আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না, সিদ্ধান্ত জনগণের: মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে। বিএনপির হিসেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নই।
শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্র দ্য কার্টার সেন্টারের’ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরা সম্ভব। জনগণের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হতে পারে একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনটি যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে ড. মঈন খান বলেন, তাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, তারা কি আদৌ নির্বাচনে আসবে? আওয়ামী লীগের একজনও কি গত ১৫ বছরে জনগণকে জিম্মি করার জন্য কোনো ক্ষমা চেয়েছে?
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
এর আগে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র দ্য কার্টার সেন্টার নামে একটি সংগঠনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। পরবর্তী সময়ে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কাজেই ভোটের মাঠে থাকা সব রাজনৈতিক দলের দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের ভোটে-এমনটাই ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাবনায়, জাতীয় নির্বাচনে জয়-পরাজযের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ‘ভোটব্যাংক’ একটা বড় ভূমিকা রাখবে। কাজেই নৌকার সমর্থক ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দলের মাঠপর্যায়ে জোর তৎপরতাও দৃশ্যমান হচ্ছে। ভোটই জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পরে আওয়ামী ভোট। এ কারণে আওয়ামী ভোটারদের কাছে টানতে বিভিন্ন কৌশলী প্রচার-প্রচারণার চালাচ্ছে দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সারাদেশের সকল সংসদীয় এলাকায় ক্রমেই জোরদার হচ্ছে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী সভা-সমাবেশ। চলছে অভিনব কৌশলে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। বিরামহীনভাবে দৌড়ঝাঁপ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দিন যত যাচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারে তারা ততই সরব হচ্ছেনÑ মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।নির্বাচনের মাঠে রয়েছে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ জাতীয় দল, নাগরিক ঐক্যে ও গণসংহতি আন্দোলন, হেফাজত ইসলাম, গণতন্ত্র মঞ্চের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি, এনসিপি ও এবি পাটি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি ও বাম ধারার ১২টি রাজনৈতিক সংগঠনসহ নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত দলগুলো অংশ নিচ্ছে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এই ভোটে। এজন্য দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে নৌকা সমর্থকদের নিরাপত্তার আশ্বাস, মামলা, হামলা বা হয়রানি থেকে রক্ষারও নানারকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।সরেজমিনের চিত্র থেকে জানা গেছে, আওয়ামী কর্মী-সমর্থকদের ভোটার কাছে টানতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থীরা এখন নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন। দলীয় কর্মসূচিসহ সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাটবাজারে গিয়ে তারা সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, দোয়া চাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটের প্রচারে মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় সুবিধাজনক স্থানগুলোতে তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড সাঁটিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এছাড়া, রাজপথ, গলিপথ, হাটবাজার ও পাড়া-মহল্লায় লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে জোরেশোরে প্রচারণা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব সংবলিত লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত প্রার্থীরা তাদের দলের ৪১ দফা ইশতেহারসহ নির্বাচিত হলে এলাকার কি কি উন্নয়ন এবং কি কি সমস্যার সমাধান করা হবে, তা উল্লেখ করে লিফলেট বিতরণ করে দাঁড়িপাল্লায় ভোট চাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কিছু দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ কৌশলে ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানায়, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কদর বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ আওয়ামী কর্মী-সমর্থক ভোটাদের। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের দল ভারী করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে টানছেন এবং গণসংযোগকালে তাদেরও সঙ্গে রাখছেন। এভাবে কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় শোডাউন করে জনদৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের ভোটারদের আকৃষ্ট করার বিষয়ে দলীয় কোনো অবস্থান নেই। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নেতারা নৌকার ভোট গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখছেন। বিএনপির প্রার্থীদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলের সাথে তাদের রাজনীতি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে সকলকে নিয়ে।আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা কোনো পার্টিকুলার ধর্ম বা গোষ্ঠীর জন্য রাজনীতি করছি না। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য। কোনো গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তো কোনো রাজনীতি হইতে পারে না। এটাতো ডিভিশন হবে। আমরা তো বলছি রাজনীতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে চাই বললেন তিনি।আওয়ামী লীগ ভোট থেকে ছিটকে পড়ায় দলটির কর্মী-সমর্থকদের ভোট বিএনপি পক্ষে আসবে কী না-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছি। আগেও এলাকার প্রতিটি মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষতেও থাকার ইচ্ছা আছে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় জামায়াত এবং বিএনপির যে সমীকরণ, সেখানে আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগও। বিশেষত : আওয়ামী লীগের ভোটাররা কাকে সমর্থন করবেন তার উপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু। গণতন্ত্রের প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটাররা বিএনপিকে সাপোর্ট করবে মনে করছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। সাবেক বিরোধী দলের চিফ হুইপ বলেন, বিএনপি একটা গণতান্ত্রিক দল। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে সব দল রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। তিনি আরও বলেন, কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক হয়তো ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলাম কখনো কারো শত্রু নয়। সবার সঙ্গেই সখ্যতা বজায় রেখে চলতে চায়। দলটির কয়েকজন নেতা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার পলায়নের পরে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। জামায়াত মনে করে তারা কারো জন্য ক্ষতিকারক নয়। কাজেই আওয়ামী সমর্থকদের ভোট প্রত্যাশা করছে জামায়াত।ঢাকা-১৮ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত গণসংযোগ করছি। নির্বাচিত হলে কি কি করতে চাই তা লিফলেট বিতরণ করে প্রচার করছি। ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা নিয়মিত নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। আমি কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে ঘন ঘন এলাকায় যাচ্ছি।রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ভোটের মাঠে দলটির অস্থিত্বহীনতায় পদধারী নেতাদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্যক্তি সম্পর্কের কারণে পদহীন কর্মী-সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, আওয়ামী কর্মী-সমর্থকরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সখ্যতা গড়বে এটাই স্বাভাবিক। কেউ আবার ক্ষমতায় আসতে পারে এমন দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে বা গোপনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সম্পর্ক রেখে চললেও ভোটের বেলায় দলটির গোপন নিদের্শনা মতে ভোট দিবে। গোপনে ভোট দিবে, কাকে দিবে, কোন দলকে, তা জানার সুযোগ থাকছে না। সম্পর্ক রেখে চললেও আওয়ামী সমর্থকদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ থাকছে অনেক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক, রাজনীতি বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের একটা বিশাল অংকের ভোট রয়েছে। এই ভোট যে দিকে যাবে, সেই দল ভোটের মাঠে ভালো করবে মনে করছেন তিনি।ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আওয়ামী সমর্থকরা কোন জায়গায় ভোট দিবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং এমনকি জামায়াত ইসলামীও আওয়ামী লীগের কর্ম-সমর্থকদের ভোট পাবে। বিএনপি আওয়ামী লীগের ভোট টানার চেষ্টায় কৌশল নিয়েছে। আমি মনে করি, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের গভীর সখ্যতা থাকায় দলটির কর্মী-সমর্থকরা জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জামায়াতও চেষ্টা করছে। জামায়াত মাইনরিটির কমিউনিটির মধ্যে কমিটিও করেছে। জামায়াত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী সমর্থকদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে যে যাই বলুক, নির্বাচনে হয়তো আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না, কিন্তু তাদের ভোট দিতে তো কোনো আইন করা হয়নি। যেহেতু আইনত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ভোট দানে বাধা নেই, তাই সকলেরই দেখার আগ্রহ থাকবে, তাদের ভোট কোথায় যায়, সেটা নিয়ে। সরেজমিনের চিত্রে জানা গেছে, জনসমর্থন এবং ভোটারের দিক থেকে বাংলাদেশে গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটা শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।জাতীয় নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, এখানে তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়। নৌকার বিপরীতের প্রার্থীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এই গোপালগঞ্জে তিনটি আসনে এবার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আজমল হোসেন সরদার। পেশায় আইনজীবী এই প্রার্থী ১৯৯৬ সালে গোপালগঞ্জ-২ থেকে সবশেষ নির্বাচন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে না ধরে নিয়েই গোপালগঞ্জে নৌকার সমর্থকদের ভোট নিজের পক্ষে নিতে কাজ করছেন জামায়াতে ইসলামীর এই প্রার্থী। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ককে তিনি কাজে লাগাতে চাইছেন। গোপালগঞ্জে জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে এবং অজ্ঞাত মামলার নিরীহ কেউ আসামি হলে ছাড়াতে সহায়তা করছেন জামায়াত নেতারা। মামলা থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক ব্যক্তির নাম প্রত্যাহারের বিষয়ে তৎপরতার কথা জানান আজমল হোসেন সরদার।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে বা আইনগত কারণে তারা নির্বাচনে আসতে পারছে না। কিন্তু তাদের ভোটাররা তো রয়ে গেছে। আমরা বলেছি যারা বড় বড় অপরাধে অপরাধী নয়, দাগি আসামি নয়। যাদের নামে কোনো মামলা নাই। যাদের মানুষ সন্ত্রাসী দাগী আসামি হিসেবে চেনে না। সিম্পল মানুষ একটা দল করে। তার তো করার অধিকার আছে। আওয়ামী লীগের শাসনের কেন্দ্রে থাকা, ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা নেতাদের যত অপরাধ তার জন্য সাধারণ আওয়ামী লীগের যারা ভোটার ছিলেন তারা সে অপরাধে অপরাধী নন বললেন তিনি।জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতো। তার মধ্যে একটা বড় অংশ আছে সাধারণ ভোটার। এখন যেহেতু তারা নেই, তাদেরকে এখন আমরা আওয়ামী লীগ ভাবি না। তারা এখন দেখবে কোন রাজনৈতিক দল ইশতেহারে কী বলছে। কার কাছে আমরা নিরাপদ। কাদের চরিত্র সৎ, কারা দুর্নীতিবাজ না, চাঁদাবাজ না। কার কাছে তাদের জানমাল সম্মত ইজ্জত নিরাপদ। যার মধ্যে হিন্দু ভোটারদের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এবার নির্বাচনে হিন্দু ভোট নিয়েও জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা দৃশ্যমান হয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল তার নিজের নির্বাচনী এলাকায়ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে বিশাল সমাবেশ করেছেন। এ বিষয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ নেই মানে তাদের ভোটাররা আছে। কিন্তু সেই ভোটারদের মতামত কিন্তু বদলে যাবে। আমরা কাউকে জোর করবো না আমরা খুব সিনসিয়ারলি মানুষকে ভালোবেসে আমাদের আদর্শ উদ্দেশ্য লক্ষ্য প্রচার করবো।অন্যদিকে, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকে নজর আছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও। এবার গোপালগঞ্জের তিনটি আসনই ধানের শীষের প্রার্থীরা জয়ী হবেন- এমন আত্মবিশ্বাস তাদের আছে। বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নে গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনের প্রার্থী কে এম বাবর। তিনি বলন, গোপালগঞ্জের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে ধানের শীষকে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। এবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নির্বাচনে থাকবে না। নির্বাচনে না থাকার কারণে এবার সাধারণ মানুষ একাত্তর সালের পক্ষের শক্তি ধানের শীষকে ভোট দেবে প্রত্যাশা করছেন তিনি। এছাড়া দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা তুলে ধরে কে এম বাবর বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিশোধের রাজনীতি করবে না বিএনপি, এমন প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন গোপালগঞ্জের ভোটারদের। যদি গোপালগঞ্জ দুই আসনের মানুষ আমাদের ভোট দেয়, আমরা কোনো প্রতিশোধ, কোনো মিথ্যা মামলা, হয়রানি করবো না। কারণ আমাদের নেতা তারেক রহমান বলে দিয়েছেন যে ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে।গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীর তৎপরতা দেখা গেলেও এনসিপির কোনো প্রার্থী এখনো সেভাবে তৎপর নেই। তবে গোপালগঞ্জের অন্য দুটি আসনে এনসিপির প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রার্থীদের তৎপরতার খবর জানা যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে নৌকার সমর্থক এবং ভোটব্যাংক নিয়ে আলাদা মূল্যায়ন রয়েছে।এ প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, নৌকার ‘ভোটব্যাংক’ সেভাবে নেই, বর্তমানে এটি কমবেশি দশ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে জামায়াত ও বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন, তবে এনসিপির নেতাদের সেরকম কোনো বক্তব্য নেই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ভোটব্যাংক এককভাবে কোনো একটা দল বা কোনো একটা কৌশলগত জায়গা থেকে যাবে, সেটা আমরা এখন আর মনে করি না। এটা প্রার্থী স্থান এবং ওই এলাকায় বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপির যে প্রার্থীরা থাকবেন তাদের ওপর ডিপেন্ড করবে। গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ করে ছাত্র তরুণদের মধ্যে একটা বড় ট্রান্সফরমেশন হয়েছে বলে মনে করে এনসিপি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।রোববার (২৩ নভেম্বর) রাত ৮টায় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান।তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড আছে তাদের পরামর্শক্রমে কিছু পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। উনি কেবিনে আছেন। টেস্টের রিপোর্টগুলো নিয়ে বোর্ডের পর্যালোচনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।এর আগে, সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। বিগত কয়েক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন বেগম খালেদা জিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে তার নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজন হচ্ছে বলেও জানা গেছে।উল্লেখ্য, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তার পরবর্তী চিকিৎসা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছি না। তবে একই দিনে গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপার সরকারকে দেখতে হবে।রোববার (২৩ নভেম্বর) ঢাকায় কমনওয়েলথের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জামায়াতের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।গোলাম পরওয়ার বলেন, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে টেকনিক্যাল সাপোর্ট তারা দেবেন এমন কথা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, আমরাও দেখছি না যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে। আবার আমরা ভাগ বাটোয়ারার রাজনীতি করি না।গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে, সঙ্গে এসেছে সংস্কার ইস্যুও এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে আনার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বাংলাদেশে সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে রাতে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।রোববার (২৩ নভেম্বর) রাত ৮টায় রাজধানীর শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিএনপির মিড়িয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান।দলীয় সূত্র জানা গেছে, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিদ্যুৎ আমদানি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।বিএনপির পক্ষে থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ