নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:৪০ পিএম
ছবি : রক্তাক্ত ব্যবসায়ী, ইনসেটে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে মাকসুদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা বিএনপি সাবেক ছাত্র বিষয়কসম্পাদক আকবর হোসেন নিপু খিলজিসহ তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে।
হুমকি পেয়ে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে আহতকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার আফাজিয়া হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন আলাউদ্দিনের বাগানে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী মাকসুদুর রহমান(৩০) হাতিয়া উপজেলার চরইশ্বর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বেলায়েত হোসেনের ছেলে।
মকসুদ জানান, হামলাকারিরা তার সাথে থাকা নগদ ২ লাখ ২ হাজার টাকা,একটা এনডুয়েট ফোন ও তার এনআইডি কার্ড নিয়ে যায়। গতকাল রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলাকারীদের হুমকি পেলে ভুক্তভোগী পরিবার তাকে বাড়িতে নিয়ে যায় বলে জানান আহতের ভাই রকি।
অভিযুক্ত আকবর হোসেন নিপু খিলজি(৪৫) উপজেলার আফাজিয়া এলাকার মৃত আলাউদ্দিন খিলজির ছেলে। তিনি উপজেলা যুবদলের সাবেক নেতা এবং নলচিরা ঘাটে ইজারাদারের ব্রোকার হয়ে কাজ করেন বলে জানা যায়। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে ঘাটে তেল চোরাকারবার ও চাঁদাবাজিসহ নানান অপরাধে বিভিন্ন প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, হামলার শিকার মাকসুদুর রহমান আফাজিয়া বাজারে দোকানদারি করতেন। আকবর হোসেন নিপু খিলজি ও নাদিম উদ্দিন অপু খিলজি দুই ভাই প্রায় তার থেকে বিনা কারনে চাঁদা চাইতেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা দুই ধাপে মাকসুদের দোকান বন্ধ করে দেয়। পরে স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীর অনুরোধে তারা দোকান খুলে দেয়। গত রাতেও পূর্বকার ক্ষোভের জের ধরে নিপু খিলজির নেতৃত্বে তার ছেলে ও তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অপু খিলজিসহ তাদের ঘনিষ্ঠ সাঙ্গপাঙ্গরা মাকসুদকে তার দোকান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এবং আফাজিয়া হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন জনৈক আলাউদ্দিনের বাগানে নিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে হামলাকারীরা তাকে মৃত ভেবে বাগানে রেখে চলে যায়।
তারা আরো জানায়, ভুক্তভোগীর পিতা বেলায়েত হোসেন একসময় স'মিলে মিস্ত্রি কাজ করতেন। এক দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন এবং এক হাত কেটে যায়। পরে আফাজিয়া বাজার ইজারাদারের কর্মী হয়ে কাজ করতেন। হামলাকারীরা এই বেলায়েত হোসেন ওরপে বেলায়েত মিস্ত্রিকে সে কাজ থেকেও বিতাড়িত করে। হামলাকারীরা কেন্দ্রীয় মহিলা দল নেত্রী ফৌজিয়া খিলজির ভাই-ভাতিজা।
এছাড়া, নলচিরা নৌঘাটের যত অনিয়ম কর্মকান্ড সব ফৌজিয়া খিলজি ও তার ভাই-ভাতিজা এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সাঙ্গপাঙ্গদের দ্বারা সংগঠিত হয় বলে জানা যায়।
হামলার শিকার মাকসুদুর রহমানের পিতা বেলায়েত হোসেন জানান, প্রায় সময় তার ছেলে মাকসুদ থেকে হামলাকারীরা বিনা কারনে টাকা চাইতেন। টাকা না দিলে দোকান বন্ধ করে দিতেন। শুধু তাই নয়, বাজারে ইজারাদারের লোক হয়ে কাজ করায় তার থেকে চাঁদা দাবি করে নিপু।
গতকালও পূর্বকার ক্ষোভে নিপু খিলজির নেতৃত্বে তার ছেলে, তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অপু খিলজি ও ঘাটের মামুনসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা মাকসুদকে তার দোকান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এবং আফাজিয়া হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন আলাউদ্দিনের বাগানে নিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে হামলাকারীরা তাকে মৃত ভেবে বাগানে রেখে চলে যায়।
এ বিষয়ে আকবর হোসেন নিপু খিলজি জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। মাকসুদকে তিনি মেরেছেন এটা সত্য সে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর কমিটির লোক। তিনি জানান, বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে আনুঃ ৪/৫ বছর আগে কুরবানির ২ দিন আগে আমাকে বাজারে হামলা মারধর করে আটক করে রাখে। আমার স্ত্রী মেয়ে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। ৫ আগষ্টের পর সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে আমার ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ুয়া তাকেও মেরে রক্তাক্ত করেছে । আমার স্ত্রী ফারজানা বেগম বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় মামলা করলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। সেএখনও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। গটনার দিন সন্ধ্যা সে স্কুলে অন্ধকারে কাকে কাকে ফোন করে সহিংসতা করার পরিকল্পনা করছিল। আমি পাশ দিয়ে যেতে তার উদ্দেশ্য ধরতে পারি তাই তাকে মারতে বাধ্য হই। তার ভাই হাতিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মাআহবায়ক তাকে এবিষয়ে জড়িত করলেও সে এ ঘটনায় ছিল না।
হাতিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আকরামু উল্লা জানান, ঘটনাটা আমরা শুনেছি সার্কেল এসপি স্যার সরাসরি ঘটনার স্থলে গিয়েছে। মুলত ফেসবুকে লেখালেখি নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কেউ থানায় এখনো লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.