সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫ ০১:৫১ এএম
ছবি-ভোরের আকাশ
বাসা ভাড়া দিতে তিনদিন বিলম্ব হওয়ায় ভাড়াটিয়াদেরকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে রাখেন বাসার মালিক। পরে আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় ভুক্তভোগী পরিবার। প্রায় চার ঘন্টা পর পুলিশের সহায়তায় তালা খুলে দেয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের রায়পাড়া এলাকায়। পরে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বাসার মালিক ইউসূফ চৌধুরী ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ৩ মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করে দেন।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, এ বিষয়ে তাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। নির্ধারিত সময়ে ভাড়া দিতে না পারলে ভাড়াটিয়াদেরকে আরও সময় দেয়া উচিৎ ছিলো। এভাবে বাইরে থেকে দরজায় তালা দেয়া অমানবিক ও অনৈতিক বলে মন্তব্য করেন প্রতিবেশীরা।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর ধরে ইউসূফ চৌধুরীর বাসায় ভাড়া থাকেন ইমন বর্মনের পরিবার। চার সদস্যের পরিবারের গৃহকর্তা রামপ্রসাদ বর্মন আড়াই বছর আগে মারা যান। পরে সংসারের হাল ধরেন তাঁর ছেলে ইমন। শহরে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই বাসা ভাড়াসহ সংসারের খরচ চালায় সে।
প্রতিমাসে বাসা ভাড়া দিতে হয় ছয় হাজার ছয়শ’ টাকা। চার বছর ধরেই ঠিক সময়ে বাসা ভাড়া দিয়ে আসছিলো সে। চলতি মাসের পাঁচ তারিখে বাসা ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও টাকা না থাকায় দিতে পারেননি ইমন।
ইমনের পরিবারের অভিযোগ, ছয় জুলাই থেকেই বাসার গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দেন বাসার মালিক ইউসূফ চৌধুরী। আট তারিখ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় তারা দেখতে পান দরজায় বাইরে থেকে তালা দেয়া। আত্মীয়-স্বজনকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানালে পুলিশের সহায়তায় দুপুর দুইটার পড়ে তালা খুলে দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী ইমন বর্মন বলেন, বাবা মারা যাওয়ায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝাল মুড়ি বিক্রি করে সংসার চলে। প্রতিমাসে ছয় হাজার ছয়শ’ টাকা বাসা ভাড়া দেই। ভাড়া দিতে একটু লেট হলেই খারাপ আচরণ করেন বাসার মালিক। তিন দিন আগে গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিয়েছেন। এই তিনদিন ঘরে রান্নাবান্না করতে না পেরে অনেক কষ্টে ছিলাম। খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করেছি। মঙ্গলবার সকালে এসে ঘরের বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনকে জানালে তারা থানায় বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ এসে চাবি উদ্ধার করে দরজার তালা খুলে দিয়েছে।
ইমনের মা জবা রানী বর্মণ বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের একটি অনুষ্ঠান গেছে। এজন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভাড়া দিতে না পারায় আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন বাসার মালিক। কয়েকদিন আগে গ্যাসের চুলা বন্ধ করেছেন। মানুষ ঘরের ভেতর রেখে আজকে এসে দরজায় তালা দিয়ে গেছেন।
সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই জুলহাস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে চাবি উদ্ধার করে দরজার তালা খুলে দেয়া হয়েছে।
ঘটনার পর বিকাল ৪ টায় ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে দেখা করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাসার মালিক। এসময় তিনি জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে তারা অন্য কোথাও নতুন বাসায় উঠবে। এমন প্রস্তাবে সম্মতি জানায় ভুক্তভোগী ইমন বর্মনের পরিবার।
ভোরের আকাশ/আজাসা