চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫ ০৯:২৭ পিএম
চরফ্যাশনে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে অন্তত ২০০টির বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে বিশেষ করে চরমানিকা, মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চরফ্যাশনের বেতুয়া মেঘনা পাড় ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে তীব্র স্রোত এবং উত্তাল ঢেউ অব্যাহত রয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এমন উচ্চতার জোয়ার দীর্ঘদিন পর দেখেছেন তারা। পানির উচ্চতা বিকেল ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দুর্ভোগ বেড়েছে দ্বীপ ইউনিয়নগুলোতেও। ঢালচর, চরকুকরি-মুকরি ও মুজিবনগরের মতো বিচ্ছিন্ন চরে কোনো ধরনের বেড়িবাঁধ না থাকায় পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। ঢালচরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মাতব্বর জানান, “চরে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। পানি বাড়তে থাকায় আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
চরমানিকা ইউনিয়নের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, “বুধবার রাতে ঝড়ো হাওয়ায় আমার ঘরের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভিজে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে। আজ রাত কিভাবে কাটবে, জানি না।”
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, “জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত তা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।”
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। মৎস্যজীবীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অনুরোধ জানিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ২১টি ইউনিয়নে ৪২০ জন সিপিপি সদস্য মাঠে কাজ করছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার। পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের সমন্বয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিত কার্যক্রম।
তিনি আরও জানান, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব করে তা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত সহায়তা প্রদান করা হবে।
ভোরের আকাশ/জাআ