স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ০২:৩৮ এএম
ছবি সংগ্রহীত
হঠাৎ করে পায়ের গোড়ালি বা পেটের নিচে ফোলাভাব দেখা দিচ্ছে? অনেকেই হয়তো ভাবেন, এটা শুধুই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ক্লান্তি বা পানি জমার ফল। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, বিষয়টি এতটা হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ফোলাভাব হতে পারে নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)–এর প্রাথমিক লক্ষণ।
বিশ্বজুড়ে এই রোগের হার ভয়াবহভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এই তিনটি কারণ মিলে নীরবে বাড়াচ্ছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি।
লিভারে চর্বি বাড়লে যা ঘটে
লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যখন এই চর্বি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে তা থেকে হতে পারে সিরোসিস বা এমনকি লিভার ক্যানসারও।
ফ্যাটি লিভারের ধরন
ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই প্রকার—
০১. অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার – অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়।
০২. নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (NAFLD) – অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, চর্বিযুক্ত খাবার এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে দেখা দেয়।
উপসর্গ যেগুলোতে সতর্ক হবেন
ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে ধীরে ধীরে কিছু ইঙ্গিত দেখা দিতে পারে, যেমন—
পেটের ডান পাশে চাপ বা অস্বস্তি
অতিরিক্ত ক্লান্তি
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
পেট বা পায়ে ফোলাভাব
চোখ ও ত্বকে হলুদ ভাব (জন্ডিস)
গাঢ় প্রস্রাব ও হালকা বর্ণের মল
মাঝে মাঝে মানসিক বিভ্রান্তি
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) জানিয়েছে, পায়ে ফোলাভাবকে অবহেলা না করাই ভালো। অনেকেই এটিকে সাধারণ শারীরিক ক্লান্তি মনে করেন, কিন্তু এটি হতে পারে লিভারের ক্ষতির আগাম সংকেত।
‘পিটিং এডেমা’ চিহ্নিত করবেন যেভাবে
ফুলে যাওয়া স্থানে আঙুল দিয়ে কয়েক সেকেন্ড চাপ দিন। যদি আঙুল তোলার পরেও সেখানে গর্তের মতো দাগ থেকে যায়, তবে সেটি হতে পারে পিটিং এডেমা—যা শরীরে অতিরিক্ত তরল জমে থাকার লক্ষণ। এটি ফ্যাটি লিভারসহ বিভিন্ন লিভারজনিত জটিলতার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
কী করবেন
এমন অস্বাভাবিক ফোলাভাব দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।
প্রতিরোধে যা করবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলেই ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়—
প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
সুষম ও পরিমিত খাবার খান
অ্যালকোহল পরিহার করুন
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
সবশেষে মনে রাখবেন—শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তন কখনোই তুচ্ছ নয়। পেট বা পায়ে সামান্য ফোলাভাবও হতে পারে বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির আগাম বার্তা। তাই সচেতন থাকুন, নিজের যত্ন নিন।
ভোরের আকাশ//হর