ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫ ১১:২৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে হলে দৃঢ় সংকল্পের পাশাপাশি কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া শুধু পরকালের জন্যই নয়, দুনিয়ার জীবনেও এক তিক্ত পরিণাম ডেকে আনে। সার্বক্ষণিক মানসিক যন্ত্রণা ও অস্থিরতাও এর বড় শাস্তি। গুনাহ ছাড়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা। নিজেকে বদলাতে চাইলে যে ৮টি উপায় অবলম্বন করতে পারেন, তার একটি কার্যকর দিকনির্দেশনা এখানে তুলে ধরা হলো।
১. খাঁটি তাওবার মাধ্যমে শুরু করুন
গুনাহ ছাড়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা। তাওবার চারটি মূল শর্ত রয়েছে:
কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
সাথে সাথেই গুনাহের কাজ সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়া।
ভবিষ্যতে আর কখনো সেই গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
যদি কোনো বান্দার হক নষ্ট করে থাকেন, তবে তা ফিরিয়ে দেওয়া বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। (তিরমিজি: ৪০২)
২. খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ ত্যাগ করুন
গুনাহ ছাড়তে চাইলে সবার আগে আপনার চারপাশের পরিবেশ বদলাতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের ওপর থাকে। সুতরাং, কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও।’ (সুনান তিরমিজি: ২৩৭৮)। যে পরিবেশে গুনাহের উপকরণ (যেমন: অনাত্মীয় নারী, মাদক, বা অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ) সহজলভ্য, সেই পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের স্থান এমনভাবে স্থাপন করুন, যা সবার নজরে থাকে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩২)। গুনাহের পথগুলোকে আগেই বন্ধ করার নির্দেশ কোরআনে এসেছে।
৩. দ্রুত বিয়ে করার চেষ্টা করুন
যদি যৌবনের কারণে গুনাহে আসক্ত হয়ে থাকেন, দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এ ব্যাপারে দারিদ্র্যকে ভয় পাওয়া উচিত নয়, কারণ আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যবান ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা নূর: ৩২)
৪. রোজার অভ্যাস করুন
যদি বিয়ে করা সম্ভব না হয়, তবে রোজা রাখা গুনাহ থেকে বাঁচার একটি কার্যকর উপায়। নবীজি (স.) অবিবাহিত যুবকদের রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোজা তার যৌনতাকে দমন করে। (বুখারি: ৪৯৯৬)
৫. আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্যে থাকুন
নেককার ও আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে সময় কাটানো গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম উপায়। তাদের মজলিসে আসা-যাওয়া করলে মন পরিশুদ্ধ হয় এবং তাওবার ওপর অটল থাকা সহজ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সুরা তাওবা: ১১৯)
৬. পরকালের শাস্তির কথা স্মরণ করুন
যখনই গুনাহ করার ইচ্ছা জাগবে, তখন পরকালের কঠিন শাস্তির কথা স্মরণ করুন। কেয়ামতের দিন নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও যে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে—এই ভয়াবহ বাস্তবতা স্মরণ করা যেতে পারে। কোরআনে এসেছে, অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সুরা হা-মিম সাজদাহ: ২০)
৭. নির্জনতা পরিহার করুন
একাকী বা নির্জনে থাকা অনেক সময় গোপন গুনাহের কারণ হয়। নবীজি (স.) এমন কিছু লোকের কথা বলেছেন, যারা গোপনে আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে এবং তাদের নেক আমল কেয়ামতের দিন বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। (ইবনে মাজাহ: ২/১৪১৮)। তাই নির্জনতা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত।
৮. আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করুন
সর্বোপরি, আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। আল্লাহ তাআলা বলেন, সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন? (সুরা আলাক: ১৪)। যিনি সর্বজ্ঞ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা, তাঁর সামনে কোনো কিছু গোপন থাকে না। এই বিশ্বাসই আমাদের গুনাহ থেকে দূরে রাখবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ভোরের আকাশ/তা.কা