চট্টগ্রামে জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০১:২১ পিএম
শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে গভীর রাতে ফিল্মি স্টাইলে জোড়া খুনে তিনটি মোটরসাইকেলে অংশ নেয় ৭ জন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে দুজন এবং একটিতে ছিলেন তিনজন। সোমবার গ্রেপ্তার মো. সজীব (২৯) আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান।গ্রেপ্তার মো. সজীব ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্য কাঞ্চননগর এলাকার সেলিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারী। জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকলিয়া থানার ওসি মো. ইখতিয়ার উদ্দিন। তবে সজীবের দেওয়া তথ্য আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ বলছে, সজীবের দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার নাম উঠে এসেছে। এ ঘটনায় তিনটি মোটরসাইকেলে অংশ নিয়েছিল সাতজন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে দুজন এবং একটিতে ছিলেন তিনজন। এ নিয়ে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল।
এর আগে, গত রোববার গভীর রাতে নগরের সদরঘাট এলাকা থেকে মো. সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার সকালে তাকে নিয়ে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর খাজা রাস্তার মাথা এলাকার একটি গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চেক শার্ট পরা মোটরসাইকেল আরোহীই হলেন সজীব। ফুটেজে তাকে কোমর থেকে অস্ত্র বের করে আরেকজনের হাতে দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ওসি মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার সজীব আজ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে সজীব জানান, তিনটি মোটরসাইকেলে সাতজন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। দুটি মোটরসাইকেলে দুজন এবং একটিতে ছিলেন তিনজন। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সজীবের দেওয়া তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন এজাহার নামীয় আসামি না হলেও তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একটি মোটরসাইকেল চালিয়েছিলেন সজীব এবং অন্যটি চালিয়েছিলেন বেলাল। রোববার রাতে সদরঘাট থেকে সজীবকে গ্রেপ্তারের পরদিন সকালে তার দেওয়া তথ্যে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর খাজা রাস্তার মাথা এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে কারা অংশ নিয়েছিল, তাদের নামও সজীব জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ৩০ মার্চ রাত ৩টার দিকে নগরের বাকলিয়ার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোড অভিমুখী চট্টমেট্রো-গ ১২-৯০৬৮ নম্বরের একটি প্রাইভেটকারকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ধাওয়া করে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা। পরে প্রাইভেট কারটি বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে প্রবেশ করে চকবাজার থানার চন্দনপুরা এলাকায় পৌঁছানোর পর থেমে গেলে, সে সময় বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। এতে বখতেয়ার হোসেন মানিক ও আব্দুল্লাহ নামে দুইজন নিহত হন এবং রবিন ও হৃদয় নামে আরও দুইজন আহত হন।
এদিকে ঘটনার তিনদিন পর গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে নগরের বাকলিয়া থানায় মামলা করেন নিহত বখতেয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম। মামলায় সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না, মো. হাসান, মোবারক হোসেন ইমন, রায়হান ও বোরহানসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
মামলার পর গত ৩ এপ্রিল ভোরে নগরের বহদ্দারহাট ও ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে বেলাল (২৭) ও মানিক (২৪) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের আদালত দুইজনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে, কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। ৬ এপ্রিল দুপুরে নগরের চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে গত ১৬ মার্চ, একই মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত সাজ্জাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
গত ১৫ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ