হুমায়ুন রশিদ জুয়েল, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫০ পিএম
কিশোরগঞ্জের হাওরে ধান কাটার ধুম
কিশোরগঞ্জের হাওরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের হাতছানি। কাঁচা-পাকা ধানের শিষ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে, আর কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা ও ঘরে তোলার কাজে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে এই কর্মযজ্ঞ। তবে ধানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর) অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। এখান থেকে উৎপাদিত চালের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪ হাজার কোটি টাকা।
গত বছর প্রতি মণ ধানের সরকারি মূল্য ছিল ১২০০ টাকা, এবার তা বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে (প্রতি কেজি ৩৬ টাকা)। সরকার নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৮ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবে।
তবে কৃষকরা জানাচ্ছেন, উৎপাদন খরচ মেটাতে এবং ঋণ শোধের চাপে অনেকে মাঠ থেকেই ধান বিক্রি করছেন ৮২০-৯০০ টাকা মণ দরে। অথচ এক মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ৮৫০-৯০০ টাকা, ফলে লাভের মুখ দেখা কঠিন।
কিশোরগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আগাম পাহাড়ি ঢল ও বন্যা ঠেকাতে এ বছর হাওরাঞ্চলে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৯টি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৫০ কিলোমিটার।
নিকলীর জোয়ানশাহী হাওরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২ একর জমিতে বোরো-২৮ জাতের ধান আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে, তবে কৃষি শ্রমিকের সংকট আছে। পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের নিয়ে ধান কাটছি। ন্যায্যমূল্য পেলে লাভবান হব।
সিংপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ মিয়া বলেন, ঋণ করে ধান করেছি। ফলন ভালো হলেও দাম না পেলে লাভ হবে না।
হাওরের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ছক্কা, ফাইজং ও হাইব্রিড-২৯ জাতের ধানের ফলন ভালো। এবার বাঁধ হয়েছে শুনে আশ্বস্ত। কষ্টের ফসল যেন রক্ষা পায়, এই দোয়া করি।
নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর থেকে শ্রমিক দল নিয়ে এসেছেন রুহুল আমিন। তিনি বলেন, এবার শ্রমিকের দাম তুলনামূলক কম। মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে বলে আমাদের আয় কমেছে।
হার্ভেস্টার মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, ১ একর জমির ধান মেশিনে মাত্র ১ ঘণ্টায় কাটা যায়। এতে কৃষকদের সময় ও খরচ বাঁচে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান বলেন, চলতি বছর আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সরকার নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত দরে ধান ও চাল সংগ্রহ করবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ