মাহমুদ সালেহীন খান
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১৫ এএম
ছবি- সংগৃহীত
আগামী ফ্রেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কয়েকটি দলের সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি ছিল, আবার একই দিনেও নির্বাচন ও গণভোটের দাবি ছিল আরও কয়েকটি দলের। সরকার সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জুলাই সনদের ওপর হবে গণভোট। সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে ধারণা থাকলেও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ এখনও গণভোট সম্পর্কে কম সচেতন। এমন পরিস্থিতিতে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সংসদ নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ পরিস্থিতিতে ইসির মূল চ্যালেঞ্জ হলো-ভোটারদের মধ্যে গণভোটের সচেতনতা সৃষ্টি করা। এজন্য কয়েকটি পরিকল্পনাও নিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-গণভোটবিষয়ক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার, বিটিভি ও অন্যান্য মাধ্যমে তা সম্প্রচার করা।
সাংবাদিকদের জন্যও গণভোটবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা করা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়া নিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির টিভিসি, কাউন্টডাউন, স্লোগান, পথনাটক, র্যালি, বিজ্ঞাপন, লিফলেট ও পোস্টার তৈরি করে নির্বাচনি এলাকায় প্রচার করবে ইসি। এছাড়া এআই ও ফেইক নিউজ শনাক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধে বিটিভির মাধ্যমে ফ্ল্যাশ নিউজ প্রচার, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়া নিয়েও ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে।
একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আইন না হওয়া পর্যন্ত কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারবে না। আগামী সপ্তাহেই গণভোট আইনটি পাস করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন পাস হলে, সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে। গণভোট হলে চারটি পয়েন্টেই হ্যাঁ/না ভোট হবে।’
গণভোট আয়োজনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘গণভোটের বিষয়টি আমাদের মাথায় আনতে হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না। ইসি আশাবাদী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীরা সহযোগিতা করলে সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।’
সরকার থেকে গণভোটের আনুষ্ঠানিক চিঠির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘একটা চিঠি এসেছে গত বৃহস্পতিবার। সেখানে বলা হয়েছে যে, গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় কথাটা বলা হয়েছে, গণভোট এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচন একই দিন হবে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলেও কার্যকর প্রস্তুতি, লোকবল বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা সম্ভব।’
জেসমিন টুলী বলেন, ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাড়ানোর পাশাপাশি গণভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভালো প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালের গণভোটে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, ভোটকক্ষ বাড়িয়ে দিলে একইদিনে দুটি ভোট সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যায়। কেন্দ্র না বাড়ালেও চলবে। তবে ব্যালট গণনায় দুই সেট লোকবল লাগবে-একটি সংসদ নির্বাচনের ব্যালট গণনা করবে, অন্যটি গণভোটের হ্যাঁ-না ব্যালট গণনা করবে।’
গণভোটের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণভোটের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার কীভাবে ইস্যু করতে হবে, কাউন্টিং কর্মকর্তারা কীভাবে গণনা করবেন-এসব নিয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের যখন ট্রেনিং দেওয়া হবে, তখন একই সময় আরও দুটি সেশন বাড়িয়ে গণভোটের প্রশিক্ষণ করা যেতে পারে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটেও দুটি ব্যালট ইস্যু করতে হবে। এগুলো চ্যালেঞ্জ নয়; বরং দায়িত্বের অংশ হিসেবেই করতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭, মহিলা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪।
ছাব্বিশ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় সরকার। সেদিন গণভোটও হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জানান। ইতোমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোটের তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ