের উদ্যোগে না সরায়, তাহলে আমরা সব দোকান জব্দ করবো।”
ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “পর্যটন স্পট ধ্বংস করে, পরিবেশ নষ্ট করে কেউ বালিয়াড়িতে দোকান বসাতে পারবে না — সে যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন। কার্ড থাকুক বা না থাকুক, অবৈধ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানে আসা হবে। তবে বালুরচড়ে কোনোভাবেই আর দোকান বসানো চলবে না।”
ভোরের আকাশ//হ.র