পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫ ০২:৫৪ পিএম
নিম্নচাপের প্রভাবে পাথরঘাটায় বেরিবাঁধ ভেঙে প্লাবিত ৬ গ্রাম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ায় উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দুর্যোগ। গত দুইদিন ধরে দমকা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শুক্রবার সকালে প্রভাব আরও বাড়ে। নদনদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেশি পানি হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে মানিকখালি বাজার সংলগ্ন বেরিবাঁধ ভেঙে যাওয়ায়।
ভোররাতে বাঁধটি ছুটে যাওয়ার পরপরই অন্তত ৬টি গ্রাম—মানিকখালি, পূর্ব কালমেঘা, পশ্চিম কালমেঘা, চরদুয়ানী সহ আরো দুইটি গ্রাম—তীব্র জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়। অনেক পরিবার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে, রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যঘের মালিকরা। ঘেরের মাছ পানির সঙ্গে ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি মাঠের ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলেরও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা করছেন তারা। চরদুয়ানী এলাকার কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “বাঁধটা একবার ভেঙে গেলে আর কিছু থাকবে না। সব ফসল ও ঘেরের মাছ পানিতে মিলিয়ে যাবে। আমরা ভয়ে দিন গুনছি।”
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, “বাঁধ ছুটে যাওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ওই এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে শুকনো খাবার পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি আরও কিছু সময় সক্রিয় থাকবে এবং উপকূলজুড়ে ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, “ঘরের ভেতর হাঁটু পানি। চুলায় আগুন দিতে পারি না। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি।”
এদিকে সচেতন মহল বলছে, প্রতিবার দুর্যোগে একের পর এক বেরিবাঁধ ভেঙে পড়া রোধে টেকসই ও শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
ভোরের আকাশ/আজাসা