খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫ ০৬:৩১ পিএম
কয়রায় ভয়াবহ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন, আতঙ্কে হাজারো মানুষ
খুলনার কয়রার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধে হঠাৎ করে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ চরম আতঙ্কে দিন পার করছে। বৈরী আবহাওয়া ও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে কপোতাক্ষ নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরেই বেড়িবাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। শুক্রবার (৩০ মে) সকালে হরিনখোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে বাঁধ ভেঙে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন হরিণখোলা, ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদসহ কয়রা উপজেলা সদরের আটগ্রামের ১৫ সহস্রাধিক মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিনখোলা এলাকায় ভাঙ্গনের খবর পাওয়ার পরপরই তারা বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেন। তাৎক্ষণিকভাবে পাউবো কর্তৃপক্ষ বালির বস্তা ফেলে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ শুরু করে। তবে নদীতে জোয়ারের সময় পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কারণ অতীতেও এ এলাকা একাধিকবার বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে হাজারো মানুষ।
হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার হয়। শুক্রবার ভোরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধে হঠাৎ ফাটল ও ধসের সৃষ্টি হয়। চোখের সামনে পাউবোর দেওয়া জিওব্যাগসহ বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ফসলি জমিসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদীতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তারা আরও জানান, বাঁধের যে কয়টি স্থান ধসে গেছে, তার সব জায়গায় মাটি সরে গিয়ে মধ্যের বালু বেরিয়ে গেছে। ওই বালুতে পানির ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে। নদীর পানির গতিপথ পাল্টে বেড়িবাঁধের গায়ে আছড়ে পড়ছে। ধসে যাওয়া স্থানগুলোয় সংস্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ পাশ থেকে মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন, আবার কেউ বাঁধের ঢাল থেকে জিওব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাঁধের স্থান মেরামতের চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান শেখ জানান, এলাকার বাসিন্দারা বাঁধ রক্ষায় আগাই না আসলি এ বাঁধ মেরামতে অনেক দেরি হবে। তখন এলাকায় আর বাস করবার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। বাঁধ মেরামত যাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তারা কেউ সময় থাকতি এগোয় না। যত মরণ এলাকার খাটে খাওয়া মানুষের।
হরিণখোলা গ্রামের মোল্লা হাফিজুল ইসলাম জানান, সরকারী বিপুল পরিমান টাকায় মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এরই মধ্যে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নির্মাণের সময় ওপরে এবং বাঁধের দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে এখন একটু জোয়ারের পানি বাড়লেই বাঁধ ধসে যাচ্ছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে, সে জন্য নদীর তীরে পাকা ব্লক দেওয়া দরকার।
গোবরা গ্রামের স্কুল শিক্ষক বিল্লাল হোসেন জানান, হরিণখোলা গ্রামের পাশের ওই বাঁধকেই বলা হতো কয়রার সবচেয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০২১ সালে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে সেখানে কাজ তত ভালো হয়নি। অধিকাংশ স্থানে বাঁধের ভেতরে বালু দেওয়ায় বাঁধ ধ্বসে যাচ্ছে। সকাল থেকে ভাঙনের পরিধি বেড়েছে।
খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, বৃহষ্পতিবার থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার বেড়েছে। কয়রার হরিণখোলা এলাকার বেড়িবাঁধে ধ্বস ও চৌকুনি এলাকায় কয়রা নদীর বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাঙন কবলিত স্থানে উপসহকারী প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করেছেন। আপাতত ভাঙনের পরিধি যাতে না বাড়ে এ জন্য বাঁধের গায়ে জিও ব্যাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান।
পাউবো খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে হরিণখোলা এলাকার বেড়িবাঁধে ভাঙন ও দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢোকে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাঙনের পরিধি যাতে না বাড়ে, সে জন্য জিও ব্যাগ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হবে।
ভোরের আকাশ/এসআই