রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় হাইকোর্টের রায়
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫ ১০:০৫ পিএম
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমলো
বহুল আলোচিত রাজধানীর রমনার বটমূলে ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এই সাত আসামির সাজা কমিয়ে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ছয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে একজনের দণ্ড বহাল এবং তিন জনের সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৯ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিলেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও কারাবন্দি আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হলো। নিম্ন আদালত ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও একজনের ফাঁসি আগেই কার্যকর হওয়ায় সাতজনের বিষয়ে রায় দিয়েছেন। আর নিম্ন আদালত ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও বিচারকালে দুইজন মৃত্যুবরণ করায় ৪ জনের বিষয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত ৮ মে এই মামলায় রায় ঘোষণা শুরু করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওইদিন রায় ঘোষণা অসমাপ্ত থাকায় বাকি রায় ঘোষণার জন্য ১৩ মে পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।
মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে মূল রায় দেওয়া হয়। আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, সরওয়ার আহমেদ ও যায়েদ বিন আমজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান।
হাইকোর্ট সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা মো. তাজউদ্দিনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা আকবর হোসেন, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমানের সাজা কমিয়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি সিলেটের একটি মামলায় (ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলা) ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হওয়ায় এই মামলায় হাইকোর্টে তার আর বিচার হয়নি।
আর নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে শাহাদাত উল্লাহ জুয়েলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আর মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা আবু তাহেরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কমিয়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতে মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা ইয়াহিয়া কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় হাইকোর্টে তাদের বিচার হয়নি।
চব্বিশ বছর আগে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একইবছরের ১৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। মামলায় বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইবছরের ২৬ জুন ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য ঢাকার আদালত থেকে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। কারাবন্দি আসামিরাও আপিল করেন। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এরপর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। মামলাটিতে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
এ আদালতে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে থাকলে আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটির শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে মামলাটি হাইকোর্টের আরো কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় থাকলেও আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন, বেঞ্চের বিচারক পরিবর্তন হওয়ায় এবং করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের প্রেক্ষাপটে আর শুনানি হয়নি। শেষ পর্যন্ত গত বছর ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। আর ১৮ ফেব্রুয়ারি শুনানি সম্পন্ন হয়।
এদিন হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর ৩০ এপ্রিল বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ৮ মে দিন নির্ধারণ করেন। সে অনুসারে নির্ধারিত দিনে ৮ মে রায় ঘোষণা শুরু হয়।
ভোরের আকাশ/ আমর