মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫ ০২:৩৯ পিএম
জমিতে বৃষ্টির পানি জমে পাকাধানের বেশির ভাগ ক্ষেত্রের ফসল নষ্ট হয়েছে
মানিকগঞ্জে বৈরী আবহাওয়ার কারণে মানিকগঞ্জ জেলার বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষীদের স্কীমগুলোতে বীজ নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া, ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন চকের আবাদী জমিতে বৃষ্টির পানি জমে পাকাধানের বেশির ভাগ ক্ষেত্রের ফসল নষ্ট হয়েছে।
সদর উপজেলার বেতিলা এলাকার কৃষক হাবিব বলেন, বেতিলা, চরবেতিলা, মিতরা চকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ঘিওর উপজেলার মাসাইল গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, আমাদের মাসাইল চকে বৃষ্টির পানি জমে পাকাধান ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর গ্রামের কৃষক গণি মিয়া বলেন, আমার ২ বিঘা জমিতে বৃষ্টির পানি জমে পাকাধান ডুবে ধানে পচন ধরেছে। তিনি আরো বলেন আমার বৈরাগী চকের ৩ বিঘা ধানিজমির বেশি সর্বনাশ হয়েছে।
শিবালয় উপজেলার বুতনী গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, শিমুলিয়া ও তাড়াইল চকে বৃষ্টির পানি জমে পাকাধান গাছ কাত হয়ে গেছে এবং ধানে গ্যাড়া বেরিয়ে গেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে বিএডিসি স্কীমের চুক্তিবদ্ধ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএডিসির সাথে কৃষকদের বীজ উৎপাদনে যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্কীমগুলোর ধানগাছ পড়ে পচন ধরেছে। এছাড়া ধানগাছ বৃষ্টির পানিতে পড়ে ধানে ‘গ্যাড়া’ বেড়িয়েছে তাই প্রান্তিক কৃষকেরা বিএডিসিকে বীজ দিতে অক্ষম। বিভিন্ন সংস্থা থেকে অভিযোগ উঠেছে, নদী ও খাল খনন প্রথা অমান্য করে কৃষিজমি ধ্বংস ও ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে নদীর বালু উত্তোলনের ফলে মানিকগঞ্জ জেলার মানচিত্র গিলে খাচ্ছে বালুদস্যু সিন্ডিকেট। সুত্রে জানা গেছে,
প্রমত্তাপদ্মা , যমুনা ,ধলেশ্বরী, পুরাতন ধলেশ্বরী ,কালীগঙ্গা, মরাকালীগঙ্গা ,ইছামতী, নুরানীগঙ্গা, কান্তাবতী, গাজীখালী, নোয়াই, ভুবনেশ্বর, মনলোকহানী ও ক্ষীরাইনদীসহ ১৪ টি নদী মধ্য ভাটির বাংলাদেশের অঞ্চলভূক্ত মানিকগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
প্রায় ৩ দশক ধরে মানিকগঞ্জ জেলার কয়েকটি নদী ও খাল বিলের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। জেলার সর্ববৃহৎ শস্যভাণ্ডার হরিরামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভাতছালার বিল পরিদর্শনে প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কথা বলার সময় তাঁরা বলেন, এই বিলে দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী জাহেলি লীগ যুগে আওয়ামী রাজনৈতিক দলের কথিত নেতাকর্মীরা অবৈধ ড্রেজার মেশিন চালিয়েছেন এবং শুকনো মৌসুমে কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি করেছেন। ভোগান্তি এলাকার ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বলেন, সুপেয় ও নিরাপদ পানি সংকটে বসতি এলাকাগুলো মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। মাছ চাষের নামে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিষ প্রয়োগ করে দেশি প্রজাতির মাছ নিধন করছে। এতে জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, পরিকল্পিত ড্রেজিং সংকটের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে মৃত প্রায় খাল বিলে পানি নেই বললেই চলে।
এসবের প্রধান কারণ হলো অবৈধ পন্থায় অপরিকল্পিত ভাবে নদীর বালু লুটপাট এবং অর্থলোভী কৃষকেরা অল্প টাকার লোভে কৃষি জমির টপসয়েল সামান্য টাকায় বিক্রি করে কৃষিজমি ধ্বংস করছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙ্গনের প্রধান কারণ হলো নদী ও খাল খনন প্রথা অমান্য করে অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ পন্থায় নদীর বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। নদী ও খাল খনন থাকলে নদী ভাঙ্গন কমে যাবে। উল্লেখ্য ,আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী- ২০২৪ সাল হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বছরে গড়ে ৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্ষণ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, প্রকৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগও বেশি ঘটেছে বলে জানান সংস্থাটি।
ভোরের আকাশ/আজাসা