জেলা প্রতিনিধি,ফেনী
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫ ০৬:১৬ এএম
ফেনীতে নদীর পানি কমলেও ভোগান্তিতে প্লাবিত এলাকার মানুষ
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে অন্তত ২০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে সীমান্তঘেঁষা ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বহু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় নদীর পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কাটেনি দুর্গত মানুষের।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামে ১২টি ও ফুলগাজীতে ৮টি পয়েন্টে নদীর বাঁধ ভেঙেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীতে ১০টি, কহুয়ায় ৬টি ও সিলোনিয়ায় ৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে অন্তত ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন এলাকা প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।
ফুলগাজীর দৌলতপুরের বাসিন্দা রেজিয়া বেগম বলেন, “গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কিছুটা সামলে উঠেছিলাম, এবার আবার সব পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিবারই জুলাই-আগস্টে বাঁধ ভাঙে, এখন মনে হয় এই এলাকায় জন্মেই ভুল করেছি।”
উত্তর শ্রীপুরের বাসিন্দা আলী আজ্জম বলেন, “বাঁধে ভাঙনের কারণে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকছে। বিদ্যুৎ নেই, নেটওয়ার্কও নেই। সরকার বদলায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্য বদলায় না।”
গাইনবাড়ির পুষ্পিতা রাণী বলেন, “ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। বাচ্চা ও বয়স্কদের নিয়ে চরম কষ্টে আছি। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। বাঁধ মজবুত না হলে প্রতিবছরই এই দুর্ভোগ হবে।”
ফেনীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। বৃহস্পতিবারও হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “রাত ৯টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামে। তবে ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, পরশুরাম, ফুলগাজী ও সদর উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ছয় উপজেলায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/হ.র