তারিক আল বান্না
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০২:৫০ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
তীরে এসে বাংলাদেশের তরী ডুবেছে আবারও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আশা জাগিয়েও পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের লিগ পর্বের ম্যাচে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে ৩ উইকেটে। এর আগে বাংলাদেশ চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জিততে জিততে হেরে যায়।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবারের আসরে ৭ উইকেটে একমাত্র জয় পাওয়া বাংলাদেশ আজ বৃহস্পতিবার লড়বে বিশ্বের সেরা দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ভারতের বিশাখাপত্তমে বিকেল সাড়ে তিনটায় মাঠে গড়াবে অসম শক্তির এ লড়াই।
বাংলাদেশ আগের যে চার ওয়ানডেতে অজিদের কাছে হেরেছে, সেখানে শেষ তিনটি ম্যাচে সহজেই পরাজিত হয়েছিল। তবে ২০২২ সালের ২৫ মার্চ ওয়েলিংটনে প্রথম দফায় মুখোমুখিতে; কিন্তু বাংলাদেশ বেশ ভালো লড়াই করেছিল। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হারলেও জয় পেতে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ পাঁচটি উইকেট হারাতে হয়। বর্তমান দলের রিতু মনি, নাহিদা আক্তার, শারমিন আখতার, ফারজানা হক, নিগার সুলতানা জ্যোতি, ফাহিমা খাতুন তিন বছর আগের ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে ছিলেন। ফলে তারা অস্ট্রেলিয়ার শক্তিমত্তা কিংবা দুর্বলতা সম্পর্কে বেশ কিছুটা জানেন। সেটাও আজ কাজে লাগতে পারে, যদি সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন।
অসম শক্তির লড়াই হলেও এটা ক্রিকেট। যা অনিশ্চিত গৌরবের খেলা বলে পরিচিত। সেই সুবাদে বাংলাদেশ অলৌকিকভাবে জিততেও পারে। তবে সেখানে প্রয়োজন ভাগ্য। সেই ভাগ্য নিজেদের অনুকূলে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতে হবে বাংলাদেশ নারী দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই।
ব্যাটে স্বর্ণা আক্তার ফারজানা হক, শারমিন আখতার, অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি, সোবহানা মোস্তারি, রিতু মনিরা যদি সেরাটা দিতে পারে তাহলে বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা থাকবে। বিশেষ করে গত ম্যাচে স্বর্ণা যে অসাধারণ বাটিং করেছেন চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে, তাতে বাংলাদেশ অজিদের বিপক্ষে ম্যাচে আশাবাদী হতেই পারে। সেই সঙ্গে স্বর্ণা, মারুফা আক্তার, নাহিদা আক্তার এবং রিতু মনি বল হাতে ভালো করলে অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারে।
ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই। সেটার জন্য অবশ্যই কঠোর চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে সহজ সহজ ক্যাচ মিস করা যাবে না। যে কারণে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচে হেরেছে। ওই দুই ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো থাকতো।
অস্ট্রেলিয়া সর্বোচ্চ সাতবার বিশ^কাপ জিতেছে। আর রানার্সআপ হয়েছে দুই বার। অর্থাৎ আগের বারটি আসরের মধ্যে অজিরা ফাইনালে খেলেছে ৯ বার। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডেতে পরস্পরের মোকাবিলা করেছে চার বার। প্রতিটি ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। তাই পূর্বের চার হারের লজ্জাজনক রেকর্ড নিয়ে বাংলাদেশ আজ তাদের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৩৩ রানের টার্গেট দিয়েছিল টাইগ্রেসরা। ব্যাটের ধারের পাশাপাশি বোলিংয়েও তোপ দেগেছিলেন নাহিদা আখতার আর রাবেয়া খানরা। তবে শেষরক্ষা হলো না। ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাবি খাওয়া প্রোটিয়া মেয়েরা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটিতে জয় তুলে নিয়েছে।
এর আগে ইংল্যান্ডকে বাগে পেয়েও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও তীরে এসে তরী ডুবল নিগা সুলতানাদের। ইংল্যান্ডের মতো দক্ষিণ আফ্রিকারও ৭৮ রানে ৫ উইকেট ফেলে দিয়েও ম্যাচ বের করতে পারলেন না তারা। বাংলাদেশের ৬ উইকেটে ২৩২ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯.৩ ওভারে ৭ উইকেটে তুলল ২৩৫ রান। একাধিক সহজ ক্যাচ ফেলে ম্যাচ হাতছাড়া করে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে (গতকালের ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান ম্যাচের ফলাফল ছাড়া) রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ৪ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পেয়ে ইংল্যান্ড রয়েছে পরের পজিশনে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পেয়ে আছে চতুর্থ স্থানে।
নিউজিল্যান্ড ৪ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পেয়ে পঞ্চম, শ্রীলঙ্কা ৪ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে এবং পাকিস্তান ৩ ম্যাচের সবগুলোতেই হেরে শেষ বা অষ্টম স্থানে রয়েছে।
অলৌকিকভাবে হোক কিংবা অন্য কোনভাবে হোক আজ অজি নারীদের বিরুদ্ধে জিততে পারলে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সেইসঙ্গে পয়েন্ট তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে আসবে টাইগ্রেসরা। আর সেটা হলে শেষচারে যাওয়ার পথ তৈরিও হবে বাংলাদেশের।
ভোরের আকাশ/এসএইচ