বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:৪৯ এএম
সংগৃহীত ছবি
ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পাবদা মাছের চাহিদা বাড়ায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এই মাছের রপ্তানি বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে রপ্তানি বৃদ্ধির এই ইতিবাচক প্রবণতার মধ্যেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মাছের উৎপাদন খরচ। এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছেন স্থানীয় মাছচাষিরা।
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৯০ কেজি মাছ রপ্তানি হয়েছে, যার রপ্তানিমূল্য ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশই ছিল পাবদা মাছ।
রপ্তানিকৃত মাছের মধ্যে প্রায় ৪ শতাংশ ছিল ইলিশ, যা শুধুমাত্র দুর্গাপূজার উপহার হিসেবে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এর আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮২ লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ কেজি এবং রপ্তানিমূল্য ছিল ২ কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৫ ডলার।
অন্যদিকে, আমদানির ক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৭০২ কেজি মাছ, যার মূল্য ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ ডলার। আগের বছর (২০২৩-২৪) এই পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬ হাজার ৮৮২ কেজি, অর্থমূল্য ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৫০ ডলার।
অর্থাৎ, রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, আর আমদানি কমেছে প্রায় অর্ধেকে।
বেনাপোলের সততা ফিস কোম্পানির মালিক রেজাউল ইসলাম খোকন জানান, ৪০ একর জলাশয়ে তিনি পাবদা, তেলাপিয়া ও রুই জাতের মাছ চাষ করেন। রপ্তানি বাড়লেও তিনি লাভবান হতে পারছেন না।
তার ভাষায়, “খাদ্য, বিদ্যুৎ ও শ্রমের দাম এতটাই বেড়েছে যে এখন ২ কেজির রুই মাছ উৎপাদনে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। আগে যেখানে ৩০ শতাংশ মুনাফা হতো, এখন তা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার নিজস্ব ঘের থেকেই সরাসরি পাবদা মাছ ভারতে রপ্তানি করি। এখন পাবদার চাষই বেশি করছি।”
স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা ও মনিরামপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাবদা মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর মূল কারণ হলো, ভারতে এই মাছের চাহিদা গত কয়েক বছরে অনেক গুণ বেড়েছে। ফলে চাষিরা রুই, কাতলা ও পাঙাশ মাছের চাষ কিছুটা কমিয়ে পাবদার চাষে ঝুঁকছেন।
ভারতে মাছ রপ্তানিকারক শার্শার বাগআঁচড়ার জনতা ফিস-এর মালিক আব্দুল কুদ্দুস জানান, “আমি সব ধরনের মাছ রপ্তানি করি, তবে পাবদার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ভারতে বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি পাবদা রপ্তানি করি। কেজিতে ১৫-১৬টা হয় এমন ছোট পাবদার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য কোয়ারেন্টিন কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, “ভারতে পাবদা মাছের চাহিদা বাড়ায় দেশের অনেক অঞ্চলে এর উৎপাদন বেড়েছে। যশোর অঞ্চল মাছ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত, তাই এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ সরবরাহ হচ্ছে। এমনকি আখাউড়া সীমান্ত দিয়েও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে আমদানির পরিমাণ কমে এসেছে।”
ভোরের আকাশ // হ.র