পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০১:২৫ এএম
ছবি সংগ্রহীত
বঙ্গোপসাগরে অবৈধ কাঠের তৈরি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলিং ট্রলার বন্ধের দাবিতে বরগুনার পাথরঘাটায় কয়েক হাজার জেলে মানববন্ধন করেছেন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে পাথরঘাটা গোলচত্বরে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে উপজেলার বিভিন্ন ঘাট, আড়ত ও ট্রলার মালিক–শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “আমরা সাধারণ জেলেরা সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে ইলিশ রক্ষায় সহযোগিতা করেছি। অথচ কিছু প্রভাবশালী ট্রলিং ট্রলার মালিক প্রশাসনের নীরবতায় সাগরে অবৈধভাবে মাছ ধরছে, ইলিশের পোনা ধ্বংস করছে। এটা শুধু জেলেদের ক্ষতি নয়, জাতীয় সম্পদের ওপরও বড় হুমকি।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, “যদি দ্রুত এসব অবৈধ ট্রলিং ট্রলার বন্ধ না করা হয়, তাহলে সাধারণ জেলেরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।”
মানববন্ধনে বক্তৃতা দেন উপজেলা চরদুয়ানি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম, বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন, উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি মারুফ চৌধুরী, ট্রলার শ্রমিক কবির হোসেন সাগর, ও নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাগরে কাঠের তৈরি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলিং ট্রলারের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব ট্রলার নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে ছোট পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নির্বিচারে শিকার করছে, যার ফলে সামুদ্রিক সম্পদ ধ্বংসের মুখে।
কামরুল ইসলাম বলেন, “এই ট্রলারগুলো সাগর ও নদীর প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করছে। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”
জেলেরা অভিযোগ করেন, সরকারি আইন অনুযায়ী উপকূল থেকে ৪০ মিটার গভীরতার মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলিং ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন অমান্য করে এসব ট্রলার প্রতিনিয়ত উপকূলের কাছাকাছি এসে মাছ ধরছে এবং ছোট জেলেদের জাল কেটে নিচ্ছে। অনেক সময় প্রতিবাদ করলে স্থানীয় জেলেরা হামলা ও অপমানের শিকার হন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
জেলেরা সতর্ক করে বলেন, “অতি দ্রুত সাগরে অবৈধ ট্রলিং বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে এর দায় প্রশাসনেরই থাকবে।”
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, সরকারের নীতিমালায় জেলেদের স্বার্থ রক্ষার নানা উদ্যোগ থাকলেও মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। উপকূলে অবৈধ ট্রলার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সমুদ্রে মাছের উৎপাদন কমে যাবে, রাষ্ট্র রাজস্ব হারাবে, আর হাজারো জেলে পরিবার খাদ্য ও জীবিকার সংকটে পড়বে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন— বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতি, বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতি, বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন, বিএফডিসি মৎস্য পাইকার সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি।
বক্তারা অবিলম্বে বঙ্গোপসাগরে অবৈধ ট্রলিং ট্রলার বন্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা, লাইসেন্সবিহীন ট্রলারের নিবন্ধন বাতিল ও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
ভোরের আকাশ//হর