মো. ফিরোজ, বাউফল (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০২:০৩ পিএম
করলা চাষে ভাগ্য বদল মহিউদ্দিনের
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের পাতারপোল গ্রামের যুবক মো. মহিউদ্দিন টিপু (৩০) এখন কৃষিক্ষেত্রে একটি পরিচিত নাম। কৃষির প্রতি অদম্য আগ্রহ ও সংগ্রামের গল্পে মোড়ানো তার জীবন অনেক তরুণের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। মহিউদ্দিন এক সময় সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় প্রতারিত হন। এরপর রাজধানী ঢাকায় একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন, কিন্তু সেখানেও মেলেনি স্থায়িত্ব বা সম্মান। তখন স্ত্রী মোসাম্মাত ফাতেমার পরামর্শে ফিরে আসেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নেন কৃষিকাজে আত্মনিয়োগের।
প্রথমে ছোট পরিসরে করলা চাষ শুরু করেন মহিউদ্দিন। বর্তমানে তার দুটি খণ্ড জমিতে রয়েছে প্রায় ১২০০টি করলা গাছ। প্রতি সপ্তাহে তিনি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেন, মাসে যার পরিমাণ এক লাখ টাকারও বেশি। করলার পাশাপাশি তিনি চাষ করছেন লাউ, চিচিঙ্গা, টমেটো ও লাল শাকসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজি। এতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার। ভবিষ্যতে মাছ চাষের পরিকল্পনাও রয়েছে তার। করলার বাজারদর সম্পর্কে তিনি জানান, বাজারে চাহিদা কম থাকলে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়, আর চাহিদা বেশি থাকলে ৮০ টাকায় করলা বিক্রি করেন। স্থানীয় পাইকারদের কাছেই তার উৎপাদিত করলার বড় অংশ সরবরাহ করা হয়।
সফল কৃষক মহিউদ্দিন টিপু বলেন, আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তিনি পঙ্গু হয়ে যান। আমি বড় সন্তান হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে। আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই রাস্তার পাশে সবজি লাগিয়েছি, ধান চাষ করেছি। আমার একমাত্র বোনকে নিজের খরচে বিয়ে দিয়েছি। এরপর আমি এসএসসি পাশ করি।
হঠাৎ করে সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখে প্রতারকের হাতে প্রতারিত হই। পরে ঢাকায় গিয়ে একটি বায়িং হাউজে চাকরি নিই। কিন্তু যে টাকা পেতাম, তাতে চলত না। একসময় পকেটে এক টাকাও থাকত না। তখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসি। ছোটবেলা থেকে কৃষির অভিজ্ঞতা থাকায় ২ শতাংশ জমিতে শুরু করি। সাফল্য পেয়ে পরে আমার চাচা জসিম খান ১২০ শতাংশ জমি লিজ দেন। এখন সেখানেই চাষাবাদ করি। এখন আমরা ভালো আছি। প্রতি সপ্তাহে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করি, মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয়।
বাজার সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে মাল বিক্রি করতে গেলে সিন্ডিকেটের শিকার হতে হয়। কেউ একজন দাম বললে অন্য পাইকাররা আর দাম বাড়ায় না। বাধ্য হয়ে কম দামেই মাল বিক্রি করতে হয়। পরে তারা অল্প দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে।
মহিউদ্দিন টিপুর স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, শুরুর দিকে আমাদের জমির পরিমাণ ও পুঁজি কম ছিল। আমি টিউশনি করতাম ও সেলাই মেশিনে কাজ করতাম। সেই আয় থেকেই করলার বীজ, সার ও ওষুধ কিনতাম এবং সংসার চালাতাম। এখন আল্লাহর রহমতে আমরা ভালো আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মিলন বলেন, বগা ইউনিয়নের উদ্যোক্তা কৃষক মহিউদ্দিন বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় করলা চাষ শুরু করেন। আমরা তাকে ৫০ শতক জমির জন্য উন্নত মানের করলা বীজ, সার, স্প্রে মেশিন, জাজরি ও মালচিং সরবরাহ করি। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তিনি ৫০ শতক জমি থেকে ৩ লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে তার লাভ ২ লাখ টাকার বেশি। তার দেখাদেখি আশপাশের অনেক কৃষক উচ্চমূল্যের সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ