আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৭ এএম
ছবি : সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশু। সোমবার এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা গেছে।
হামাস জানিয়েছে, গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭১ জন নিহত হয়েছেন— যাদের ৯০ শতাংশের বেশি বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও ৬২২ জন। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, সোমবার যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা নাকি সেনাদের জন্য ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ সৃষ্টি করেছিল।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে নির্ধারিত ‘ইয়েলো লাইন’ সীমার ভেতরের ঘরবাড়ি নিয়মিতভাবে ধ্বংস করছে। খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে এ অভিযান তীব্রতর হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মেয়র হামদান রাদওয়ান।
তার ভাষায়, “প্রতিটি দুইতলা ভবন বা বাড়িই এখন লক্ষ্যবস্তু।” গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলেও একইভাবে আবাসিক ভবন উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।
স্যাটেলাইট ছবি ও মাঠ পর্যায়ের ভিডিওতে দেখা গেছে, পুরো পাড়া-মহল্লা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ইসরায়েল মানবিক সহায়তায় নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত ছিল গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু ইসরায়েল এখনও সেই শর্ত মানছে না বলে অভিযোগ হামাসের।
সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ট্রাক— যার মধ্যে ৫০টি জ্বালানিবাহী— প্রবেশের কথা থাকলেও ইসরায়েল তা অনুমতি দিচ্ছে না। রোববার মাত্র ২৭০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে ১২৬টি ছিল মানবিক সহায়তা, ১২৭টি বাণিজ্যিক পণ্য, ১০টি জ্বালানি ও সাতটি রান্নার গ্যাসবাহী।
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০টি ট্রাক প্রয়োজন। কিন্তু ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে সংস্থাটি ত্রাণ পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ইউএনআরডব্লিউএ’র গাজা অপারেশনের উপপরিচালক জন হোয়াইট আইরিশ গণমাধ্যম দ্য জার্নাল-কে বলেন, “ইসরায়েল আমাদের কোনো যানবাহন ঢুকতে দিচ্ছে না। তারা আমাদের ত্রাণ অন্য সংস্থার হাতে তুলে দিতে বলছে এবং ইউএনআরডব্লিউএ’র লোগো মুছে ফেলতে বলছে, যা তীব্র জটিলতা সৃষ্টি করছে।”
গত জানুয়ারি থেকে ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় গাজার লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবন আরও বিপন্ন হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ঢোকার কথা থাকলেও বাস্তবে এর অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক পণ্য বহন করছে। উত্তর গাজায় ৭৫ দিন ধরে সরাসরি কোনো ত্রাণ প্রবেশ করেনি বলেও জানান তিনি। ফিলিস্তিনি মরদেহ হস্তান্তর যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েল ১৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। রেড ক্রসের মাধ্যমে মরদেহগুলো খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১২ দফায় মোট ৩১৫টি মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮৯টি শনাক্ত করা গেছে। বাকিগুলো পচন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে অশনাক্ত রয়ে গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম ওয়াফা জানিয়েছে, অধিকাংশ মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর খান ইউনিসের আল-খাইর হাসপাতাল পুনরায় চালু হয়েছে।
সংস্থাটি বিদ্যুৎ, পানি ও স্যানিটেশন পুনর্বহাল করে হাসপাতালটি সচল করতে সহায়তা করেছে। সেখানে নতুন করে ২০ বেডের অপুষ্টি স্থিতিশীলতা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গাজায় এখন এ ধরনের মোট আটটি কেন্দ্র চালু রয়েছে, যেখানে গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে— যারা প্রায়শই সংক্রমণ ও পানিশূন্যতায় ভোগে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.