পুঁজিবাজারে ধস
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৬ এএম
ডিএসই’র মূলধন কমলো ২ হাজার কোটি টাকা
গত তিন বছরেই ঈদুল ফিতরের পর দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের ঢেউ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও আঁছড়ে পড়েছে। ফলে টানা পাঁচ কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ঈদের আগে শেষ তিন কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখী ছিল দেশের পুঁজিবাজার। এই পরিস্থতিতে স্বস্তিতে ঈদের ছুটিতে যান বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যেই ২ এপ্রিল খবর আসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের। ওইদিন ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের ৭৬টি দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে। এই ঘোষণায় বিশে^র প্রধান শেয়ার বাজারগুলোতে ব্যাপক দরপতন শুরু হয়। এর মধ্যেই টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে ৬ এপ্রিল লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ডিএসইতেও। টানা চার দিন সূচকের পতন হয়।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ১৯ মিনিটে ঘোষণা আসে চীন বাদে সকল দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। এই ঘোষণায় বৃহস্পতিবার কিছুটা বেড়ে রোববারের অবস্থানে যায় ডিএসইর সূচক। ওপর প্রবণতার দেখা মিললেও ঈদের পর আবার দরপতনের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ঈদের পর গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই দাম কমার তালিকায় ছিল বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে তবে বেড়েছে দৈনিক গড় লেনদেন।
ঈদের পর প্রথম সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪১টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৫টির। এছাড়া ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছর ঈদের পরের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে ডিএসইর মূলধন বেড়েছিল ২৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ঈদের পরের সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে মূলধন বেড়েছিল ১৭৪ কোটি টাকা।
গেল সপ্তাহে বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি প্রধান মূল্যসূচকও কমেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচক কমলেও গত সপ্তাহে ডিএসই শরিয়াহ ও ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে। ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। ঈদের ছুটির আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১০ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এছাড়া বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। ঈদের ছুটির আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৬ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪২ শতাংশ। গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকলেও ডিএসইতে লেনদেনের গতি বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ঈদের ছুটির আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪০৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিচ হ্যাচারি। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিক, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, এসিআই লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ইনফিউশন, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড এবং নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস।
ভোরের আকাশ/এসএইচ