ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫ ০১:১৭ পিএম
"মুমিন কখনো হতাশ হয়েও না"তাওবা করো
জীবনের কঠিন সমীকরণ, পাপের বোঝা, গুনাহ থেকে তওবার অনুভূতি- বিভিন্ন কারণে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। হতাশা অনেক সময় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি করে। কোরআন ও হাদিসে যেকোনো মুহুর্তে ও যেকোনো পরিস্থিতিতে হতাশ না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যেকটি মানুষ কম-বেশি গুনাহগার। গুনাহ যত বড়ই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের চেয়ে সেটা বড় নয়। অন্তরের গভীর থেকে কেউ যদি তাওবা করে, তবে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন। সবার জন্য তিনি তাওবার দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাওবার নিয়তে দ্বীনের পথে এগিয়ে আসা ব্যক্তিকেও তিনি নিরাশ করেন না। অতীতের এমনই একটি চমকপদ ঘটনা তার সাক্ষী হয়ে আছে।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক ছিল। সে নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করার পর জিজ্ঞাসা করল, এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আলেম ব্যক্তি কে? তাকে এক রাহিবের সন্ধান দেওয়া হয়। সে তার কাছে এসে বলল, সে নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এমতাবস্থায় তার জন্য কি তাওবা আছে? রাহিব বলল, না। তখন সে রাহিবকেও হত্যা করে ফেলল। এবং এর (রাহিবের) হত্যা দ্বারা একশ পূর্ণ করল।
তার পর সে আবার প্রশ্ন করল, এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আলেম কে? তখন তাকে এক আলেম ব্যক্তির সন্ধান দেওয়া হলো। সে আলেমকে সে বলল যে, সে একশ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবা আছে? আলেম ব্যক্তি বললেন, হ্যাঁ। এ তাওবার মধ্যে কে অন্তরায় হতে পারে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কতিপয় লোক আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে যাও। নিজের দেশে আর কখনো ফিরে যেয়ো না। কেননা এ দেশটি বড় মন্দ। তার পর সে চলতে লাগল। এমনকি যখন সে অর্ধপথে পৌঁছে, তখন তার মৃত্যু এলো। এর পর রহমতের ফেরেশতা ও আজাবের ফেরেশতার মধ্যে তার সম্পর্কে বিবাদ লেগে গেল।
রহমতের ফেরেশতারা বললেন, সে অন্তরের আবেগ নিয়ে আল্লাহর দিকে তাওবার জন্য ধাবিত হয়ে এসেছে। আর আজাবের ফেরেশতারা বললেন, সে তো কখনো কোনো নেক আমল করেনি। এ সময় মানুষের সুরতে এক ফেরেশতা এলেন। তারা তাকে তাদের মধ্যে মীমাংসাকারী নির্ধারণ করলেন। তিনি তাদের বললেন, তোমরা দুই দেশের মধ্যবর্তী দূরত্ব মেপে নাও।
দুই স্থানের মধ্যে যে স্থানের দিকে সে অধিক নিকটবর্তী হবে, তাকে সে স্থানেরই গণ্য করা হবে। তারা মাপলেন। তখন তারা তাকে উদ্দিষ্ট স্থানের অধিক নিকটবর্তী পেলেন। তখন রহমতের ফেরেশতা তাকে কবজ করে নিলেন।
কাতাদা (রহ.) বলেন, হাসান (রহ.) বলেছেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তার মৃত্যু এল, তখন সে বুকের ওপর ভর দিয়ে (কিছু এগিয়ে) গেল। (মুসলিম, ৬৭৫২ )
এ হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষা পাওয়া যায় তা হলো—
এক. রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া: আল্লাহর রহমত সবার ওপর বিস্তৃত । তাওবা কবুলের ব্যাপারে রহমত থেকে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। একজন মানুষ যত বড় পাপীই হোক, তার তাওবা করার সুযোগ আছে । খাঁটি তাওবা করলে আল্লাহতায়ালা বড় থেকে বড় পাপও ক্ষমা করেন।
দুই. যোগ্য আলেমের পরামর্শ নেওয়া: জীবন গঠনে সুযোগ্য আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রকৃত আলেম সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে জান্নাতের পথে পরিচালিত করতে পারেন। অযোগ্য ও বেআমল আলেমের সাহচর্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। হাদিসে বর্ণিত রাহিব না জেনে ফতোয়া দিয়ে নিজেই হত্যার স্বীকার হয়েছেন।
তিন. উত্তম পরিবেশে অবস্থান করা: মানুষের জীবনে মন্দ পরিবেশ আর সঙ্গ দোষের প্রভাব প্রতিফলিত হয়। ক্রমান্বয়ে মানুষ দ্বীনের পথ থেকে ছিটকে পড়ে। তাই নেককার লোকের সান্নিধ্যের সৌরভ নিতে হয়। এটা আত্মশুদ্ধির অন্যতম একটি উপায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থেকো। (সুরা তাওবা, ১১৯)
ভোরের আকাশ/তা.কা