এমএ হালিম, কেশবপুর (যশোর)
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪৩ পিএম
কেশবপুরে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, দিশেহারা খামারিরা
যশোরের কেশবপুরে কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে আমন ধান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য বিচলির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বেড়েই চলেছে গরুর অন্যান্য দানাদার সুষম খাদ্যের দামও। ব্যবসায়ীরা বাইরে থেকে বিচলি এনে যোগান দিলেও বর্তমান ৫০০ টাকায়ও মিলছে না এক পোন (আশি আটি) বিচলি। এতে দিশেহারা হয়ে অনেক খামারি লোকসান এড়াতে কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, গেল আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে আবাদ হয়েছিল ৯ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমি। গত সেপ্টেম্বরে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলা ব্যাপী ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়ে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া, চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৫০ হেক্টর কম জমিতে বোরো আবাদ হয়। এখনও বোরো ধান উঠতে সময় লাগবে প্রায় দেড় মাস। এরফলে গবাদি পশুর খাবার বিচলীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিচলীর অভাবে অনেক কৃষক গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে নদ-নদীর শেওলা কেটে গবাদি পশুকে খাওয়াচ্ছে।
কৃষক ও খামারিরা জানান, বোরো আবাদের শেষ মুহূর্তে কোনো কৃষক বা খামারির ঘরে গচ্ছিত বিচলি নেই। প্রায় চার মাস ধরে বিচলি কিনে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। অনেক কৃষক ও খামারি বিচলীর অভাবে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিচলীর ব্যাপক চাহিদার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট বড় বাজারে অনেক যুবক বিচলি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তারা ব্যাপক চাহিদার কারণে বাইরে থেকে বিচলি কিনে এনে বিক্রি করছেন।
দোরমুটিয়া মোড়ের খামারি বিষ্ণুপদ দাস বলেন, তার খামারে ১৫/১৬টি গরু মোটা তাজাকরণের জন্য পালন করা হচ্ছিল। বর্তমান চড়ামূল্যে গরুর সুষম খাদ্য বিক্রি হচ্ছে। এরপরও রয়েছে বিচলীর সংকট। তাই লোকসান এড়াতে তিনি এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।
কেশবপুর পশুহাটে বিচলি বিক্রি করতে আসা মাগুরার আজিবার রহমান জানান, তার এলাকা থেকে কেশবপুরে বিচলীর দাম বেশি। যে কারণে তিনি বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিচলি কিনে নিয়ে আসেন পশুহাটে বিক্রি করতে। বর্তমান বাজারে এক কাউন (১৬ পোন) বিচলীর দাম ৮ হাজার টাকা। আবার কোথাও এরচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে তার সংসার ভালোভাবেই চলছে। সপ্তাহের তিনদিন পশুহাট বাদে এখানে বিচলি বিক্রি করা যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অলকেস বলেন, উপজেলায় ২৬৯টি গরুর খামার রয়েছে। গাভীর খামার রয়েছে ১৭১টি। এর বাইরে সামনের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রতিজন গৃহস্থের ঘরে কমপক্ষে ১টি করে গরু মোটা তাজাকরণের জন্য পালন করা হচ্ছে। মোট গরু রয়েছে ৯৪ হাজার ৫৩৪টি। বিচলি গরুর প্রধান খাদ্য। বিচলীর চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিজন চাষীকে উন্নতজাতের ঘাস লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ