ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ০২:৩০ পিএম
শেরপুরে থামছে না বন্য হাতির তাণ্ডব
শেরপুরের গারো পাহাড়ে ৩০ বছরেও মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে গড়ে উঠেনি অভয়ারণ্য ও সোলার ফেন্সিং। ফলে পাহাড়ি গ্রামবাসীরা গত ২ যুগেরও অধিক সময় ধরে রয়েছেন চরম বিপাকে। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা পরছে মানুষ। মারা পরছে হাতিও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলের। গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় ৫০টি গ্রামে চলছে বন্যহাতির তাণ্ডব। এসব পাহাড়ি গ্রামগুলোতে গারো, হাজং, কোচ, বানাই বর্মন, হিন্দু মুসলিমসহ বিভিন্ন জাতিগোত্র মিলে লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এরা বেশিরভাগ শ্রমজীবি মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন্যহাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি, গাছপালা, খেতের ফসল ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, বন্যহাতির দল দিনে গভীর অরণে থাকে, আর সন্ধ্যার পর খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসছে লোকালয়ে। কৃষকরা তাদের খেতের ফসল ও জানমাল রক্ষার্থে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন। সনাতন পদ্ধতিতে ঢাকঢোল পটকা ফুটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে তারা হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই তারানো যাচ্ছে না হাতি। ফলে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে তারা।
গ্রামবাসীরা আরো জানান, পেটের খাবার না থাকলেও রাতে হাতি তাড়ানোর জন্য ২ লিটার কেরোসিন তেল ঘরে রাখা তাদের বাধ্যতামূলক। তারা জানান, ধান পেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে হাতির তাণ্ডব বৃদ্ধি পায়।
জানা গেছে, বন্যহাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শতশত একর আবাদি জমি পতিত পরে আছে। এতে চরম বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। যদিও বন্যহাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু ও ফসলের ক্ষতিপুরণ প্রথা প্রচলিত আছে বনবিভাগের পক্ষ থেকে।
মধুটিলা গ্রামের বাদশা মিয়াসহ গ্রামবাসীরা জানান, ফসলের ক্ষতি পুরণের টাকা পেতে নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। কেউ আবেদন করলেও তাতে লাভ হয় না। এছাড়া পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এলোটম্যান্ট ও সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমির পরিমান বেশি। তাই কাগজপত্রের জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভাগ্যে জুটছে না ক্ষতিপূরণের টাকা।
জানা গেছে, বনবিভাগের পক্ষ থেকে গারো পাহাড়ে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ২৫টি ইআরটি (এলিফেন্ট রেসপন্স টিম) গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে ১০ জন করে সদস্য রয়েছে। এরা এলাকায় জনসচেতনা বৃদ্ধি করে মানুষ হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করে আসছেন। কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে কমিটির কার্যক্রম।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গারো পাহাড়ে ১২০টির মতো হাতি অবস্থান করছে। খাদ্য ভান্ডার না থাকায় চরমভাবে খাদ্য সংকটে রয়েছে বন্যহাতির দল। জানা গেছে, হাতির তাণ্ডব শুরু হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে তাদের জানমাল রক্ষার্থে হাতির খাদ্য ভান্ডার গড়ে তোলার পাশাপাশি গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার জন্য সোলার ফেনসিং স্থাপনের দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আশ্বাস ও পাওয়া যায়। কিন্তু গত ৩০ বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অপরদিকে গারো পাহাড়ে হাতির আক্রমনে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকই। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০টি হাতিরও।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, গারো পাহাড়ে মানুষকে যেমন থাকতে হবে, বাঁচতে হবে, বন্য হাতিদেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কমানোর পরিকল্পনা আছে। ইআরটি টিমগুলোকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এ পর্যন্ত বন্যহাতির আক্রমণে নিহত, আহত ও আবাদ-ফসল, ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৯৬ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। শেরপুর সীমান্তে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে অভয়ারণ্যের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ