× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারী-শিশু নির্যাতন দেড় লাখ মামলার ভার ১০১ ট্রাইব্যুনালে

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫ ০৫:১৫ এএম

নারী-শিশু নির্যাতন দেড় লাখ মামলার ভার  ১০১ ট্রাইব্যুনালে

নারী-শিশু নির্যাতন দেড় লাখ মামলার ভার ১০১ ট্রাইব্যুনালে

মাগুরার শিশুটির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচারকদের সংগঠন। শুধু শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আর পৃথক শিশু আদালত গঠনের কথা বলছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্যদিকে বিচারকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ দ্রুত বিচারের স্বার্থে আরও ২০০ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি পৃথক শিশু আদালত ও মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও কথা বলেছে।
সূত্র মতে, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, মামলার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল না থাকা। আবার বিদ্যমান ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলার পাশাপাশি ‘শিশু আদালত’ ও ‘মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’-এর বিচারক হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সারা দেশে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭ হাজার মামলার বিপরীতে মাত্র ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে প্রায় দেড় হাজার মামলা বিচারাধীন। 
নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধের দ্রুত বিচারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আশার আলো দেখছেন আইনজীবীরা। এটির বাস্তবায়ন না করলে বিচার বিলম্বে অপরাধের মাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে শিশু আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করানো হয় এবং পরে ৭ মার্চ রাতে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। এরপর ৮ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে ১৩ মার্চ দুপুরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুটি। এ ঘটনার ৮ মার্চ শিশুর মা বাদী হয়ে সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এ মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজিব শেখের এক ভাই (১৭) ও তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুর পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে আইন মন্ত্রণালয়। ১৩ মার্চ সেই সংবাদ সম্মেলনে ৭ দিনের মধ্যে শিশুটির ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, নতুন আইনের প্রাথমিক ড্রাফট হয়েছে। আপনারা জানেন, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কনসালটেশন করতে হয়। আমরা আশা করছি, আগামী রোববার, খুব দেরি হলে সোমবার আমরা নতুন আইন প্রণয়ন করে ফেলব। তিনি বলেন, নতুন আইনে শুধু একটা বিষয় অ্যাড করতে চাই। শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছি। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান নতুন আইনে থাকবে। এ ট্রাইব্যুনালের কাজ হবে শুধু শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনা দ্রুত বিচার করা। যেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া যায়।
ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে ১৪ মার্চ একটি বিবৃতি দিয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম এ বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়ন দমন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিতে সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ প্রণয়নপূর্বক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আইনটি করা হয়েছিলো তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশকিছু ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। দেশের সচেতন ছাত্র-জনতা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। এমন গর্হিত অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে অপরাধ প্রমাণ করার ক্ষেত্রে যেসব স্টেকহোল্ডার আছে তারা অনেক ক্ষেত্রেই সমন্বিত উপায়ে কাজ করতে পারছেন না। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মামলার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল না থাকা। আবার বিদ্যমান ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলার পাশাপাশি ‘শিশু আদালত’ ও ‘মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’-এর বিচারক হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সারা দেশে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭ হাজার মামলার বিপরীতে মাত্র ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে প্রায় ১,৫০০টি মামলা বিচারাধীন। উপরন্তু ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্ত সংখ্যক সহায়ক কর্মচারীর পদ সৃজন করা হয়নি। এসব কারণে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলো তাদের প্রত্যাশিত কার্য সম্পাদন করতে পারছেন না।
নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সংঘটিত অপরাধগুলোর দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির স্বার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা জরুরি। এমতবস্থায় বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিদ্যমান মামলা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দ্রুত বিচারের স্বার্থে অবিলম্বে কমপক্ষে আরও ২০০ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ওপর অপির্ত শিশু আদালত ও মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত দায়িত্ব পরিবর্তনপূর্বক পৃথক শিশু আদালত ও মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও আহবান জানানো হয়।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক (আইন) অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ বলেন, শুধু দুইশ নয়, আরও বেশি বাড়ানো উচিত। বলা হচ্ছে, একটা মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করতে হবে। তাহলে সেখানে একটানা ট্রায়াল করতে হবে। সে জন্য প্রত্যেকটা কোর্টের কজলিস্টে কম সংখ্যক মামলা থাকতে হবে এবং একটানা বিচারটা যেন শেষ হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোর্ট বেশি না থাকে সেক্ষেত্রে একটা মামলার একটা তারিখের পরে যে আরেকটা তারিখ দেওয়া হয় সেখানে লম্বা সময় দিতে হয়। যার ফলে মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বেড়ে যায়। সুতরাং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর আহবানের সঙ্গে একমত পোষণ করছি। এটা বাড়ালে ৯০ দিন নয়, আরও আগে বিচার করা যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে। এটার সঙ্গেন একমত পোষণ করছি। তবে সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর হতে হবে। একইসঙ্গে বাদী যদি সাক্ষী দিতে না আসে সে সব মামলা ঝুলিয়ে না রেখে নিষ্পত্তি করে দিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষী দেওয়ার ছুটি ও যাতায়াত ভাতা বাড়াতে হবে। এরপরও যদি সাক্ষী দিতে বিলম্ব করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে। তিনি বলেন, এসব মামলায় ট্রাইব্যুনালের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে অনেকে আবেদন করেন। সেইসব আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। 
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন মামলার চাপ কমাতে সব জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা চান সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইন সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে। শিশু আইন অনুযায়ী স্বতন্ত্র এ আদালত প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের অভিপ্রায় জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের স্বাক্ষরিত চিঠি ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি
 

  • শেয়ার করুন-
 পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে ৩০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি সেনারা

পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে ৩০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি সেনারা

 ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর ইউক্রেনে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর ইউক্রেনে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা

 দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় তানজিদ হাসানের

দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় তানজিদ হাসানের

 বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে এসেছে একাধিক চমক

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে এসেছে একাধিক চমক

 তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মানতে পারেননি মিথিলা

তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মানতে পারেননি মিথিলা

সংশ্লিষ্ট

ইতালির নাগরিক তাবেলা হত্যা : ৩ জনের যাবজ্জীবন, ৪ জন খালাস

ইতালির নাগরিক তাবেলা হত্যা : ৩ জনের যাবজ্জীবন, ৪ জন খালাস

ছয় মরদেহ পোড়ানোর মামলা: ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল

ছয় মরদেহ পোড়ানোর মামলা: ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল

শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু

হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু