মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০১:১০ পিএম
লাকসামে নিবন্ধনহীন পরিবহনের দৌরাত্ম্য
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সর্বত্র এবং ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী লাকসাম, বরুড়া ও নাঙ্গলকোট পৌরশহরের অধিকাংশ সড়ক নিবন্ধনহীন নানা পরিবহনের দখলে। ফলে পথচারীদের চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। সড়কগুলোতে যানজটের অন্যতম কারণ নির্ধারিত স্ট্যান্ড না থাকা এবং যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা এসব পরিবহনের দৌরাত্ম্য। এতে স্থানীয় প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া সব সড়কে চলছে নীরব চাঁদাবাজি।এবার রমজান ও ঈদে সবকটি পরিবহনে ভাড়া নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত হারে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় নানা পরিবহন ব্যবস্থাই সড়কপথে চলাচলে মারাত্মক অন্তরায় সৃষ্টি করছে। এই উপজেলার শহরগুলোর উপর দিয়েই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের সাথে সংযোগকারী আন্তঃজেলা সড়ক ও শাখা সড়কগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে সাধারণ যাত্রীরা পড়ছে চরম দুর্ভোগে। উপজেলার সড়কপথগুলো ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ, পকেটমার, মাদকসেবী, বখাটে ও মাস্তানদের নিয়ন্ত্রণে। লক্কর-ঝক্কর, অনুমোদনহীন যানবাহন চলছে নির্বিঘ্নে। নেই নির্ধারিত টার্মিনাল বা যাত্রী ছাউনি। অভিজ্ঞ চালক-হেলপার সংকট, রুট পারমিটবিহীন গাড়ি—সব মিলিয়ে ভয়াবহ চিত্র।
সূত্র আরও জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান ও পার্শ্ববর্তী সড়কগুলো যেমন: ঢাকা-চাঁদপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-নোয়াখালী সড়ক এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে, তাই এ অঞ্চলের গুরুত্বও অনেক। বিশেষত লাকসাম-চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম-চাঁদপুর, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ, লাকসাম-কুমিল্লা, লাকসাম-নাঙ্গলকোট এবং লাকসাম-কাশিনগর সড়কগুলোর সমস্যা প্রকট। এছাড়াও হাটবাজার সংলগ্ন সড়কগুলোতেও সমস্যা বিদ্যমান। এসব সড়কে লক্কর-ঝক্কর, পরিবেশদূষণকারী, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দাপট, যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, মালামাল পরিবহনে শ্রমিক-লেবারদের দৌরাত্ম্য, এবং মাস্তানদের দখলদারিত্ব বাড়ছে।
স্থানীয় আইন ও পরিবেশবিদদের সূত্র অনুযায়ী, হাইকোর্টের পিটিশন নং ৯১৬/২০১৯ অনুযায়ী কালো ধোঁয়া নিঃসরণকারী যান আটক করার নির্দেশনা থাকলেও, জেলা বিআরটিএ ও স্থানীয় প্রশাসন তা কার্যকর করছে না।
নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব যান চলাচল করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চালক বা মালিককে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’র ৮৯ ধারায় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। ফলে জনমনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, অনেক পুরনো, জরাজীর্ণ পরিবহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে এবং কিছু পরিবহন প্রায় ৩০/৩৫ বছর ধরে চলাচল করছে। এতে করে পরিবেশ ও জনজীবন হুমকির মুখে। সরকারি বিধিমতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন আর কতদিন চলবে, তা নিয়েও স্পষ্টতা নেই। ‘রাস্তার রাজারা’ সরকারি নিয়মনীতি মানছে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফলে শহর-গ্রামের যোগাযোগ সহজ হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য দ্রুত শহরে পৌঁছাচ্ছে এবং কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে মানহীন পরিবহন ব্যবস্থা বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ