ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫ ১১:৪২ এএম
ঝিনাইদহে ক্ষেতমজুর সমিতির আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল
দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর শোষণের আগুন নিয়ে ঝিনাইদহের রাজপথে নেমে এসেছিলেন বাঁওড় ও খাসজলাশয়ের অসহায় মৎস্যজীবীরা। বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি আহুত সামাজিক মালিকানার দাবিতে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে।
সেখানে দাঁড়িয়ে বক্তারা যখন বলুহর, জয়দিয়া, কাঠগড়া, ফতেপুর, মর্জাদ, বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়সহ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা জলমহালের ইজারা প্রথা বাতিলের দাবি জানাচ্ছিলেন, তখন তাদের কণ্ঠে ছিল যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণা আর এক ন্যায্য সমাজের স্বপ্ন। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন, উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি, রেশন, পেনশন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও যৌথ তদারকিসহ ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন, যা তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ফিরিয়ে দেওয়ার পথ খুলে দেবে বলে তাদের বিশ্বাস।
গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ডা. কে আহমেদ সড়কস্থ সংগঠনের জেলা কার্যালয় থেকে লাল পতাকার মিছিল শুরু হয়। সেই লাল রঙে মিশে ছিল তাদের রক্ত আর ঘামের ইতিহাস, তাদের নিরন্তর সংগ্রাম। পায়রা চত্বরের সমাবেশে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সভাপতি কাজী ফারুকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নির্মল হালদার, ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা সাধারণ সম্পাদক সুজন বিপ্লব, ঝিনাইদহ জেলা কমিটি সদস্য নিত্য হালদার এবং যুব ইউনিয়ন জেলা কমিটির সভাপতি আবু তোয়াব অপুর মতো নেতারা যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন তাদের প্রতিটি শব্দে ছিল মৎস্যজীবী সমাজের অব্যক্ত বেদনা আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
বক্তারা বলেন, "দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনায় নিঃস্ব, ভূমিহীন মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বাঁওড় ও জলমহালের ৬০ শতাংশ মালিকানা জেলেদের এবং ৪০ শতাংশ মালিকানা রাষ্ট্রপক্ষে যৌথ উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তিনামা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।" তাদের কণ্ঠে ছিল দৃপ্ত ঘোষণা: "তা না হলে জোরদার আন্দোলনের মাধ্যমে এই দাবি আদায় করে নেওয়া হবে।" নতুন দিনের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যখন দেশজুড়ে উচ্চারিত হচ্ছে, তখন এই অতি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা অপরিহার্য বলে তারা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান।
বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এই আন্দোলন কেবল কিছু দাবি আদায়ের নয়, এটি মৎস্যজীবী সমাজের টিকে থাকার সংগ্রাম, তাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই। তাদের চোখের জলে ভেজা মাটি যেন তাদের অধিকারের দাবিতে আরও বেশি উর্বর হয়ে উঠেছে।
ভোরের আকাশ/আজাসা