স্থানীয়দের উদ্বেগ, গুরুত্ব নেই প্রশাসনের
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫ ০৫:১৪ পিএম
টাঙ্গাইলে লাঙ্গুলিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ
টাঙ্গাইলের বাসাইলে লাঙ্গুলিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী একটি মহল। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে নৌ-যোগাযোগ। বাড়ছে কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নিরব ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কাউলজানি ও মান্দারজানি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাউলজানি পুরাতন বাজারের পাশে বংশাই নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া লাঙ্গুলিয়া নদীর উৎসমুখে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এরপর নদীর ভাঁটিতে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও তিনটি বাঁধ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে উপজেলার কাউলজানি পুরাতন বাজার এলাকায় বংশাই নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া লাঙ্গুলিয়া নদীর উৎসমুখে নদীর দুপাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে তৎকালীন সংসদ সদস্য বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম সেতুর পরিবর্তে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করেন। পরে প্রথম তার লোকজন সেখানে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর ক্ষমতার পালা বদলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখলে নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে মাছ চাষ করে আসছিল। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর এখন নতুন করে আরেকটি চক্র দখলের চেষ্টায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে, বংশাই নদীর পানি লাঙ্গুলিয়া নদী হয়ে বাসাইল উত্তরপাড়ায় মরাগাঙ্গী নদী ও কাশিল পূর্বপাড়ায় ঝিনাই নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় ভাঁটি এলাকার অর্ধশত গ্রামের কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বোরো ধান, পাট, মৌসুমি ফসল চাষ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নৌ-পরিবহন বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা শিগগিরই বাঁধগুলো অপসারণ করে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে বাঁধের ফলে দেশীয় মাছ কমে যাচ্ছে। গো-খাদ্য সংকটের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।
নদী তীরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন নদীর এই অংশটি ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় আমরা নদীর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আর যেন কেউ দখল বাণিজ্য করতে না পারে তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেতু নির্মাণের আগ পর্যন্ত মসজিদের উন্নয়নের জন্য মসজিদ কমিটিকে মাছ চাষের অনুমতি দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. পান্নু মিয়া জানান, ‘এই বাঁধটি দিয়েছিল বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। এটি তার মনগড়া প্রজেক্ট ছিল। এই বাঁধটির কারণে মান্দারজানি, কাউলজানি, বাদিয়াজান, বার্থা, ফুলবাড়ীসহ অনেক গ্রামের মানুষ অসুবিধায় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সঠিক সময়ে পানি না আসায় এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বাঁধটি ভেঙে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করলে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. আকলিমা বেগম বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই। এটা আইনের লঙন। নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের যে বিষয়টি এসেছে, এটা মূলত টেকনিক্যাল বিষয় হবে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেলে টেকনিক্যাল টিম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তর যারা আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে তদন্ত করা হবে। যদি এই অভিযোগের ভিত্তি পাওয়া যায়। তাহলে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/এসআই