ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবি বিএনপি
দলের প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবাষির্কীতে ঢাকাসহ সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন। গতকাল শুক্রবার এ কর্মসূচির মধ্যে ছিল জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া, অসহায়দের মধ্যে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ প্রভৃতি। এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায়। যার মধ্যদিয়ে দেশ গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবে। তারা বলছেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন জিয়াউর রহমান।গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন বিএনপি নেতারা। এরপর সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। জনগণ এই নির্বাচন আদায় করবে।তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে বসে বললেন, ‘একটি দল নির্বাচন চায়।’ তিনি তো বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি বরাবরই নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে এবং এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনুস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা) স্বয়ং বলেছেন। আমরা বলিনি, তারই (ড. মুহাম্মদ ইউনুস) প্রস্তাব। পরবর্তীতে তিনি শিফট করে চলে গেলেন জুন মাসে। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন কখনো বাংলাদেশে হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে।তিনি বলেন, আর নির্বাচন যদি করতে না চান সেটা তার দায়-দায়িত্ব, আমাদের নয়। আমরা জাতি-জনগণ এই নির্বাচন আদায় করব।মির্জা আব্বাস বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হবে জাতিকে বিভিন্ন কারণেই। আপনারা লক্ষ্য করেছেন সংস্কার সংস্কার করতে করতে বর্তমান সরকার বহু লোককে আমদানি করেছেন সংস্কার করার জন্য।আমি আজকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহু সংস্কার করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন খাল সংস্কার, গার্মেন্টস ব্যবসা, পোলট্রি, ডেইরিসহ নারীশিক্ষা- বহু সংস্কার তিনি করেছেন। কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আনেননি। আজকে এই সরকার কিছু বিদেশি লোককে আমদানি করেছেন দেশে সংস্কার করার জন্য। এখন সংস্কার করতে করতে এমন জায়গায় চলে গেছে যে তারা নির্বাচন দিতে চায় না।রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের জনক হিসেবে অভিহিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা এই শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে জিয়াউর রহমানের জন্য দোয়া কামনা করছি, আল্লাহ যেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বেহেস্তে নসিব করেন।এর আগে মির্জা আব্বাস দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে আসেন। কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পরে কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তারা এবং এরপর মরহুম নেতার রূহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বেনজীর আহমেদ টিটো, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সঠিক সময়ে বর্তমান সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে।শুক্রবার গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেট এলাকায় জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করে গুলশান থানা বিএনপি। এতে অংশ নিয়ে ওই মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।তিনি বলেন, এই সরকার বলেছিল তারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, সেটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সঠিক সময়ে বর্তমান সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে।তিনি আরও বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তার আদর্শ অনুসরণ করেই বিএনপি জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি শুধু গুলশান এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে- মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের টিঅ্যান্ডটি কলেজ, হাইকোর্ট মাজার এলাকা, বাসাবো খেলার মাঠ, ধানমন্ডি আবাহনী মাঠ, ধানমন্ডি কেএফসি, কলাবাগান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্পটে দিনব্যাপী দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন সকাল থেকে দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দোয়া মাহফিল আয়োজন করে বিএনপিসহ দলটির নানা সংগঠন। এসব অনুষ্ঠান থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। সারাদেশে ওয়ার্ড বা ইউনিট পর্যন্ত আয়োজন করা হয় দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদতবার্ষিকীতে নানা অনুষ্ঠানের। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে এক দল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান।ভোরের আকাশ/এসএইচ