জাহিদুল কবির, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫ ০২:০৮ পিএম
মধুপুরে বেড়েছে ভুট্টার আবাদ
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ উপজেলায় অধিকাংশ কৃষক ধান চাষের পাশাপাশি স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মধুপুর উপজেলায় ৩৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে, যা বিগত মৌসুমের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। প্রতিটি ভুট্টা গাছে একাধিক মোচা ধরায় ফলন হয়েছে অনেক বেশি। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ মণ। মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বাজারে এখন ভুট্টার দামও ভালো পাচ্ছেন তারা।
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় মধুপুর উপজেলায় ভুট্টা চাষ দিন দিন বেড়ে চলেছে। ধান ও অন্যান্য ফসল চাষে লাভ কম হওয়ায় বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উচ্চ ফলনশীল জাত, অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টা চাষ করে ঘুরে গেছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। ১ বিঘা জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ভুট্টা পাওয়া যায় ৩০ মণ, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪০ হাজার টাকা। দেশীয় জাতের ভুট্টায় তেমন লাভ না হওয়ায় মধুপুরের কৃষকেরা হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করছেন।
স্থানীয় চাষিরা জানান, মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক জমি বছরের পর বছর পতিত থাকে। এসব পতিত জমিতে তেমন কোনো ফসল চাষ করা যায় না। তবে ওইসব জমিতে ভুট্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় চলতি মৌসুমে কৃষকেরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে। উপজেলার গোলাবাড়ি, পিরোজপুর, মির্জবাড়ি, আলোকদিয়া, গায়োবাজার, মহিষমারা, শোলাকুড়ী, কুড়ালিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, জমির উর্বর মাটিতে বীজ বপনের পর থেকেই গাছ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। প্রতিটি গাছে দুই থেকে তিনটি করে ভুট্টার মোচা ধরেছে। চাষিরা গড়ে প্রতি শতক জমিতে ৩০ কেজি (১ মণ) ফসল ফলাচ্ছে।
আকাশী গ্রামের কৃষক মো. আক্তার হোসেন জানান, তিনি এবার প্রায় এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশানুরূপ দাম পাওয়ার পাশাপাশি ভুট্টা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না কৃষকদের। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতা এবং বিভিন্ন কোম্পানি সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে ভুট্টা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে কাঁচা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ১২শ থেকে ১৩শ টাকা দরে।
মধুপুর উপজেলার ভান্ডারগাতি গ্রামের কৃষক মো. রাছেল বলেন, ইরি-বোরো আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে অনেক বেশি লাভ হয়। তাই কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অলিপুর গ্রামের মোস্তফা বলেন, আমি এবছর সাত বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আল রানা জানান, মধুপুর উপজেলায় গত বছর ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল, এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৫ হেক্টর বেশি। এই উপজেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের সব সময় সহযোগিতা ও সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের মাঝে সার, বীজসহ কৃষি প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও বাম্পার ফলন হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ