× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শ্রীপুরে ব্যবসায়ীর কাছে ওসির 'ঘুষ চাওয়ার' অডিও ফাঁস

শফিকুল ইসলাম, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:২৩ পিএম

শ্রীপুরে ব্যবসায়ীর কাছে ওসির 'ঘুষ চাওয়ার' অডিও ফাঁস

শ্রীপুরে ব্যবসায়ীর কাছে ওসির 'ঘুষ চাওয়ার' অডিও ফাঁস

গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ঝুট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ওসির ঘুষ দাবি সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৬ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের অডিওতে কয়েক দফা অনৈতিক সুবিধা দাবি করার কথা শোনা গেছে। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, আসামি গ্রেপ্তার না করার শর্তে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবির কথাও উঠে এসেছে অডিওতে।

গত রোববার রাত থেকে এটি ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়াতে থাকে। এতে ব্যবসায়ী মো. সেলিম সিকদার সঙ্গে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের কণ্ঠের মতো একজনকে কথা বলতে শোনা যায়।ওসির দাবি কল রেকর্ডটি এডিট করা। 

ওসির কণ্ঠের সদৃশ কথোপকথনে যা ছিলো-

ওসি : ‘আমি আমিনুলকে বলে দিচ্ছি, তুই আমাকে এক লাখ ৩০ দে।’
ব্যবসায়ী : ‘স্যার আমার হাত দিয়ে?’
ওসি : ‘তুমি এসব বুঝবা না।’
ব্যবসায়ী : ‘হায় হায় স্যার! এই কথা আপনি বলছেন?
ওসি : তুমি এসব বুঝবা না, সে সব ভেঙে খাবে।’
ব্যবসায়ী : তাহলে এখন কী করব স্যার। তাহলে কী তাদের দায়ী করাব? 
ওসি : ‘ওদের দিয়ে করাও, তুমি পেছনে থাকো।’
ব্যবসায়ী : ‘এরপর যদি ওরা গাড়ির সামনে দাঁড়ায়, তাহলে কী করব। আপনি কি ব্যাকআপ দেবেন?
ওসি : ‘সামনে থাকবে না। মুন্না, তোর সঙ্গে কি মুন্নার সম্পর্ক আছে?’
ব্যবসায়ী : ‘সে তো জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের।’
ওসি : ‘আচ্ছা এই বিষয়টি আমি দেখছি।’
ব্যবসায়ী : ‘শেষ পর্যন্ত কি আমিনুলরা ট্যাকেল দিতে পারবে, ওদের নামে ব্যবসা দিলে?’
ওসি : ‘আমি আগে দেখি, কয়েক দিন দেখি।’ 
ব্যবসায়ী : ‘শনিবার তো বিস্কুট বের হবে এক গাড়ি।’
ওসি : ‘বিস্কুট বের হবে সেটা তো আরেক ঝামেলা। মুন্না তো এখন বিস্কুট চাচ্ছে না। স্পিনিং চাচ্ছে।’
ব্যবসায়ী : ‘যদি বিএনপিরা করে তাহলে তো চাইতে পারবে না। আমিনুল তো থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক)। আমিনুল আর তার বাপের নামে দেব স্ট্যাম্প কইরা। গোপনে মালিকানা থাকবে আমার। এমডি স্যারকে বইলা দেব, আপাতত ভাইস্তা আর ছোট ভাইকে দিয়ে ব্যবসা করাইতাছি। আর তলে তলে আমি সব হেন্ডেল কইরা দেব।’
ওসি : ‘হ্যাঁ, এটাই ভালো। এটা আমিও বলে দেব। মুন্নার কাছে গেলে সব আউট হয়ে যাবে।’
ব্যবসায়ী : ‘তাহলে আপনি কাজ কইরেন। মুন্নার কাছে গেলে টাকার অ্যামাউন্ট চাইব অনেক। যে টাকা এখানে তো এত বেশি টাকা দেওয়া সম্ভব না।’ 
ওসি : ‘আমি আমিনুলকে বলে দিবোনে।’
ব্যবসায়ী : ‘আমিনুলকে আগেই বলতে হবে না। আগে আমরা বাড়িতে বসি।’
ওসি : ‘বসো।’ 
ব্যবসায়ী : ‘আমিনুলকে ফোন দিয়ে এনে নানাকে নিয়ে বসি। গোপনে বসি যদি আমাদের লেভেলে হয়, তাহলে ওগরে দিয়ে দেব, আর যদি না হয় তাহলে ব্যবসা মোর্শেদকে দিয়ে দেব।’
ওসি : ‘মোর্শেদ চেয়ারম্যানকে?’ 
ব্যবসায়ী : ‘আমাদের কথার বাইরে গেলে মোর্শেদ চেয়ারম্যানকে দিয়ে দেব। খামো না কাউকে খাইতেও দেব না।’
ওসি : ‘দেখা যাক। আমি কথা বলছি।’
ব্যবসায়ী : ‘এখন কিছু বলতে হবে না স্যার।’
ওসি : ‘তোমার নানা আমাকে দেখে না কেন? ৫ হাজার ১০ হাজার এটা কোন টাকা? এই টাকা দিয়ে কী হয়। আমি এত চাপ নিচ্ছি। তোমার নানাকে বলো, আমাকে লাখ পাঁচেক টাকা দিতে।’
ব্যবসায়ী: ‘বাড়ির কাম করতে যাইয়া অবস্থা খুবই খারাপ।’ 
ওসি: ‘এসব কথা বলো না। আমি যেটা বলি সেটা কর। না হলে ঝামেলা হবে।’
ব্যবসায়ী : ‘আরেকটা কথা বলি, ওই যে শাহাবুদ্দিন মামুর কথা যে বলছিলাম আপনাকে, শৈলাট রোডে বাড়ি। শাহাবুদ্দিন মামু। ওর বাসায় আমিনুল আপনাকে একবার পাঠাইছে। ওর কথা আপনাকে বলেছিলাম। আপনি বলছিলেন নিয়ে আইসো। ওরে নিয়ে আসলে ৫০ হাজার টাকা দেব।’ 
ওসি : ‘ধুর, ৫০ হাজার টাকা? ওকে বলো, লাখখানেক টাকা দিতে।’
ব্যবসায়ী : ‘তাহলে আমি ফোন ধরিয়ে দিই। আপনি একটু কথা বলবেন?
ওসি : ‘কোনো কথা হবে না। ওকে নিয়ে আসো। তাহলে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলবেন? কোনো কথা না। তুমি আমাকে চিন না? এত সমস্যা কী? সমস্যা করলে ধরে নিয়ে আসব।’
ব্যবসায়ী: ‘তাহলে আমি ওর কাছে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিই। এক মিনিট কথা বলবেন।’
ওসি: ‘যাও আজকেই নিয়ে আসবা।’ 
ব্যবসায়ী : ‘না হলে সে বিশ্বাস করবে না। আপনি বলবেন আগামীকাল নিয়ে আসবো।’
ওসি : ‘সে না তুমি নিয়ে আসবা।’ 
ব্যবসায়ী : ‘তাহলে বিশ্বাস করবে। আপনি শুধু বলবেন, ‘এক (লাখ টাকা) নিয়ে আসেন। আর স্যার, আমিনুলরে এখন কিছু বলার দরকার নেই। আমরা বইসা এটাই করতেছি স্যার।’
ওসি : ‘তোমার নানারে বলো, পাঁচ (লাখ) ব্যবস্থা করে দিতে।’
ব্যবসায়ী : ‘স্যার বিশ্বাস করবেন, আমরা যে ব্যবসা করি, এখন সেই পরিমাণ টাকা নাই স্যার।’ 
ওসি : ‘তোমাদের ব্যবসা লাগে না। ব্যবসায়ী গাড়ি মাইর খাইয়া পইড়া রইছে। এ মাসটা যাক, আমি দুই লাখ দেব।’
ওসি : ‘এত কথা বল কেন? ওসি বলছে করে দিয়ো। ওসি বলছে করে দিয়ো। তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলা না।’
ব্যবসায়ী : ‘ফুলহাতা? আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, ‘ওসি সাহেব আমাকে চাপ দিচ্ছেন। আমাকে একটি লেখা দিয়েছেন তিনি। এটা ফেসবুকে এসে বলতে চাপ দিচ্ছেন যে কল রেকর্ড মিথ্যা। এমন চাপ দিচ্ছেন। ওসি সাহেব আমাকে মাসোহারা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। আমি প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা দিই। তবুও তিনি আরও চাপ দেন। ওসি আমাকে ছাত্রলীগের তকমা দিয়ে গ্রেপ্তার করার জন্য চাপ দেন। অডিও প্রকাশ করার কারণে ওসি আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘আমার কথা এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র।’

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেককে মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তিনি কল গ্রহণ করেননি।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রংপুর এগিয়ে থাকবে

বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রংপুর এগিয়ে থাকবে

সংশ্লিষ্ট

সাটুরিয়ায় ভুয়া চিকিৎসকের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

সাটুরিয়ায় ভুয়া চিকিৎসকের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ডিসপ্লেসহ আটক ১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ডিসপ্লেসহ আটক ১

বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব বেড়েছে ৩১৬ কোটি টাকা

বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব বেড়েছে ৩১৬ কোটি টাকা

আখাউড়ায় মাদকাসক্ত স্বামীর ১ মাসের কারাদণ্ড

আখাউড়ায় মাদকাসক্ত স্বামীর ১ মাসের কারাদণ্ড