তারেক অপু, আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫ ০৬:২২ এএম
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আশুগঞ্জে খানাখন্দ, যানজটে নাকাল যাত্রী–চালকরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুরবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইলের শাহবাজপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় খানাখন্দের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
দুদিনের টানা বর্ষণে রাস্তায় গর্তগুলো আরও গভীর হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া যানজট শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও স্থায়ী ছিল।
গাড়ি একেবারে থেমে থাকার মতো অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় অনেকে যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। কোথাও কোথাও গাড়ির চাকা গর্তে আটকে পড়ছে, তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
মামুন পরিবহনের চালক মো. লিয়াকত বলেন, “রাত ২টায় শাহবাজপুর থেকে রওনা দিয়েছিলাম, সকাল ১০টা পর্যন্ত মাত্র ৫ কিলোমিটার পেরিয়েছি। রাস্তার ভাঙাচোরা এমন পর্যায়ে গেছে যে, যেকোনো সময় গাড়ি উল্টে যেতে পারে।”
ট্রাকচালক ভুষণ দেব জানান, “রাত ১০টায় আশুগঞ্জ এলাকায় যানজটে পড়েছি। ধীরে ধীরে জ্যাম ছাড়ছে। প্রায়ই এমন সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তা দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।”
এক যাত্রী মো. শামীম বলেন, “গতকাল রাতেই রওনা দিয়েছিলাম ঢাকার উদ্দেশে। আজ আমার কৃষি উপসহকারী পদে পরীক্ষা ছিল। কিন্তু যানজটে আটকে থেকে পরীক্ষা দিতে পারিনি। দুই ঘণ্টা ধরে রাস্তায় হেঁটে চলেছি।”
নারী যাত্রী মিরা বেগম বলেন, “পুরুষ যাত্রীরা হেঁটে চলে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা মহিলা যাত্রীরা গাড়ির ভেতরে বসে অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছি। রাত থেকে জ্যামে বসে আছি, কেউ কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।”
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, “আমি আশুগঞ্জ গোলচত্বরে অবস্থান করছি। দুই দিক থেকেই যান চলাচল ধীরগতিতে চলছে। রাস্তার বেহাল অবস্থার পাশাপাশি ইজিবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।”
নির্মাণাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আওতায় থাকা প্যাকেজ-১ এর অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নকাজ বিলম্বে চলছে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, “প্যাকেজ-১ এ কিছু কারিগরি পরিবর্তন এসেছে এবং ভারত সরকারের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় কাজ থেমে ছিল। এখন বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসছে। এরপরই কাজ পুরোদমে শুরু হবে। আপাতত নিয়মিত মেরামতের চেষ্টা চলছে, তবে টানা বৃষ্টিতে সংস্কার টিকছে না।”
যাত্রীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ‘শিগগিরই কাজ শুরু হবে’ বললেও, ভোগান্তি কবে শেষ হবে—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ভোরের আকাশ//হ.র