স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫ ০২:৪৬ এএম
কেন বাড়ছে ক্যান্সার? জানুন বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটিরও বেশি মানুষ। এ ছাড়া ওই বছর ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষের। সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ক্যান্সার বৃদ্ধির পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো কী?
জীবনযাপনের ধরন
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ের জীবনযাপন ক্যান্সার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। গবেষণা বলছে, ক্যান্সারের অন্তত ৪০-৫০ শতাংশ ঝুঁকি জীবনধারার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার—ধূমপান, জর্দা, খৈনি, এবং পানমশলা—যেগুলো ফুসফুস, মুখ, অগ্ন্যাশয়, ব্লাডার এবং মূত্রথলির ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।
অ্যালকোহল গ্রহণ
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও ক্যান্সার বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি খাদ্যনালী, লিভার এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও রেড মিট গ্রহণ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে এই ধরনের খাদ্যের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে, যা ক্যান্সার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
মানসিক চাপ ও ওজন বৃদ্ধি
মানসিক চাপ সরাসরি ক্যান্সারের কারণ না হলেও এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে ক্যান্সার কোষ সহজে নষ্ট হয় না। পাশাপাশি, অতিরিক্ত ওজন বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আয়ু বৃদ্ধি ও উন্নত শনাক্তকরণ
মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা ও নির্ণয় পদ্ধতির কারণে ক্যান্সার শনাক্তের হারও বেড়েছে। স্তন, বৃহদান্ত্র, প্রস্টেট, ফুসফুস এবং কিডনি ক্যান্সার বর্তমানে বেশি দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাস সংক্রমণ
কিছু ভাইরাসও ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে। যেমন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত সূর্যালোক
বেশি সময় রোদের নিচে থাকার ফলে ত্বকের ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে, বিশেষ করে ফর্সা ত্বকের মানুষের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি।
প্লাস্টিকের ব্যবহার
গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের পাত্রে রাখলে সেখান থেকে কার্সিনোজেনিক উপাদান নির্গত হয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। একইভাবে, প্লাস্টিকের ব্যাগ বা প্যাকেজিংয়ের অতিরিক্ত ব্যবহারও ক্ষতিকর রাসায়নিক শরীরে প্রবেশের পথ খুলে দেয়।
কীভাবে কমানো যায় ঝুঁকি?
ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত থাকতে জীবনযাপনে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। তামাক ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। সেই সঙ্গে সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও প্রয়োজন।
ভোরের আকাশ//হ.র