আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫ ০২:২৩ এএম
ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাতাহ’: মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণে নতুন হুমকি
বিশ্বের সামরিক প্রযুক্তির দৌড়ে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এখন সবচেয়ে আলোচিত অস্ত্রগুলোর একটি। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি এবার এই দৌড়ে শামিল হলো ইরান। দেশটি সম্প্রতি নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাতাহ’ উন্মোচন করেছে, যা ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?
শব্দের গতির পাঁচ গুণ বা তার বেশি বেগে চলতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রকেই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বলা হয়। ইরানের ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ম্যাক ১৩ (ঘণ্টায় প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার)। এ গতিতে ক্ষেপণাস্ত্রটি কয়েক মিনিটের মধ্যে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য
পাল্লা: প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার
গতি: ম্যাক ১৩
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা এড়িয়ে লক্ষ্যভেদে সক্ষম
গতিপথ পরিবর্তন ক্ষমতা: উড্ডয়নের সময় দিক পরিবর্তন করতে পারে, ফলে আটকানো প্রায় অসম্ভব
জ্বালানি ও প্রপালশন: উন্নত প্রযুক্তি, যা দীর্ঘপাল্লা ও অতিদ্রুত গতি নিশ্চিত করে
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ
বিশ্বের আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন প্যাট্রিয়ট, আয়রন ডোম বা থাড—সবগুলোই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে হিমশিম খায়। কারণ প্রচলিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথে চলে, কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই দিক পরিবর্তন করতে পারে। ফলে এর অবস্থান ও লক্ষ্যবস্তু অনুমান করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
কৌশলগত বার্তা
ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্মোচন শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি ইরানের কৌশলগত অবস্থানকেও শক্তিশালী করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখেও দেশটি নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এই প্রযুক্তি অর্জন করেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ইরান শুধু আঞ্চলিক শক্তিই নয়, বৈশ্বিক সামরিক আলোচনাতেও বড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
আঞ্চলিক প্রভাব
ইসরায়েল: উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মালিক হলেও ফাতাহ তাদের জন্য নতুন হুমকি হয়ে উঠেছে।
মার্কিন ঘাঁটি: উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোও এখন এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায়।
সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো: ইরানের সঙ্গে চলমান ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে তাদের নিরাপত্তা হিসাবেও নতুন ঝুঁকি তৈরি হলো।
সামরিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য
ইরানের জন্য ফাতাহ কেবল প্রতিরক্ষার হাতিয়ার নয়, বরং আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলার কৌশলও বটে। এটি একদিকে অভ্যন্তরীণভাবে জনগণকে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আশ্বাস দিচ্ছে, অন্যদিকে বৈশ্বিক মঞ্চে শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল-ইরান ১২ দিনের যুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় স্পষ্ট হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক সমীকরণে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ইরানের এই অর্জন।
সূত্র: পার্স টিভি
ভোরের আকাশ//হ.র