ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
দুই দিনের সফরে আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এই তথ্য জানান পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন। আর পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বৈঠকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরসূচিও চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২৭-২৮ এপ্রিল ইসহাক দার ঢাকা সফর করবেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
আগামী ফ্রেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কয়েকটি দলের সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি ছিল, আবার একই দিনেও নির্বাচন ও গণভোটের দাবি ছিল আরও কয়েকটি দলের। সরকার সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জুলাই সনদের ওপর হবে গণভোট। সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে ধারণা থাকলেও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ এখনও গণভোট সম্পর্কে কম সচেতন। এমন পরিস্থিতিতে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সংসদ নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করেছে ইসি।নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ পরিস্থিতিতে ইসির মূল চ্যালেঞ্জ হলো-ভোটারদের মধ্যে গণভোটের সচেতনতা সৃষ্টি করা। এজন্য কয়েকটি পরিকল্পনাও নিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-গণভোটবিষয়ক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার, বিটিভি ও অন্যান্য মাধ্যমে তা সম্প্রচার করা। সাংবাদিকদের জন্যও গণভোটবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা করা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়া নিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির টিভিসি, কাউন্টডাউন, স্লোগান, পথনাটক, র্যালি, বিজ্ঞাপন, লিফলেট ও পোস্টার তৈরি করে নির্বাচনি এলাকায় প্রচার করবে ইসি। এছাড়া এআই ও ফেইক নিউজ শনাক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধে বিটিভির মাধ্যমে ফ্ল্যাশ নিউজ প্রচার, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়া নিয়েও ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে।একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আইন না হওয়া পর্যন্ত কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারবে না। আগামী সপ্তাহেই গণভোট আইনটি পাস করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন পাস হলে, সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে। গণভোট হলে চারটি পয়েন্টেই হ্যাঁ/না ভোট হবে।’গণভোট আয়োজনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘গণভোটের বিষয়টি আমাদের মাথায় আনতে হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না। ইসি আশাবাদী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীরা সহযোগিতা করলে সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।’সরকার থেকে গণভোটের আনুষ্ঠানিক চিঠির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘একটা চিঠি এসেছে গত বৃহস্পতিবার। সেখানে বলা হয়েছে যে, গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় কথাটা বলা হয়েছে, গণভোট এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচন একই দিন হবে।’নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলেও কার্যকর প্রস্তুতি, লোকবল বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা সম্ভব।’জেসমিন টুলী বলেন, ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাড়ানোর পাশাপাশি গণভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভালো প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালের গণভোটে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, ভোটকক্ষ বাড়িয়ে দিলে একইদিনে দুটি ভোট সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যায়। কেন্দ্র না বাড়ালেও চলবে। তবে ব্যালট গণনায় দুই সেট লোকবল লাগবে-একটি সংসদ নির্বাচনের ব্যালট গণনা করবে, অন্যটি গণভোটের হ্যাঁ-না ব্যালট গণনা করবে।’গণভোটের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণভোটের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার কীভাবে ইস্যু করতে হবে, কাউন্টিং কর্মকর্তারা কীভাবে গণনা করবেন-এসব নিয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের যখন ট্রেনিং দেওয়া হবে, তখন একই সময় আরও দুটি সেশন বাড়িয়ে গণভোটের প্রশিক্ষণ করা যেতে পারে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটেও দুটি ব্যালট ইস্যু করতে হবে। এগুলো চ্যালেঞ্জ নয়; বরং দায়িত্বের অংশ হিসেবেই করতে হবে।’নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭, মহিলা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪।ছাব্বিশ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় সরকার। সেদিন গণভোটও হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জানান। ইতোমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোটের তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট এর গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা থেকে ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরশাসনের ‘চির অবসান’। আর এজন্য বিদ্যমান সরকারব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠোমো এবং পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। অন্যথায় দেশে আবার ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারব্যবস্থা ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। এজন্য রাষ্ট্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর প্রচলিতব্যবস্থার পরিবর্তনে সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে গণকল্যাণমুখী, গণতান্ত্রিক এবং সর্বস্তরে জবাবিদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। চলমান সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়নের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র বলেছে, ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার ‘জুলাই বিপ্লব’ এর মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার অবসান হলেও ভবিষ্যতে যাতে আর দেশে ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারব্যবস্থা ফিরে আসতে না পারে সেজন্য ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে ‘সংস্কার’ বাস্তবায়নের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। আর জুলাই অভ্যুত্থান কিন্তু সংবিধান বাতিলের কথা বলেনি, বরং রাষ্ট্র যেন জনগণের ওপর নির্যাতন না করতে পারে এবং মানুষের অধিকার হরণ করতে না তার নিশ্চয়তা বিধানের বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ বিষয়টিতে জনগণের সমর্থনের জন্য ‘গণভোট’ আয়োজনের ব্যবস্থা করছে। এজন্য আইনও করা হচ্ছে শিগগির।এছাড়া গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে ফেরাতে প্রায় দেড় দশক পর সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় একটি গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও গণভোটের মাধ্যমে দেশের মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা করে একটি বাংলাদেশকে একটি ‘দুর্বৃত্ত এবং দুর্বৃত্তায়নমুক্ত’ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। যাতে রাষ্ট্র এবং সরকরিব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। যা প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনে প্রায় ‘ধূলিস্যাৎ’ হয়ে গেছে।এছাড়া প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী সংস্কারের জন্য বিচার বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর রাষ্ট্রকে সঠিক জায়গায় রাখতে এবং জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের জন্য সংবিধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ- আর বিচার বিভাগ হচ্ছে বৈধতার ‘বাতিঘর’। বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে সংস্কার বাস্তবায়ন কার্যক্রম কঠিন হবে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের মানুষের স্বার্থে বাংলাদেশের পুনর্গঠনে ‘সঠিক পথ’ বেছে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থার পুনর্গঠনে সরকার ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। আর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এরপর ওই আদেশ ও ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে হবে গণভোট। গণভোটে হ্যাঁ জয়ী হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। কমিনের সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে সংসদ সংবিধান সংস্কারে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।জানা গেছে, জুলাই সনদ বাস্থবায়ন ও গণভোটের বিষয়টি নিয়ে এখনও দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না আসায় জনমনেও শঙ্কা বিরাজ করছে। আর নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিষয়টির সম্মানজনক সুরাহার জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও মানুষের স্বার্থে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একমত না হতে পারলে জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশ’কে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নসম্পন্ন করার বিষয়টিকে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে ছাত্র-জনতা হত্যা নির্যাতন ও গুমের বিরুদ্ধে সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরামর্শক্রমে, রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি আদেশও জারি করেছেন। এই আদেশ জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন এবং পুনর্গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের সকল রাজনৈতিক দলের উচিত দেশের স্বার্থে ‘সঠিক পথ’ বেছে নেওয়া।তিনি বলেন, পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ, সমৃদ্ধি, আত্মবিশ্বাস এবং মর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব অঙ্গনে স্বমহিমায় আবির্ভূত হবে। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার ও রাষ্ট্রপুনর্গঠনে ইস্পাতসম ঐক্য জরুরি।সূত্র আরো জানায়, ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত জুলাই সনদে সংবিধানবিষয়ক ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিছু প্রস্তাবে সামান্য ভিন্নমত থাকলেও প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রে মতভিন্নতা খুব বেশি না। কোনো কোনো দল সংবিধান সংস্কার চেয়েছে, অন্যরা আইনের মাধ্যমে তা করতে চেয়েছে। কিন্তু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, নীতি ও লক্ষ্য নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক বা বড়ধরনের মতভেদ না থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য কাজটি সম্ভব হয়েছে।জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকে মূল দলিল হিসেবে মেনে নেওয়ায় সরকারের পক্ষে সহজ হয়েছে।উল্লেখ্য, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আদেশে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান সংযোজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সনদের সংবিধানবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর গণভোট অনুষ্ঠান এবং পরে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত।এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট অপশাসন পরবর্তী বাংলাদেশ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য বিচার বিভাগকে জনগণের স্বার্থ রক্ষার নীতিতে স্থির থাকা জরুরি। জুলাই বিপ্লব সংবিধান বাতিলের কথা বলেনি। বরং জনজীবনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অধিকার রক্ষার বিষয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের ব্যাকরণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতি বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কিছু নয়। বরং আইনের শাসন হলো- সাংবিধানিক ব্যবস্থার একটি নৈতিক পাঠ, যা ন্যায্যতা, যুক্তি এবং জনগণের সম্মতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এটি অধিকারের মাধ্যমে জনগণের মর্যাদা প্রদান করে। গত শনিবার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন, বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।বিষেশজ্ঞদের মতে, গত দেড় দশকের ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে’ দেশে উন্নয়নের নামে যে ‘বয়ান’ তৈরি করা হয়েছিল তাতে কিছুসংখ্যক অসৎ রাজনীতিবিদ, দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ী ও আমলা- এই তিন গোষ্ঠীর একটি ‘ওলেগাকি’ চক্র বিশেষভাবে লাভবান হয়েছে। এই ‘চক্রটি’ রাষ্ট্র ও ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রশ্রয়ে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুরোপুরি হরণ করেছে, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক ব্যবস্থার ‘লালবাতি’ জালিয়েছে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প-বিশেষ করে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, টেলিকমসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের চক্রের হাতে নিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে এবং বিদেশে পাচার করে দেশে অর্থনীতিকে ‘বেহাল’ অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে। এ অবস্থার অবসানে এবং ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায়’ এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য দেশের স্বার্থে খুব জরুরি বলে মনে করেন তারা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, মজলুম জালিম হচ্ছে, ফ্যাসিবাদবিরোধীরা ফ্যাসিবাদী হচ্ছে।রোববার (২৩ নভেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।মাহফুজ আলম তার পোস্টে বলেন, মজলুম জালিম হচ্ছে, ফ্যাসিবাদবিরোধীরা ফ্যাসিবাদী হচ্ছে। পুরা পরিস্থিতি হতাশা ও ক্ষুব্ধতার।তিনি বলেন, জুলুমকে ইনসাফ দিয়ে, সহিংসতাকে দরদ দিয়ে প্রতিস্থাপন না করে যারা নতুন মাত্রার জুলুম ও সহিংসতা করে বেড়াচ্ছেন, তারা ফ্যসিবাদের পুনর্জাগরণের জন্য দায়ী থাকবেন। সমাজে-রাষ্ট্রে চিন্তা ও আচারের বৈচিত্র্যকে বাধাগ্রস্ত করলে ফ্যাসিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হবে।তিনি আরো বলেন, তাসাউফপন্থী, ফকির, বাউলসহ সব ভিন্নমতাবলম্বীর ওপর সব ধরনের জুলুম বন্ধ হোক।ভোরের আকাশ/এসএইচ
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকার উন্নয়ন ধারণায় এখনই মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি। অতিরিক্ত কংক্রিটনির্ভর উন্নয়ন ঢাকাকে অনিরাপদ ও দুর্ব্যবস্থাপনায় ঠেলে দিয়েছে।রোববার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর কারিগরি সহায়তায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বাস্তবায়নাধীন ‘প্রজেক্ট ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি এন্ড গাইডলাইনস ফর ট্রানজিট-অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট এলং ম্যাস ট্রানজিট করিডোরস’-এর চতুর্থ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।উপদেষ্টা বলেন, কার্যকর সমন্বয়, ক্ষমতায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।ঢাকার নাজুক গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী অনেক বাস রাস্তায় চলছে। তাই যানবাহন ও পরিবহন পরিচালনা ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সম্ভব নয়। স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা এখন অপরিহার্য বিষয়।তিনি আরও বলেন, ট্রানজিট-অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) স্মার্ট পরিবহন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে, তবে পরিবেশগত অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। মেট্রো স্টেশন বা বাণিজ্যিক স্থাপনার জন্য উন্মুক্ত স্থান ও পরিবেশগত বাফার নষ্ট করাও ঠিক হবে না।পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে ধীরগতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার এগুচ্ছে না। শহরে সবুজায়ন উদ্যোগে কমিউনিটির অংশগ্রহণের ওপরও জোর দেন। টিওডি উদ্যোগের মাধ্যমে নগরে আরও উন্মুক্ত স্থান, পার্ক ও সবুজায়ন সৃষ্টির সম্ভাবনায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন রিজওয়ানা হাসান। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বাজার নির্মাণে সতর্কতা বজায় রাখারও পরামর্শ দেন।সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম; ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ এবং জাইকা বাংলাদেশ-এর প্রধান প্রতিনিধি মি. ইচিগুচি তমহিদে।সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।ভোরের আকাশ/এসএইচ