মো. মাসুদ রানা, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫ ০৭:১০ পিএম
সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে দাপট ব্যাটারিচালিত যানবাহনের
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে অবাধে চলছে ব্যাটারি-চালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিম, ভটভটিসহ সিএনজিচালিত যান ধীরগতির যানবাহন। যার কারণে প্রতিনিয়তেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানি। অবৈধ এই তিন চাকার যানবাহনের দৌরত্ম্যে মহাসড়ক দিয়ে দূরপাল্লার বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য নিয়মিত ভারী যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।
এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে গত দেড় মাসে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা এলাকায় ১৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১২ জন, আহত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক। তবে এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা ও যমুনা সেতু সূত্রে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়ক দিয়ে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহনের নিয়মিত চলাচল করে এরমধ্যে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুপশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার আওয়াতাধীনে মহাসড়ক রয়েছে ১০৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে হাটিকুমরুল থেকে যমুনা সেতু টোল প্লাজা ২২ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল থেকে নাটোর টোল প্লাজা ২৮ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল থেকে চান্দাইকোনা ২১ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল থেকে বাঘাবাড়ী ঘাট ৩৪ কিলোমিটার। যমুনা সেতু টোল প্লাজা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত এই সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭-১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
এই মহাসড়কগুলোতে বিনা বাধায় চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব বাহনে নেই কোনো ব্রেক, সিগনাল লাইট, লুকিং গ্লাস। যার কারণে বিপাকে পড়েন দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকেরা। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে।
হাটিকুমরুল থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের চালক মঈনুল হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও নসিমন-করিমন, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। একটি বড় গাড়ি ওভারট্রেক করতে গেলে তারা পেছনে তাকায় না। গাড়িগুলোতে কোনো ব্রেক, সিগনাল লাইট, লুকিং গ্লাস নাই। যার কারণে প্রায়ই সেগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ঢাকাগামী শ্যামলি পরিবহনের চালক মনোয়ার শেখ ভোরের আকাশকে বলেন, এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে আমাদের বড় গাড়ি চলাচলের খুব সমস্যা হচ্ছে। চালকরা দক্ষ না, এদের প্রশিক্ষণ নেই। এদের অধিকাংশ ধানকাটা শ্রমিক। এক বেলা জমিতে কাজ করে অন্য বেলায় অবৈধ সিএনজি, নসিমন-করিমন নিয়ে সড়কে আসে। এদের কারণে ভারী যানবাহন সড়কে ব্রেক দিতে হয়। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক চান মিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, অটোরিকশা নিয়ে মহাসড়কে ওঠার অনুমতি নেই আমাদের। তবে কী করবো? যাত্রী পেলে মহাসড়কে ওঠে যাই। আমরা ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যায়।
সিএনজি চালক রিফাত হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, আমি সকাল বেলা কৃষি কাজ করি আর বিকেল বেলা সিএনজি চালায়। গরিব মানুষ তাই দুমুঠো খাবারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে গাড়ি চালায়। এখান দিয়ে গাড়ি না চালালে কোথায় দিয়ে চালাবো?
নসিমন চালক রফিকুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, নসিমন গাড়িতে মালামাল ও যাত্রী বহন করা যায়। কৃষি পণ্য, হাটঘাটে গরু পরিবহন করা হয়। গতি মোটামুটি ভালই। তবে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সব জায়গায় তারা যেতে পারে না।
এবিষয়ে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ ভোরের আকাশকে বলেন, মহাসড়কে যেন অবৈধ যানবাহন চলাচল না করে তার জন্য হাইওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়তই মহাসড়কে অভিযান চালাচ্ছি। চালতদের সতর্ক করে দিচ্ছি। চালক-মালিকসহ আমরা সবাই সচেতন হলেই সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
ভোরের আকাশ/এসআই