× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধরাছোঁয়ার বাইরে জাপা নেতারা

এম. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৯ এএম

ধরাছোঁয়ার বাইরে জাপা নেতারা

ধরাছোঁয়ার বাইরে জাপা নেতারা

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার অংশীদার জাপা নেতাদের বিরুদ্ধে এখনো কার্যত বর্তমান সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ক্ষোভ রয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের মাঝে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পরও জাপা এখনো মূলত আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে বলে অভিযোগ এসব দলের নেতাদের।

তারা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত মিলেমিশে দেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম সহযোগী প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাপা। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক মাঠে কোনো কার্যক্রম নেই জাপার। আর দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই লেবাস পাল্টানোর চেষ্টায় রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাপার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) কাদের দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন, যারা তার বিচার চান তারা কোনো অপরাধের ভিত্তিতে বিচার চাইছেন সেটি জানা দরকার। বিচারের মুখোমুখি হতে রাজি আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। এখনো করছি, আগামীতেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪ কোন পরিস্থিতিতে জাপা ভোটে গিয়েছিল তা অনেকবার পরিষ্কার করেছি। গত সংসদ নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া থেকে ফিরে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি মিডিয়ার সামনে প্রকাশ না করা ভুল কিছু ছিল না। এ ধরনের বৈঠকের খবর আসলে কেউ পাবলিকলি বলে না।

দলের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, দলের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে।  হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড় রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি জন্ম থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা ছিল। জাপা নেতারা সব আমলেই যেন ক্ষমতার সুবিধাভোগী। সবশেষ আওয়ামী লীগের চার মেয়াদের ক্ষমতার শেষদিন পর্যন্ত জাপার নেতারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ নিয়েই ছিলেন।

তবে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বেশ বেকায়দায় জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা। বিগত চার বাবের সংসদে যারা মন্ত্রী-এমপি ছিলেন তাদের অনেকে এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকে প্রকাশ্যে থাকলেও যেন ‘সুশীল’ সমাজের ভূমিকা পালন করছেন। আর রাজনৈতিক মাঠে খোঁজ নেই দলটির নেতাকর্মীদের। এদিকে, দলটিকে স্বৈরাচারের সহযোগী আখ্যা দিয়ে জাপা নেতাদের বিচারও দাবি করেছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি।

এ বিষয়ে দৈনিক ভোরের আকাশকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০০৮ সালে সকল দল নির্বাচনে এসেছে। ২০১৪ সালে আমাদের নেতা নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপর একটা পর্যায়ে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। তখন উপজেলাসহ বিভিন্ন নির্বাচন হয়। সেখানে কিন্তু বড় বড় দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে।

২০১৮ সালে আমরা যেমন পার্লামেন্টে ছিলাম, তেমনই বিএনপিসহ বিভিন্ন দল চার বছর পার্লামেন্টে ছিল। এরপর ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করে। আমরা কী অবস্থায় সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে এসেছি তা আমাদের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট করেছেন। মূলত জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচনে আনা হয়েছে। জাপাকে স্বৈরাচার বলার যৌক্তিকতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, জাপা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী তাতে কারো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগ-বাটোয়ারা আর গণতন্ত্র ধ্বংসে দলটির সর্বোচ্চ ভূমিকা রয়েছে। ফলে দেশের মানুষ তাদের বিচার চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে বিচারের মুখোমুখী করা হলেও জাপার সুবিধাভোগী নেতাদের বিচার কেন হচ্ছে না তা নিয়েও মানুষের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।

জামায়াতের ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্যে আওয়ামী লীগের চেয়ে জাপা অপরাধ কম নয়। তিনি বলেন, কেউ কেউ যারা জাপার অনেক নেতাকে ভালো মানুষ বলার চেষ্টা করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, কার স্বার্থে এসব ভালো মানুষেরা ২০২৪ সালে নির্বাচন গিয়েছিল। দলটির ভোটে না গেলে সেসময় পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো। তিনি ক্ষমতালোভী জাপা নেতাদের বিচারের মুখোমুখী করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের নিয়ে গঠিত এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসের দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, জাপা নেতারা এখনো কিভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আমাদের বুঝতে পারছি না। ফ্যাসিস্টের অন্যতম দোসর জাপা এখনো আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন বলেও অভিযোগ তার। দেশকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে জাপার দায় কোন অংশে কম নয় বলেও দাবি তার।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একতরফা আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। সেসময় জাপা ক্ষমতার মোহে শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়। মাত্র ১১ আসন নিয়ে দলটি বিরোধী দলের আসনে আসীন হয়। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ওই নির্বাচনের কিছুদিন আগে ভারত সফরে যান। সেখানে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

তিনি ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ভারতের কর্মকর্তারা বৈঠকের বিষয়ে তাকে বলতে ভারত নিষেধ করেছেন। তাই বৈঠক সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। তার ওই বক্তব্যে দেশদ্রোহীর সামিল বলেও তখন অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন। ওই নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ফের জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। ভোটের পর ফের জাপায় ভাঙন আসে।

রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে নতুন জাপা গঠিত হয়।  ওই একতরফা ও পাতানো ভোটে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। আর জাপাকে সংসদের প্রধানবিরোধী দল বানোনো হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের শেখ দিন পর্যন্ত জাপা আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাপাও বেকায়দায় পড়েছে। বিশেষ করে দলটির সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা জনরোষে পড়ার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। আবার দলটির অনেক নেতা এখন ‘কথিত সুশীল’র এর ভূমিকায় নেমেছেন।

জানা গেছে, সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপ করছে। সরকার গঠনের পরপরই অনুষ্ঠিত প্রথম সংলাপে জাপাকে ডাকা হয়েছিল। যেখানে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ পাঁচ নেতা অংশ নেন। এরপর গত বছরের অক্টোবওে ফের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সংলাপে আমন্ত্রণ পায়নি জাপা। জাপাকে আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ সে সময় সরব ছিলেন।

জানা গেছে, ১/১১ পরিস্থিতির পর ২০০৮ সালের হুসেইন মুহম্ম¥দ এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দলটির কয়েকজন নেতা মন্ত্রী পরিষদেও স্থান পান। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নামে। সেই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ঘোষণা দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

ওই সময় তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে মানুষ তাকে ‘জাতীয় বেঈমান’ মনে করবেন। ওই ঘোষণার পর অজ্ঞাত কারণে তাকে অসুস্থ দেখিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। পরে তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে দিয়ে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান ও তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদেরও শেষ পর্যন্ত ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থেকে দলটির অপর অন্যতম নেতা কাজী জাফর আহমদ দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি এরশাদকে বহিষ্কারও করেন। কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে যোগ দেন বিএনপি জোটে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট ভোট বর্জন করলে একতরফা ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আর জাপা সরকারে থাকার পাশাপাশি জাতীয় সংসদের বিরোধী দল নির্বাচিত হয়।  ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জাপা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকেই ভোটে আসে। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ-জাপা মিলে সরকার গঠন করেছিল। একইসঙ্গে জাপা বিরোধী দলের ভূমিকায়ও ছিল।

দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের চার টার্ম ক্ষমতার শেষদিন পর্যন্ত জাপার সবচেয়ে সুবিধাভোগী ছিলেন দলটির তৎকালীন কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। তিনি একবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এছাড়া সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, মশিউর রহমান রাঙ্গা, অন্যতম নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ ও বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অন্যতম সুবিধাভোগী। এদের মধ্যে মন্ত্রী ছিলেন জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মশিউর রহমান রাঙ্গা ও মুজিবুল হক চুন্নু প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া দলটির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম একবার নির্বাচিত ও তিনবার স্বতন্ত্র এমপি এবং প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। আওয়ামী লীগৈর সঙ্গে জাপার নানাক্ষেত্রে সমঝোতা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকায় ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা, মুজিবুল হক চুন্নু। জি এম কাদের ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। সুবিধাভোগী এসব নেতাদের মধ্যে রওশন এরশাদ এখন বার্ধক্যজনিত অসুস্থ রয়েছেন। সালমা ইসলাম প্রকাশ্যে রয়েছেন। অন্যরা অনেকটাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই এখন নেতাকর্মীদের থেকেও দূরে থাকেন। মাঝে-মধ্যে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দেখা যায় প্রেস কনফারেন্সে। এছাড়া সভা সেমিনারে দেখা যায় জিএম কাদেরকে।

১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এইচ এম এরশাদ ১৯৮৪ সালে ‘জনদল’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৮৫ সালে এরশাদ তার জনদল, বিএনপির একাংশ, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি এবং মুসলিম লীগের সমন্বয়ে গঠন করেন জাতীয় ফ্রন্ট। একপর্যায়ে কাজী জাফর স্বেচ্ছায় ইউপিপি ভেঙে দিয়ে এরশাদের দলে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। যা অনেকটাই সরকারি দল হিসেবে পরিচিতি পায়।

’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন হলে ওই সময় শামসুল হুদা চৌধুরী ও ডা. এম এ মতিন প্রথম দল ভেঙে জাতীয় পার্টি জাতীয়তাবাদ গঠন করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাতীয় পার্টি প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে (বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্য জোট ও জাতীয় পার্টি) চলে যায়। সে সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি নামে নতুন দল গঠন করেন এবং দলের চেয়ারম্যান হন মিজানুর রহমান চৌধুরী।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন ধরে। এরশাদ চরমোনাই পীরের দলের সঙ্গে নির্বাচনি জোট করায় নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করেন এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যায়। বর্তমানে এই অংশের নেতৃত্বে আছেন তারই সন্তান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। এই অংশটির ভেতরও আরেকটি ভাঙন হয়েছে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার একপর্যায়ে এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এ সব খণ্ডিত দলের সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন নামে এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।

এর আগে কাজী জাফর আহমদ ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আবার ভেঙে যায়। তবে কাজী জাফর আহমদ ফের এরশাদের কাছে ফিরে যান। এক এগারোর সময়ও জাতীয় পার্টি দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল। রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এরশাদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে বহিষ্কার করেন। পরে অবশ্য এ দুটি অংশই এরশাদের নেতৃত্বে এক হয়ে যায়। ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই জাপা ৬ বার ভেঙেছে। সবশেষ দলটির ভাঙন ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারি নির্বাচনের পর।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 হ্যাকারের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড ও মোবাইল জব্দ

হ্যাকারের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড ও মোবাইল জব্দ

সংশ্লিষ্ট

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ঐকমত্যেও কৌশলী ইসলামী দল

ঐকমত্যেও কৌশলী ইসলামী দল

‘হজযাত্রীর বেশে’ দেশ ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা আটক

‘হজযাত্রীর বেশে’ দেশ ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা আটক

আমরা এখন বাঘের মুখে পড়েছি: মির্জা আব্বাস

আমরা এখন বাঘের মুখে পড়েছি: মির্জা আব্বাস