অরুণ কুমার সরকার, চিতলমারী (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৫৫ পিএম
চিতলমারীতে কৃষকের পাকা ধান ঘরে তুলতে বাধা কচুরিপানার
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হলেও খালে কচুরিপানার কারণে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান বাড়িতে আনতে পারছে না কৃষকেরা। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান জনগণদের নিয়ে কিছু কচুরিপানা অপসারণে চেষ্টা করলেও আর্থিক সংকটে থেমে গেছে কাজ। একদিকে মাঠে পাকা ধান কাটার চাপ ও কচুরিপানা খাল আটকিয়ে থাকায় ধান সহজে বাড়ি আনতে না পারার দুঃচিন্তা এবং অপরদিকে প্রতিদিন ঝড়বৃষ্টির আশংকার মধ্যে কৃষকদের অবস্থা এখন দিশেহারা।
এমন মারাত্মক সংকটের মুখে ভুক্তভোগীরা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উপজেলা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বৃষ্টির আগে মাঠের ধান কেটে বাড়িতে আনতে না পারলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন। কচুরিপানা অপসারণে জন্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপ চেয়ে ভুক্তভোগী কৃষকের পক্ষে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।
সরেজমিন চিতলমারী উপজেলার রায়গ্রাম এলাকায় গেলে ভুক্তভোগী কৃষক বিকাশ রায় জানান, ধান পাকে গেলেও, খালে কচুরিপানার কারণে নৌকা দিয়ে বিল থেকে ধান আনতে পারছি না। আকাশে মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি নামলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের মেম্বার মোস্তফা তালুকদার ভাই বাঁশতলা খালের কিছু কচুরিপানা অপসারণ করেছেন। চার কিলোমিটার খালটি এখন কচুরিপানা আটকিয়ে আছে। এই খালের দু’পাড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কচুরিপানা কারণে সেই ফসন ঘরে উঠাতে না পারলে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের জরুরি সাহায্যে যাতে কচুরিপানা অপসারণ হয় তার দাবি জানাই।
নূর মোহাম্মদ শেখ তার ধানী ক্ষেত ও বাঁশতলা খালের মাঝখানে আলে (রাস্তা) বসে বলেন, কিভাবে যে ঘরে ধান নিব মাথায় কোনো কাজ করছে না। এই খালে কয়েকশ নৌকায় কচুরিপানা আটকে আছে। পাকা ধান কেটে ওই নৌকায় করে বাড়ি নিয়া সহজ। এখন তো তা হচ্ছে না। এতো পরিশ্রমের ধান মাঠে নষ্ট হলে আর বাঁচবো না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা তালুকদার জানান, কৃষকেরা আমার প্রাণের মানুষ। তাদের পাকা ধান ঘরে যাতে সহজে নিতে পারে সেই জন্য ইতোমধ্যে বাঁশতলা খালের কিছুটা জনগণ নিয়ে পরিষ্কার করেছি।একটা মেশিন স্থানীয়ভাবে তৈরি কাজ চলছে। যা দিয়ে কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করা যাবে। কিন্তু আর্থিক সংকটে বাঁশতলা, গাবতলাসহ অন্য অন্য খালের কচুরিপানা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জরুরিভাবে সরকারি বরাদ্দ দরকার।
চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন জানান, কৃষকের জরুরি সংকটের কথা মোস্তফা তালুকদার মেম্বারে কাছ থেকে শুনেই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।বাঁশতলা, গাবতলা,ডোবাখালী,নারায়ণ খালীসহ কয়েকটি খালের কচুরিপানা জরুরিভাবে অপসারণে জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চিতলমারী উপজেলার প্রশাসনে আর্থিক সহায়তা প্রযোজন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সিফাত আল মারুফ মোবাইলে জানান, অন্যান্য বছর কৃষকেরা সুইসগেট হতে লবণ পানি ঢুকিয়ে খালের কচুরিপানা মারতো তাতে উপকারে থেকে বেশি ক্ষতি হতো।এবার কৃষকেরা লবণ পানি না ঢুকানো বেশি লাভবান হয়েছে।কৃষক যাতে তাদের ফলন পাকা ধান ভালো ভাবে ঘরে তুলতে পারে, তার জন্য সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ বছর ১২ হাজার একশ তেইশ হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল জানান, দেশের অর্থনীতিতে চিতলমারী কৃষকে ধান সবজি ও মাছ ব্যাপক অবদান রাখছেন। চলতি মৌসুমে ধান যাতে কৃষক ঝড়বৃষ্টির মৌসুমের আগে ঘরে তুলতে পারে সেই জন্য সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। খালগুলো কচুরিপানা জরুরী ভাবে অপসারণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ