নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫ ০১:১৩ এএম
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সংস্কার, তা আদায় করেই ছাড়বে জামায়াত: শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, "আমরা সেই সংস্কারগুলো আদায় করেই ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনও আদায় করে ছাড়ব।"
শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত জামায়াতের বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর মহানগর ও জেলা জামায়াত এই জনসভার আয়োজন করে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “যারা এখনও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। প্রশাসনিক ক্যু বা মাস্তানতন্ত্র, কালো টাকার খেলা—এসব আর চলতে দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর আলামতও বোঝা যাচ্ছে। তবে ইতিহাস বলে—যখন জনগণের জাগরণ হয়, তখন কোনো শক্তিই ফ্যাসিবাদকে রক্ষা করতে পারে না। অতীতে শেখ হাসিনার হাতে সব বাহিনী ও দোর্দণ্ড প্রতাপ থাকলেও, জনগণের জাগরণ তাকে রক্ষা করতে পারেনি। এবারও জনগণ আরেকটি ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেবে না।”
জামায়াতের আমির আরও বলেন, “আমরা কথা দিচ্ছি, ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্ন মুছে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। আমাদের কেউ থামাতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছরে জামায়াত জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছে। কেয়ারটেকার সরকারের প্রস্তাব প্রথম দিয়েছিল জামায়াতের তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযম। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৯১ সালে এবং পরে আরও কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। অথচ এখন সেই ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”
জনসভায় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগও তোলেন তিনি। বলেন, “সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের দুইজন আমির, দুইজন নায়েবে আমিরসহ ১১ জন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আজকের এই জনসভায় উপস্থিত শহীদ এটিএম আজহারুল ইসলাম জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করছেন।”
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আবু সাঈদদের মতো যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের পরও আমরা কেন ধৈর্য হারাচ্ছি? আজ দেশের প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি পত্রিকার পাতা, স্যাটেলাইট মিডিয়ায় অপশাসনের বিভৎস চিত্র উঠে আসছে। জনগণের জীবনের, ইজ্জতের, সম্পদের ওপর থাবা চলছে। এমনকি তারা এখন নিজেদের লোকজনকেও হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না।”
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না।”
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে আয়োজিত এই জনসভা শুরু হয় জুমার নামাজের পরপরই। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, নামাজ শেষে মঞ্চে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতিতে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ভিড় উপচে পড়ে পাশের সড়কেও।
এই জনসভা থেকে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়।
ভোরের আকাশ//হ.র