পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫ ০৩:০২ পিএম
ইলিশের আশায় সমুদ্রে জেলেরা, ফিরছেন খালি হাতে
দীর্ঘ ৫৮ দিনের মৎস্য অবরোধ শেষে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরতে গেলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য মেলেনি—ফিরে এসেছেন খালি হাতে অনেক জেলে। বরগুনার পাথরঘাটা উপকূলের হাজারো মৎস্যজীবী এখন চরম অর্থসংকটে দিন পার করছেন। তীরে বসে কাটানো দুঃসহ অবরোধকাল পেরিয়ে মাছের আশায় সমুদ্রযাত্রা হলেও ফলাফল হতাশাজনক।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর এখনো উত্তাল। জেলেরা ট্রলার নিয়ে তীরে বসে আছেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন নদী ও সাগরের মাছনির্ভর পরিবারগুলো।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ শেষে ১২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত মোট ১৩৬ মেট্রিকটন মাছ অবতরণ হয়েছে। এর মধ্যে ইলিশ মাত্র ৫১ মেট্রিকটন। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ৮৫ মেট্রিকটন। এই সময়ে সরকার পেয়েছে ৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০ টাকা অবতরণ চার্জ, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম।
স্থানীয় জেলে সুলাইমান ফরাজী বলেন, “৫৮ দিন মাছ ধরতে পারিনি। ধার-দেনা করে সংসার চলেছে। এখন মাছ ধরতে গিয়ে কিছুই পাইনি। কীভাবে চলবে পরিবার?”
জেলেদের অভিযোগ, বছরের পর বছর এই পেশার সঙ্গে জড়িত থেকেও তারা সরকারি কোনো সহায়তা পান না। বরং সমুদ্রযাত্রায় ডাকাতির ভয় প্রতিনিয়ত তাড়া করে।
ট্রলার মালিক নূর মোহাম্মদ ফরাজী বলেন, “লাখ লাখ টাকার বাজার নিয়ে ট্রলার পাঠিয়ে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। জুন-সেপ্টেম্বর সময়টা ইলিশ মৌসুম হলেও এবারের শুরুটা অত্যন্ত হতাশাজনক।”
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। তবে সাম্প্রতিক বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই সমুদ্রে যেতে পারছেন না। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, সমুদ্র এলাকায় পানির স্তর বেড়েছে এবং সেখানে পর্যাপ্ত ইলিশও রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, “আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে তীরে ফিরবেন।”
জেলেপল্লিতে এখন অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তা। স্থানীয়দের দাবি, দুর্দশাগ্রস্ত জেলেদের জন্য দ্রুত সরকারিভাবে পুনর্বাসন ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার। একই সঙ্গে উপকূলীয় নিরাপত্তা ও আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে।
ভোরের আকাশ/আজাসা