তামাকপণ্যের করকাঠামোয় সংস্কার করতে হবে: কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোন একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একইসাথে, তামাকখাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারের বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে গত দু’দিনব্যাপী (১২ ও ১৩ মার্চ) অনুষ্ঠিত “তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকবৃন্দ। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ২টি কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত মোট ৫০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরো সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
কর্মশালায় জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট সতেরো লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
কর্মশালাগুলোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকন্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, মো. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোন একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একইসাথে, তামাকখাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারের বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে গত দু’দিনব্যাপী (১২ ও ১৩ মার্চ) অনুষ্ঠিত “তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকবৃন্দ। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ২টি কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত মোট ৫০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরো সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।কর্মশালায় জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট সতেরো লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।কর্মশালাগুলোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকন্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, মো. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক: সরকার রাজস্বের জন্য হাহাকার করছে। যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়, সেটিও আদায় হয় না। ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অথচ চোখের সামনেই লাখ লাখ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে, ভোক্তার কাছ থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট হিসেবে কেটেও রাখছে; কিন্তু সরকারের খাতায় জমা দিচ্ছে না। বলা যায়, দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবেই সারা দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা ইউনিটের পরিমাণ এক কোটি ১৮ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটের সংখ্যা প্রায় ৬৩ লাখ। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র পাঁচ লাখ ৭০ হাজার।দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার বিপরীতে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ শতাংশেরও নিচে। এর মধ্যে রিটার্ন দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার লাখ ৮০ হাজার। ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা এনবিআরের কাঠামোগত দুর্বলতা হিসেবেই মনে করছেন। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করছেন। তবে নিবন্ধন বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা। এর আগে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর ছাড়াও সেলফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে কেনাকাটা, হোটেলে খাওয়া, সিনেমা দেখাসহ দৈনন্দিন লেনদেনে ভোক্তারা ভ্যাট দিচ্ছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর ৯৫ শতাংশেরও বেশি এখনো ভ্যাটজালের বাইরে। কর-জিডিপি অনুপাতে গোটা বিশ্বেই সবার পেছনে বাংলাদেশ। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও পাকিস্তানও থেকেও পিছিয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য বলছে, সারা দেশে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ২১৪। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৩৯ লাখ, শহরে ২৩ লাখ। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) বা ভ্যাট (মূসক) নিবন্ধনধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র পাঁচ লাখ ৭০ হাজার। সে অনুযায়ী, স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর মধ্যে ভ্যাট পরিশোধকারী হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের ৯ শতাংশের কিছু বেশি। স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিট বলতে প্রধানত একটি স্থায়ী জমিতে স্থায়ী কাঠামোর ওপর গঠন করা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে।প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটগুলোর বেশির ভাগ করজালের বাইরে থাকার পেছনে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ জন্য অটোমেশনের মাধ্যমে সংস্থাটির দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন তারা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিআইএন নম্বর একসঙ্গে থাকলে সেখানে রিটার্ন দেখা যাবে। অটোমেশনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর আহরণ করা যাবে। এ জন্য জনশক্তি না বাড়িয়ে দক্ষতা বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এমনিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে করজালের বাইরে থাকার একটা প্রবণতা রয়েছে।ভ্যাট আইন অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়োজিত প্রতিটি ইউনিটেরই ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিশোধের হার নির্ধারণ করে বার্ষিক টার্নওভারের ওপর। যদি কোনো ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকার নিচে হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হবে না। ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।শুধু জুয়েলারি খাতে ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে। তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এনবিআরের জারি করা সম্প্রতি এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ভ্যাট আইনে ভ্যাট নিবন্ধনযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিছু পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার নির্বিশেষে এবং দেশের সব সুপারশপ, শপিং মলসহ সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরের সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধনের বাইরে থাকা সারা দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসবে এনবিআর। সে জন্য ফেব্রুয়ারিকে ভ্যাট কমিশনারদের জন্য নিবন্ধনের মাস এবং মার্চকে এনবিআরের জন্য নিবন্ধনের মাস ঘোষণা করা হয়েছে।এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন না থাকার কারণে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ কিছু সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিআইএন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সেবা নিতে গেলে নিবন্ধন গ্রহণ ও ভ্যাট পরিশোধ করতে বাধ্য হবে।ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনতে না পারাকে এনবিআরের সক্ষমতার অভাব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এনবিআরের ভ্যাট রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পেছনে সংস্থাটির নীতিগত ও কাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী নেতারাও।বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনেক হলেও ভ্যাট নিবন্ধনকারীর সংখ্যা কম। এটি বাড়াতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোরও সহায়তা দরকার। তবে এখানে করপোরেট কর ১২ শতাংশ বলা হলেও আসলে তা আরো অনেক বেশি। এখানে শুভংকরের ফাঁকি আছে।আবার দেশের জিডিপির অতিরঞ্জিত হিসাবকেও কর-জিডিপি অনুপাত কম হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিবিএসের সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ সংস্থাটির চূড়ান্ত হিসাবে তা ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যদিও অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য মতে, বিবিএসের হিসাবে জিডিপির আকার অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিরঞ্জন করে দেখানো হয়েছে।অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর ৯০ শতাংশেরও বেশি ভ্যাটজালের আওতার বাইরে থাকা প্রসঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, বিবিএসের পরিসংখ্যানে যে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের তথ্য উঠে এসেছে, তাদের সবাই ভ্যাটযোগ্য নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেডার ও সেবা প্রদানকারীদের একটা বড় অংশ অনিবন্ধিত। তাদের মার্কেট এবং এলাকাভিত্তিক সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। তারা নানা ধরনের কৌশলে নিবন্ধন নেয় না। নিবন্ধন বাড়াতে ভ্যাট বাস্তবায়ন অনুবিভাগ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিবিএস অস্থায়ী-স্থায়ী যেকোনো দোকানকেই এ হিসাবের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী সেসব দোকান ভ্যাটযোগ্য কি না সেটি আগে আলাদা করতে হবে। এত দিন ৫০ লাখ থেকে তিন কোটি টাকার ওপরে টার্নওভার হলে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হতো। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ৬২ লাখ স্থায়ী ব্যাবসায়িক ইউনিটের মধ্যে কত লাখের তিন কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভার হয়, সেটাও বের করা দরকার।
তামাকপণ্যের করকাঠামোয় সংস্কার করতে হবে: কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোন একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একইসাথে, তামাকখাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারের বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে গত দু’দিনব্যাপী (১২ ও ১৩ মার্চ) অনুষ্ঠিত “তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকবৃন্দ। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ২টি কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত মোট ৫০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরো সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
কর্মশালায় জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট সতেরো লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
কর্মশালাগুলোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকন্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, মো. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোন একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একইসাথে, তামাকখাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারের বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে গত দু’দিনব্যাপী (১২ ও ১৩ মার্চ) অনুষ্ঠিত “তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকবৃন্দ। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ২টি কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত মোট ৫০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরো সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।কর্মশালায় জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট সতেরো লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।কর্মশালাগুলোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকন্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, মো. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক: সরকার রাজস্বের জন্য হাহাকার করছে। যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়, সেটিও আদায় হয় না। ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অথচ চোখের সামনেই লাখ লাখ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে, ভোক্তার কাছ থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট হিসেবে কেটেও রাখছে; কিন্তু সরকারের খাতায় জমা দিচ্ছে না। বলা যায়, দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবেই সারা দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা ইউনিটের পরিমাণ এক কোটি ১৮ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটের সংখ্যা প্রায় ৬৩ লাখ। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র পাঁচ লাখ ৭০ হাজার।দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার বিপরীতে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ শতাংশেরও নিচে। এর মধ্যে রিটার্ন দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার লাখ ৮০ হাজার। ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা এনবিআরের কাঠামোগত দুর্বলতা হিসেবেই মনে করছেন। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করছেন। তবে নিবন্ধন বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা। এর আগে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর ছাড়াও সেলফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে কেনাকাটা, হোটেলে খাওয়া, সিনেমা দেখাসহ দৈনন্দিন লেনদেনে ভোক্তারা ভ্যাট দিচ্ছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর ৯৫ শতাংশেরও বেশি এখনো ভ্যাটজালের বাইরে। কর-জিডিপি অনুপাতে গোটা বিশ্বেই সবার পেছনে বাংলাদেশ। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও পাকিস্তানও থেকেও পিছিয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য বলছে, সারা দেশে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ২১৪। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৩৯ লাখ, শহরে ২৩ লাখ। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) বা ভ্যাট (মূসক) নিবন্ধনধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র পাঁচ লাখ ৭০ হাজার। সে অনুযায়ী, স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর মধ্যে ভ্যাট পরিশোধকারী হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের ৯ শতাংশের কিছু বেশি। স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিট বলতে প্রধানত একটি স্থায়ী জমিতে স্থায়ী কাঠামোর ওপর গঠন করা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে।প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটগুলোর বেশির ভাগ করজালের বাইরে থাকার পেছনে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ জন্য অটোমেশনের মাধ্যমে সংস্থাটির দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন তারা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিআইএন নম্বর একসঙ্গে থাকলে সেখানে রিটার্ন দেখা যাবে। অটোমেশনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর আহরণ করা যাবে। এ জন্য জনশক্তি না বাড়িয়ে দক্ষতা বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এমনিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে করজালের বাইরে থাকার একটা প্রবণতা রয়েছে।ভ্যাট আইন অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়োজিত প্রতিটি ইউনিটেরই ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিশোধের হার নির্ধারণ করে বার্ষিক টার্নওভারের ওপর। যদি কোনো ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকার নিচে হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হবে না। ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।শুধু জুয়েলারি খাতে ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে। তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এনবিআরের জারি করা সম্প্রতি এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ভ্যাট আইনে ভ্যাট নিবন্ধনযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিছু পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার নির্বিশেষে এবং দেশের সব সুপারশপ, শপিং মলসহ সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরের সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধনের বাইরে থাকা সারা দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসবে এনবিআর। সে জন্য ফেব্রুয়ারিকে ভ্যাট কমিশনারদের জন্য নিবন্ধনের মাস এবং মার্চকে এনবিআরের জন্য নিবন্ধনের মাস ঘোষণা করা হয়েছে।এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন না থাকার কারণে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ কিছু সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিআইএন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সেবা নিতে গেলে নিবন্ধন গ্রহণ ও ভ্যাট পরিশোধ করতে বাধ্য হবে।ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনতে না পারাকে এনবিআরের সক্ষমতার অভাব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এনবিআরের ভ্যাট রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পেছনে সংস্থাটির নীতিগত ও কাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী নেতারাও।বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনেক হলেও ভ্যাট নিবন্ধনকারীর সংখ্যা কম। এটি বাড়াতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোরও সহায়তা দরকার। তবে এখানে করপোরেট কর ১২ শতাংশ বলা হলেও আসলে তা আরো অনেক বেশি। এখানে শুভংকরের ফাঁকি আছে।আবার দেশের জিডিপির অতিরঞ্জিত হিসাবকেও কর-জিডিপি অনুপাত কম হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিবিএসের সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ সংস্থাটির চূড়ান্ত হিসাবে তা ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যদিও অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য মতে, বিবিএসের হিসাবে জিডিপির আকার অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিরঞ্জন করে দেখানো হয়েছে।অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর ৯০ শতাংশেরও বেশি ভ্যাটজালের আওতার বাইরে থাকা প্রসঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, বিবিএসের পরিসংখ্যানে যে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের তথ্য উঠে এসেছে, তাদের সবাই ভ্যাটযোগ্য নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেডার ও সেবা প্রদানকারীদের একটা বড় অংশ অনিবন্ধিত। তাদের মার্কেট এবং এলাকাভিত্তিক সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। তারা নানা ধরনের কৌশলে নিবন্ধন নেয় না। নিবন্ধন বাড়াতে ভ্যাট বাস্তবায়ন অনুবিভাগ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিবিএস অস্থায়ী-স্থায়ী যেকোনো দোকানকেই এ হিসাবের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী সেসব দোকান ভ্যাটযোগ্য কি না সেটি আগে আলাদা করতে হবে। এত দিন ৫০ লাখ থেকে তিন কোটি টাকার ওপরে টার্নওভার হলে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হতো। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ৬২ লাখ স্থায়ী ব্যাবসায়িক ইউনিটের মধ্যে কত লাখের তিন কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভার হয়, সেটাও বের করা দরকার।
মন্তব্য করুন