ইশরাককে শপথ না পড়ানোর ১০ কারণ জানালেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোর পেছনে ১০টি আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সোমবার (১৯ মে) বিকেল ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এসব কারণ তুলে ধরেন।
তিনি লিখেন, প্রথমত, হাইকোর্ট যে রায়ে আর্জি সংশোধনকে অবৈধ বলেছে, তা লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে এবং পরে তারা আপিলও করেনি।
তৃতীয়ত, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার আগেই রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করা হয়, যেখানে দুইজন নাগরিকের পাঠানো লিগ্যাল নোটিশও উপেক্ষা করা হয়।
চতুর্থত, মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো পক্ষ ছিল না এবং রায়ে বিভাগটির প্রতি কোনো নির্দেশনাও নেই।
পঞ্চমত, শপথ না দেওয়ার কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিবাদী করে দায়েরকৃত রিট পিটিশন এখনো বিচারাধীন।
ষষ্ঠত, বরিশাল সিটি করপোরেশন সম্পর্কিত মামলায় হাইকোর্টের রায় আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আবেদন খারিজ করেছে, যা ট্রাইব্যুনালের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সপ্তমত, মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে; মেয়র হিসেবে কতদিন দায়িত্বে থাকবেন তা স্পষ্ট নয়।
অষ্টমত, নির্বাচন কমিশনের চিঠিতেও বলা হয়েছে ‘‘কোনো প্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে’’ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু বর্তমানে স্পষ্টতই আইনি জটিলতা রয়েছে।
নবমত, এসব জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
দশমত, আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচনগুলো বৈধ কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এসব নির্বাচনকে বৈধ বলে মেনে নেয়, তাহলে এমন পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, “উচ্চ আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন এবং আইনি জটিলতা নিরসনের আগে শপথগ্রহণ সম্ভব নয়। অথচ বিএনপি মহানগর কার্যালয় বন্ধ করে আন্দোলন করছে, যা সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং জনদুর্ভোগ তৈরি করছে।”
তিনি ব্যক্তিগত আক্ষেপও জানান, “ইশরাক হোসেনের আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক আচরণের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ যেন এটা না বলেন যে সাধারণ জনগণ এসব করছে, কারণ বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নির্দেশে দলীয় কর্মীরাই এসব কর্মসূচি চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য রয়েছে।”
শেষে তিনি জানান, সকল আইনি জটিলতা কাটলে শপথ গ্রহণে স্থানীয় সরকার বিভাগের কোনো আপত্তি থাকবে না।
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।শুক্রবার (৫ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, “যারা মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসছেন, তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে, তবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”এর আগে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) মতাদর্শ প্রচার ও অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত একটি বাংলাদেশি শ্রমিকচক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় পুলিশ। চক্রটির সদস্যরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএস-এর কাছে অর্থ পাঠাত বলে অভিযোগ রয়েছে।পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, “চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উগ্রবাদ ছড়াত।” গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হওয়ায় মামলা হয়েছে। আরও ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। বাকি ১৬ জন এখনো মালয়েশিয়ান পুলিশের হেফাজতে আছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।পুলিশপ্রধানের ধারণা, এই চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জন সদস্য থাকতে পারে। যাদের সংশ্লিষ্টতার মাত্রা কম, তাদের ফেরত পাঠানো হবে, আর যেসব ব্যক্তি গভীরভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। সেখানে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এ ধরনের ঘটনা খুবই বিব্রতকর এবং আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।”তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আমরা মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং যৌথভাবে কাজ করবো। দেশের ভেতরে বা বাইরে—কোনো অবস্থায় জঙ্গিবাদকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর।”উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার কারখানা, কৃষি ও নির্মাণ খাতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান। ২০১৬ সালে কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর থেকে দেশটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়, যার ধারাবাহিকতায় বহু ব্যক্তি আটক হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, নিরাপত্তা বাহিনী এখনো সক্রিয় রয়েছে।ভোরের আকাশ//হ.র
যুব, ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, জুলাই মাসে শহীদ হতে না পারা তাঁর জন্য এক ধরনের আফসোসের বিষয়। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন মন্তব্য করেন।স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদ লেখেন, “গত বছর জুলাইতেও আমাদের হত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিল একজন। এ দেশের জনগণ তার পরিণতি কী করেছে, তা সবারই জানা।”তিনি স্মরণ করেন, “৩৬ জুলাই শহীদ হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলাম। শাহাদাতের সুযোগ এলে কখনো পিছপা হবো না।”জুলাই মাসকে প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ আরও লেখেন, “জুলাই এদেশে লক্ষ-কোটি বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে।”তিনি বলেন, “আমি বা আমরা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমাদের ভিশন ক্ষণস্থায়ী জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের জন্য যেসব বিপ্লবী প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, তাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে—যতদিন না দেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।”স্ট্যাটাসের শেষদিকে অতীতের হামলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লেখেন, “একটারে মারি, একটাই যায়; বাকিডি যায় না স্যার। ভুলে গেছেন?”তাঁর এই স্ট্যাটাস ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।ভোরের আকাশ//হ.র
এক সময় যাকে বলা হতো ‘শহুরে রোগ’, সেই ডেঙ্গু এখন শহরের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। চলতি ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরের অর্থাৎ গ্রাম ও মফস্বল এলাকায়। অথচ প্রতিরোধ পরিকল্পনা, জরিপ, ও নজরদারি- সবই সীমাবদ্ধ রাজধানী ও কিছু নগর ঘিরে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার পাঁচগুণ বেড়েছে। তবে এটি এবার গ্রামে বেশি আতঙ্ক ছড়ালেও প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনও মূলত নগরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ঢাকা শহর ঘিরে। ফলে একদিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর ভৌগোলিক বিস্তারে পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২১ সালেও যেখানে ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক- সেবার রোগীর ৮৩.০৭ শতাংশই রাজধানীতে ছিল। সেই চিত্র এখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ২০২২ সালে ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২.৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের রোগী বেড়ে হয় ৩৭.১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাইরে রোগীর সংখ্যা ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়। সেবার ঢাকায় ছিল ৩৩.৮৫ শতাংশ, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৬৬.১৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে এ পার্থক্য আরও বেড়ে দাঁড়ায় ঢাকায় ৩৯.৩০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ৬০.৭০ শতাংশ। এমনকি চলতি বছরের (২০২৫ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত (৩০ জুন) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১০ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে আট হাজার ৬২ জন (৭৮.৩ শতাংশ) রোগীই রাজধানী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে শনাক্ত হয়। অন্যদিকে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শনাক্ত হন দুই হাজার ২৩০ জন (২১.৭ শতাংশ) রোগী। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ বেড়েছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি পরিকল্পনা ও মনোযোগ এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি গ্রামীণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৫৯১ জন রোগী, যা দেশের সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ।এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা থেকে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২৬ জন। ঢাকা বিভাগের বাইরের অংশেও এক হাজার ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনেও রোগীর সংখ্যা কম নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এক হাজার ৪০৩ জন, আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। খুলনা বিভাগের বাইরে ৩৪৩ জন, রাজশাহীতে ৪০১ জন, ময়মনসিংহে ১৩৬ জন, সিলেটে ৩০ জন এবং রংপুর বিভাগে মাত্র ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, গত ২৪ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে যথাক্রমে ১৫৭, ১১৮, ৭৪, ১০৭, ১৪১, ১৩৬ ও ১৪৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৫৮, ৪৩, ৮, ১১, ৪০, ৫৫ ও ৫৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৪৪, ২৯, ১৮, ৬, ৩৩ ও ৫৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।এছাড়া খুলনা বিভাগে ৮, ১৬, ৬, ৪১ ও ২১ জনের; ময়মনসিংহ বিভাগে ৫, ২, ৬ ও জনের; সিলেট বিভাগে ১, ৩, ২ ও ৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) যথাক্রমে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩৫, ৪৩, ৩০, ১২, ১৮, ৪৮ ও ৬১ জনের। সেইসঙ্গে এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫০, ৪৫, ৩২, ৬, ৪০, ২৮ ও ৪৫ জনের এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যথাক্রমে ৪২, ২৬, ২৪, ১৫, ৮, ৩২ ও ৪২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।চলতি বছর ঢাকার বাইরে তিন সিটি করপোরেশন এলাকা এবং ছয় জেলায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি জানতে জরিপ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। জরিপে একটি মাত্র জেলা বরগুনার গ্রামাঞ্চলেও এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অন্য জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও জরিপ হয়। বরগুনা জেলার জরিপে পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়।এর বাইরে মাগুরার পৌর এলাকায় ৩৫.৫৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৩২.৯৬ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৮.১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪.৪৪ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার ৭.২৯ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভা পাওয়ার শতকরা হার বা হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়।সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ধারণা করা হয়, আগামী ৩০-৪০ বছর ডেঙ্গু হতে থাকবে। কারণ, নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। ঢাকার বাইরে মশার নিয়ন্ত্রণ বা অন্য কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।এর মধ্যে আবার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধি না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ মানুষ বসবাস করেন। সুতরাং, মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রোগটি আগামী ৩০ বছর থাকবে, এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়।শহর ছেড়ে কেন গ্রামে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, এডিস ইজিপ্টি ও অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। ইজিপ্টি শহর এবং অ্যালবোপিকটাস গ্রামাঞ্চলের মশা। অ্যালবোপিকটাস মশা বনজঙ্গল, বাঁশের ঝাড়, গাছের বাকলের মতো স্থানে থাকে। এ মশা আগে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না। এখন তারাও ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে। আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীকে কামড় দিয়ে তারাও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে নগরে ডেঙ্গু ছড়ানো ইজিপ্টি মশা যে কোনোভাবে গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এখন দুই প্রজাতির মশাই সমান তালে ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে।এছাড়া বিরূপ পরিবেশেও টিকে থাকার (অভিযোজন) সক্ষমতা তৈরি করছে এসব মশা। ড. গোলাম ছারোয়ারের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সঠিক ‘কন্টাক ট্রেসিং’ (রোগী ও তার অবস্থান শনাক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা) অতি জরুরি। কিন্তু এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে মশা নির্মূলের উদ্যোগ নেই। সে কারণে অন্য কোনো অঞ্চল থেকে আক্রান্ত হয়ে এলেও রোগী যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন, সেই জায়গার তালিকা করা হচ্ছে। এতে আক্রান্ত মশাকে আড়াল করে তাদের বংশবিস্তারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন জানান, সুপেয় পানির সংকটের কারণে বরগুনা জেলায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার প্রচলন আছে। আর এডিস মশার লার্ভা তৈরি হয় জমিয়ে রাখা পরিষ্কার পানিতে। এসব পানির আধারই হলো এডিসের বিস্তারের বড় ক্ষেত্র। বাড়িতে রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের পানি ঢেকে রাখা হয় কাপড় দিয়ে। এটার চর্চা গ্রামে বেশি। এসব কাপড়ে ব্যাপক মাত্রায় লার্ভা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ঢাকার বাইরে বরগুনার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এ পরিস্থিতি যে শুধু বরগুনার গ্রামে, তা এখন বলা যায় না। দেশের অন্যত্রও যদি জরিপ করা হয়, তবে এমন বা এর কাছাকাছি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণ। আওয়ামী লীগের শাসনকালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে ‘ভোট না দিতে পারা’র আক্ষেপও তারা আগামী নির্বাচনে ঘোচাতে চান। কিন্তু সেই নির্বাচন নিয়েই বার বার সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেননি। ১২ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রশ্নে যৌথ ঘোষণা দেন সরকারপ্রধান। সেই ঘোষণার পর বিএনপি নেতারা ধরে নিয়েছিলেন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে; ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হচ্ছে।কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়নি। এরপর থেকেই নির্বাচন কবে হবে, আদৌ হবে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতার একেবারে কাছে পৌঁছে যাওয়া বিএনপি সরকারকে দুষলেও ধৈর্য ধরে নির্বাচন আদায় করতে চাচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।বিএনপি বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে। অন্যদিকে ইসলামপন্থি, বাম দলগুলো ও এনসিপি ভোটের সমানুপাতিক হার (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে। তবে সন্দেহ থাকলেও সব দলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন বিলম্বের ইচ্ছা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক উপদেষ্টা।জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করছে। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির অনেক নেতা গণসংযোগ শুরু করেছেন। তারা নিয়মিত সভা-সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনেরও তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সারাদেশে পদযাত্রা, সমাবেশ-গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। এরই মধ্যে এসেছে নির্বাচন পদ্ধতির বিতর্ক। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থা নাকি সরাসরি ভোট- এ নিয়ে দলগুলো পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল সংসদীয় আসনে সরাসরি ভোটের বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষেই রয়েছে। কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও কিছু বামপন্থি দলও সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিকে সামনে এনেছে।আর এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। একইসঙ্গে দলগুলোর মতপার্থক্য বা পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।নতুন করে সন্দেহ কেন : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে দলটি ও এর মিত্র দলগুলোর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন। যৌথ ঘোষণায় সরকারের পক্ষে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। বলা হয়, সংস্কার ও গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে।এরপর, নির্বাচন নিয়ে সংকট কেটে গেছে এবং আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করেন। তবে লন্ডন বৈঠক থেকে ‘একটি দলের নেতার সঙ্গে সরকার প্রধানের যৌথ ঘোষণা’ নিয়ে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু কোনো দলই বসে নেই। নির্বাচন লক্ষ্য রেখে দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। এরপরও প্রশ্ন উঠছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে কি না? এমনকি নির্বাচন হবে কি না- এ ধরনের আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে।বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা- এসব জেলায় বিএনপির শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। এই জেলাগুলোর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা নির্বাচন প্রশ্নে সংশয় বা সন্দেহের পেছনে সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেন। লন্ডন বৈঠকের পর তিন সপ্তাহ হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো ইঙ্গিত বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের ওই নেতারা। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতাও অনানুষ্ঠানিক আলাপে তৃণমূলের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন। কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সেই সাক্ষাতে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি, কোনো পক্ষ থেকেই।বরং ঘটনার কয়েকদিন পর গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাতে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিটাকে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা বলে বর্ণনা করছেন বিএনপি নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন নিয়ে তাদের সংশয়, সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আগে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে এবং সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে, এটি তারা বিশ্বাস করেন। বিএনপি নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করেন, লন্ডন বৈঠকের কারণেও সরকারের সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগোনোর একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এরপরও নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সব পর্যায়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিএনপির মিত্র দলগুলোও পরিস্থিতিটাকে একইভাবে দেখছে।বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের মধ্যে দোলাচল বা দোটানা আছে। সেকারণে ধোঁয়াশা রাখা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। একজন বিশ্লেষক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষকে এক জায়গায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে এখনো শক্তভাবে দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা যাবে কি না, এ প্রশ্ন থাকে। আর সেজন্যই রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বাড়ছে বলে ওই বিশ্লেষক মনে করেন।আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, সেকারণে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার কথা আসছে। তিনি বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে। এসব দাাবি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এসব দাবি সামনে আনার বিষয়কেও বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের সন্দেহের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিভক্তি : জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি নিয়ে একটা অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে। এর সঙ্গে নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনেই পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি তারা করছেন।আরও কিছু দল এই পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলে সরকার ও একইসঙ্গে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন। তারা বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চিন্তাও করছেন। সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করা ও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা একটি সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তারা অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন।দলটি বলেছে, বিএনপি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা আনুপাতিক ভোটের দাবির পক্ষে নয়, সেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের এ পদ্ধতি তারা কোনোভাবে মেনে নেবেন না। বিশ্লেষকেরা দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে রাজনীতিতে বিভক্তি হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, এর প্রভাবে রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে, যে কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা আসছে ।বর্তমানে প্রভাবশালী দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিও রয়েছে। এই দলটি অবশ্য সংসদের উচ্চকক্ষ বাস্তবায়ন করা হলে, তার ভোট চাইছে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, তারা সংসদের নিম্নকক্ষে চলমান ব্যবস্থায় অর্থাৎ আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটের পক্ষে রয়েছেন।ইসলামি দলগুলো বলছে, আনুপতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়।জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, পিআর পদ্ধতিতে স্বৈরাচার বা কর্তৃত্ববাদী হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সরাসরি ভোটের ব্যবস্থায় কোনো দল ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে যদি সরকার গঠন করে, ওই দল তখন ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া অন্য দলগুলোকে বাদ দিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে। সেজন্য তারা এর পরিবর্তন চান। কিন্তু এখন পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি তোলার পেছনে নির্বাচন প্রলম্বিত করা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যে সব অভিযোগ করছে, সে অভিযোগ মানতে রাজি নন জামায়াত আমির।দলটির আরেক নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, কোনো দল সর্বনিম্ন এক শতাংশ ভোট পেলেই সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পাবে, এই প্রস্তাব তারা করেছেন। ফলে বেশিরভাগ দল প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে বলে তারা মনে করছেন। ফলে ছোট দলগুলোর এই পদ্ধতি আগ্রহ বেশি। কারণ এমন অনেক দলের আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটে জিতে আসা কঠিন। বামপন্থি বিভিন্ন দলও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে।আনুপাতিক পদ্ধতির ভোটে ব্যালটে প্রার্থী থাকবেন না। দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে আসন বণ্টন হবে। তবে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলো বলছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ পদ্ধতি চালু করতে আরও অনেকে সময় প্রয়োজন।সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) বা আনুপাতিক ভোট আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার ভাষায়, এতে স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল দুপুরে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।তিনি বলেন, আজকে নানা কথা সামনে আনা হচ্ছে- আনুপাতিক ভোট। কেন আনুপাতিক ভোট? এটা তো এলাকার নেতৃত্ব গঠনের পথ রুদ্ধ করবে। কেউ যদি দীর্ঘদিন এলাকায় থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নেতা হন, তাকেও তো তখন দলীয় সিদ্ধান্তে বাদ দেওয়া হতে পারে।এতে আরও বেশি স্বৈরশাসনের দিকে যাওয়া হবে। দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে আমরা যদি সেই পিআর পদ্ধতি যাই, এতে নিজেদের মধ্যে একটি বড় ধরনের বিভেদ-বিভাজন তৈরি হবে। ফ্যাসিস্ট এখানে বড় সুযোগ পেয়ে যাবে।সরকারের আলোচনায় নেই পিআর পদ্ধতি : ভোটের পিআর পদ্ধতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলে একাধিক উপদেষ্টা জানান। তারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে যে সব প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের নেই।নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কোনো মীমাংসা সম্ভব হবে, এ ব্যাপার রাজনীতিকদেরই সন্দেহ আছে। এছাড়া রাজনীতিকদেরই অনেকে বলছেন, সরকারের প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বিত পরিকল্পনা না হওয়ায় নানা ইস্যু সামনে আসছে এবং সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আর এ পরিস্থিতিই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ