বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার বর্বর হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কোসহ বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। গাজায় দখলদার ইসরাইলের অব্যাহত গণহত্যা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।গাজাবাসীর ডাকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বিভিন্ন বাম সংগঠন।এ ছাড়া ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। এসব কর্মসূচি থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, গাজায় গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে মুসলিমবিশ্ব, ওয়াইসি ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। একারণে মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করেছে দেশটি। দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলাকাটিতে পুলিশের পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে নেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, এসবি, সিআইডি, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়াও নিরাপত্তা জোরদার করা হয় গুলশান এলাকায় থাকা অন্যান্য দূতাবাসগুলোতেও।এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল থেকে বাটা জুতা, কেএফসি, পিৎজা হাট, পেপসি ও সেভেন আপের মতো কিছু পণ্যের আউটলেটে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নামে লাখো মানুষ। তারা গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন।এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ নামক আন্তর্জাতিক কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই কর্মসূচি পালনে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের আহ্বান, পুরো মুসলিম উম্মাহ যেন দেশে দেশে বিক্ষোভ মিছিল করে সংহতি জানায় এবং কূটনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। তাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।টানা ৫০৭ দিন ধরে ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এই হামলা চালাচ্ছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে সহিংসতা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি তার এই সহিংসতা কল্পনাতীত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাদের হামলা থেকে স্কুল, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, সাংবাদিক কিছুই বাদ যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে গাজাকে নিষিদ্ধ বোমা ব্যবহার করে বসবাসের অনুপোযোগী করে ফেলছে।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৬৯ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে রোববার। গাজায় গণহত্যা বন্ধ না করা পর্যন্ত ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ নামে বিশ্বজুড়ে শিক্ষাঙ্গনে ‘ধর্মঘটের’ কর্মসূচি ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠন ও মাঠপর্যায়ের কর্মীরা।বাংলাদেশের নিন্দা : গাজায় দখলদার ইসরায়েলির অব্যাহত গণহত্যা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এর ফলে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে, যা মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্পষ্টত ইসরায়েলি বারবার আন্তর্জাতিক আবেদনের তোয়াক্কা করেনি বরং ক্রমবর্ধমান তীব্র হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযানে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ইসরায়েলিকে অবিলম্বে সমস্ত সামরিক অভিযান বন্ধ করে সর্বাধিক সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে দায়িত্ব পালনের জোর দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করছে যে, তারা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন এবং বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা ও অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব পালন করুক।বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণের সকল ন্যায্য অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুসারে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।উপদেষ্টার পোস্ট : শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার পর দেওয়া ওই পোস্টে আসিফ লিখেছেন, ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ ‘সলিডারিটি। নট গোয়িং টু জয়েন ওয়ার্ক টুডে।’ঢাকাসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ : অবরুদ্ধ ভূ-খণ্ড গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ও পরীক্ষা বর্জন, অফিস আদালত বন্ধ রাখার জন্য আহ্বান জানায় ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানান।গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অফিস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ঢাবি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ও সড়কে অবস্থান নেন।বিশেষ করে ঢাবির রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, সায়েন্সল্যাবরেটরি, গুলশান, বাড্ডা, মিরপুর-১২, উত্তরা, বারিধারাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন দূতাবাসের সামনেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাড্ডায় পথে নামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে ছিল ‘শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড’ লেখা প্ল্যাকার্ড।বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থীরা মিরপুরে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড্ডায়, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটে এবং ঢামেকসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার ও টিএসসি চত্বরে বিক্ষোভ করেন। বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। তাদের দাবি, ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া উচিত এবং বিশ্ব নেতাদের উচিত এই বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও ভাটারায়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। অনেকের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা।কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রোববার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। ঢাবি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এই কর্মসূচির প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানান। ঢাবিতে জাতীয়তাবাদী সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলও কর্মসূচি পালন করেছে। বিক্ষোভ ঘিরে গুলশান ও বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ডাকে সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান এবং দুপুর ১২টায় রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনি জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ভারতের ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।গতকাল বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান জানিয়েছেন, মার্চ ফর প্যালেস্টাইনের আহ্বানে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিকাল ৪টায় সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।গণ অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান জানিয়েছেন, সংহতি জানিয়ে গত রোববার রাতেই রাজধানীর বিজয় নগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণ অধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলা গ্লোবাল স্ট্রাইক ‘নো ওয়ার্ক, নো ক্লাস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।গতকাল সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে পৃথকভকবে এসব বিক্ষোভ সমাবেশ করে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, ইসলামী যুব মজলিস, গণশক্তি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফতে যুব মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-শিক্ষকরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ফিলিস্তিনে শান্তি মিশনে পাঠানোর দাবি জানান।এছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফতে যুব মজলিস এবং ইসলামী যুব মজলিসের নেতারা সারা বিশ্বের মুসলমানদের একত্রিত হয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। গণশক্তি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইসরায়েলের সব পণ্য বয়কট করব। আমরা ইসরায়েলকে একঘরে করে রাখব। আমরা ইসরায়েলের কোনো পণ্য ব্যবহার করব না। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ঢাকা স্টেট কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে মিছিল মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নূরজাহান রোড ঘুরে কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়।দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-ভাঙচুর : হামাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কোথাও কোথাও মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি, বাটা, পিৎজাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আউটলেটে হামলা চালায়। রাজধানী বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিরাট মিছিল বের করেন সাধারণ মুসল্লিরা। মিছিলটি পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়েছে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী।গতকাল সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর গুলশান, সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করেন। এছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের উল্টোপাশে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।মজলুম গাজাবাসীদের প্রতি সংহতি জানাতে আহুত হরতালের সমর্থনে আশুলিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল মুসল্লিসহ তৌহিদী জনতা। এতে হাজারো সাধারণ মানুষ অংশ নেন। গতকাল দুপুরে খেলাফত মজলিস শিমুলিয়া ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে আশুলিয়ার জিরানী বাজার বিকেএসপির সামনে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।কক্সবাজার : কক্সবাজার শহর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল জোন সড়কের কাছে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি ও পিৎজা হাটের আউটলেটে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ জনতা ‘এগুলো ইসরায়েলের দোসর’ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় সেভেন আপের সাইনবোর্ড দেখেও ভাঙচুর চালানো হয়।সিলেট : সিলেট নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসিতে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে সেখানে দুই দফা হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় কেএফসিতে থাকা কোমল পানীয় দুতলা থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়। পরে সেগুলো ফাটানো হয়। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’বগুড়া : বগুড়ায় ইসরায়েলি পণ্য বাটা শোরুমসহ দেশটির কোমল পানীয় রাখা দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের সাতমাথা এলাকায় ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।বরিশালে ভাঙচুর : বরিশালে বিক্ষুব্ধরা ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেওয়া কেএফসির বরিশাল ব্রাঞ্চে ভাঙচুর চালান। ছাত্র-জনতা কেএফসির কার্যক্রম বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়। সোমবার সকাল ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনের সড়কে ছাত্র-জনতার ব্যানারে কর্মসূচি শুরু হয়। সড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে কেএফসির সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা অবস্থান নেয়। জনতা কেএফসি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানায়।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা কেএফসির সামনের সড়কে জোহরের নামাজ আদায় করেন। একইসঙ্গে মোনাজাতে গাজাবাসীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রতিষ্ঠানটির ছাদে উঠে কেএফসির লোগো ভেঙে ফেলেন। পাশাপাশি ব্যানার নিয়ে যান। এছাড়া দেয়ালে বয়কট কেএফসি লিখে দেন তারা। তারা রেস্টুরেন্টটির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে বরিশালে কেএফসির একমাত্র শাখাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।ফরিদপুর : গতকাল বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে জেলার ছাত্র সমাজের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে জনতা ব্যংক মোড়ে পৌঁছে অবস্থান নেয়। এ সময় জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সোহেল রানা, শাহ মো. আরাফাত, আনিসুর রহমান সজল, মেহেদি হাসান, নীরব ইমতিয়াজ শান্ত, খেলাফত মজলিসের সভাপতি মওলানা আমজাদ হোসেন, হেফাজত ইসলামের সভাপতি মাওলানা কবির হোসেন, ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য রাখেন ফারহান সাদিক নূর, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী দিল আফরোজ শ্রাবণী।লালমনিরহাট : লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টায় উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের ডাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলা শহরের বিভিন্ন শহর প্রদক্ষীণ করে তুষভাণ্ডার সুপার মার্কেটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে করে কর্মসূচি শেষ হয়।পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) : সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উত্তর জনপদের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর শহরে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা ও ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাটগ্রাম পৌর জামায়াতের আমির সোহেল রানা, থানা মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আলেমগণ।ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১১টায় উপজেলার মডেল মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়ে পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে রেলস্টেশনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ছাত্রপ্রতিনিধি আসিফ নেওয়াজ, মো. রুবায়েত ও মাওলানা মো. সাইদুল হক প্রমুখ।রাঙ্গামাটি : আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশ, রাঙ্গামাটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ছাত্র জনতার কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি আলহাজ মাওলানা এম এ মুস্তফা হেজাজী। তৈয়বিয়া পাহাড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম নঈমী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল আহাদ, রাঙ্গামাটি সিএনজি অটোরিকশাচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু।পাথরঘাটা (বরগুনা) : বরগুনার পাথরঘাটায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টার সময় পাথরঘাটা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পাথরঘাটা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোল চত্বরে এসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পাথরঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা মাসুদুল আলম, পৌর আমির মাওলানা বজলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের পাথরঘাটা উপজেলা সভাপতি এম এস সোহাগ বাদশাহ, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন এসমে শিকদার, সমাজকর্মী মেহেদী সিকদার প্রমুখ।সিংড়া (নাটোর) : নাটোরের সিংড়ায় বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে সিংড়া কোর্ট মাঠ এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সমাবেশ হয়। সমাবেশে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন এর আহ্বান ও ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়। বক্তব্য রাখেন মুফতি মাসুম বিল্লাহ, সিংড়া আসনে জামায়াত মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রফেসর সাইদুর রহমান, জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য আফসার আলী, মাওলানা হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন উপজেলার সেক্রেটারি শাহ ওয়ালী উল্লাহ, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি মাওলানা রুহুল আমিন, ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ।চাটমোহর (পাবনা) : পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করছে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ১২টায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) : মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।বেনাপোল (যশোর) : যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলে ও নাভারণ সাতক্ষীরা মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল দুপুরে।বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ওই সমাবেশে তিনশোর বেশি সংগঠন সমর্থন জানায়। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভেনিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানায়।প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের সহপৃষ্ঠপোষকতা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।মরক্কো : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার বিরুদ্ধে মরক্কোয় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গত রোববার হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে এই বিক্ষোভ দেখান। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।বিগত কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হয় রোববার। এদিন দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন। তারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন। এ ছাড়া তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।ফিলিস্তিন : গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামী শক্তিগুলো গত রোববার এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধর্মঘট যেন একটি বৈশ্বিক প্রতিবাদে পরিণত হয়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অপরাধ, বেসামরিক মানুষ হত্যাসহ চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে বাস্তুচ্যুত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আনতে হবে।ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।কর্মসূচির উৎস : ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ শীর্ষক এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে পালন করা হচ্ছে সাধারণ ধর্মঘট। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই কর্মসূচির মূল উৎস কি তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। উল্লেখ করার বিষয় হলো, গত ৫ এপ্রিল প্রথম এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ‘ট্রান্সলেটিং ফালাস্তিন’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে। এই অ্যাকাউন্ট থেকে সাধারণত গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কনটেন্ট পোস্ট করা হয়।গত শনিবার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়, যেটিতে ফিলিস্তিনের পতাকাসহ লেখা ‘দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা। নো ওয়ার্ক। নো স্কুল। আনটিল দ্য জেনোসাইড স্টপস।’ একই অ্যাকাউন্টে ৭ এপ্রিল সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয় ইংরেজি ও আরবি ভাষায়। পৌনে চার লাখ ফলোয়ারের এই ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে দ্রুতই সেটি ছড়িয়ে পড়ে।ধর্মঘটের ওই আহ্বানে সংহতি জানিয়ে পোস্টের কমেন্টে অনেকেই জানান, তারা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবেন এবং কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন। এই আহ্বান ছাড়া এই কর্মসূচির ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়নি। গাজার জন্য ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি অবশ্য একেবারেই নতুন নয়। প্যালেস্টাইন ক্রনিকলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর ওই বছরই ১১ ডিসেম্বর এমন একটি ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী এই ধর্মঘটের মূলমন্ত্র ছিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল, নো শপিং।’ শুধু ক্লাস বা অফিস বর্জন নয়, সেদিন কোনোরকম কেনাকাটাও করতে নিরুৎসাহিত করা হয়।ভোরের আকাশ/এসএইচ