মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০২:১৩ পিএম
চার মাস ধরে খাবার পানির তীব্র সংকটে কটিয়াদিবাসী
কটিয়াদী পৌর এলাকার গোয়াতলা একাকার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ মরম আলী (৭০)। প্রতিনিয়ত পানি তোলার জন্য নিজের টিউবওয়েলে চেষ্টা করেন। কিন্তু বিগত চারমাস ধরে পানির দেখা মিলছেনা। জীবনের পড়ন্ত সময়ে এসে এর আগে কখনো পানির এতটা সংকট তিনি দেখেন নি, এখন যতটা তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া, চান্দপুর, বনগ্রাম, সহশ্রম ধুলদিয়া, করগাওঁ, মসুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এবং হাওর অঞ্চল এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যে কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চারমাস ধরে তীব্র পানি সংকটে রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা ও পৌর এলাকার সবখানেই কমবেশি এলাকায় পানি ওঠছেনা। হস্তচালিত টিউবওয়েলেও পানি নেই । ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন তীব্র। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা ও পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে ভুক্তভোগীদের ধারণা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উল্লেখিত এলাকাগুলোতে টিউবওয়েলে খাবার পানি নেই। কলের চারপাশ শুকিয়ে আছে। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মাঠে বিভিন্ন রকমের ফসল শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এলাকার পুকুর গুলো শুকিয়ে গেছে। দূর থেকে পানি এনে কোনরকম জীবনধারণ করছে মানুষ। অধিকাংশ বাড়িতে পানির অভাবে গোসল করাও বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,এ বছরের জানুয়ারী মাসের শুরু থেকেই পানি ওঠা কমে গেছে। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি চরম আকার ধারণ করে। পানির সংকটের কারণে সামর্থ্যবান অনেকেই বাড়িতে জল মোটর বসিয়ে নিচ্ছেন। কোথাও পানি পাওয়া গেলে আশপাশের মানুষ ভীড় করছে পানি নিতে। রান্না সহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। এমনি করুণ অবস্থায় মানুষের পাশাপাশি পানির অভাবে গবাদিপশু পালন ও কৃষি ফসলের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জমিতে ফসল লাল হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। পানির জন্য গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে রয়েছে কৃষকরা বাধ্য হয়ে গরু ছাগল বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এছাড়াও সংসারের কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বনগ্রাম ইউনিয়নের আনন্দ বাজার এলাকার কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, আকাশে বৃষ্টি নাই জমিনেও পানি নাই। নিজেরাই পানি পাচ্ছি না গরু ছাগলকে কিভাবে পালন করবো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আল্লাহ যদি রহম করেন। গৃহবধূ আছমা আক্তার বলেন, পানির অভাবে কয়েকদিন ধরে গোসল করতেও পারছিনা। রোজার মধ্যে সীমাহীন কষ্ট করতে হয়েছে। আমরা মহিলারা খুবই বেকায়দায় রয়েছি।
কটিয়াদী পৌর এলাকার গোয়াতলা গ্রামের কৃষক কুতুবউদ্দিন বলেন, বাড়িতে যেমন পানি নাই তেমনি মাঠের ফসল পুইরা শেষ হইয়া গেলো। চিচিঙ্গা ও শসা ক্ষেত জ্বলে গেছে পানির অভাবে আমরা গরিব কৃষকরা মইরা গেলাম। সরকার গভীর নলকূপ স্থাপনের বরাদ্দ কোথায় দেয় আমরা চোখে দেখতে পাইনা।
একি এলাকার মনির হোসেন বলেন, এলাকার প্রতিটি মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে এমন সমস্যা হলে সেখান থেকে আমরা পানি সংগ্রহ করতে পারতাম নলকূপের বরাদ্দ কোথায় যায় এবং কারা পাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা উচিত সরকারের।
কটিয়াদী উপজেলা উপ-সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, বাড়তি তাপমাত্রা ও সেচ দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এ ভোগান্তির কারণ । এসব গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা অতি দরিদ্র কিছু মানুষকে নলকূপ দেই। সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়না। ভূ-পৃষ্ঠীয় পানি বা সারফেস ওয়াটারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে আগামীতে এ সংকট আরও বাড়তে পারে।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাইদুল ইসলাম বলেন,পানির তীব্র সমস্যা থাকার কথা শুনেছি। এসব এলাকাগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নলকূপ স্থাপনের প্রকল্প নেওয়ার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে কাজ শুরু করা হবে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ