নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫ ০২:৩৬ পিএম
ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য কমেনি
নিখিল মানখিন : ভুয়া চিকিৎসকদের নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা! এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই ধরা পড়ছে ভুয়া চিকিৎসক। কিন্তু কমছে না তাদের অসাধু ব্যবসা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দেশে কার্যকর অভিযান নেই। সতর্কবার্তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)। র্যাবসহ কয়েকটি সংস্থার অভিযান কার্যক্রমও চলে সীমিত পরিসরে। তাদের পক্ষেও অলিগলিতে বসে থাকা ভুয়া চিকিৎসকের দশভাগের কাছেও পৌঁছা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত না হয়েও অনেকে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক রোগী। রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়ছেন আর্থিক ক্ষতিতে। গত বুধবার এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করা যাবে না নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কয়েকদিন আগে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলনও করেছেন মেডিকেল শিক্ষার্থী ও প্রকৃত চিকিৎসকরা।
কয়েকদিন পরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধরা পড়ছে ভুয়া চিকিৎসক। গত ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বার্ন ইউনিট ভবনের তৃতীয় তলায় এক রোগীকে আত্মীয় বানিয়ে চিকিৎসা দিতে এসে হাতে-নাতে আটক হন ডালিয়া নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। পরে আনসার সদস্যদের কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়। এর আগে গত বছর মুনিয়া খান রোজা, পাপিয়া আক্তার স্বর্না ও রিপা আক্তার নামে তিন ভুয়া নারী চিকিৎসককে ঢামেক হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এসএসসিতে দ্বিতীয়বার ফেল করে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদুরে ও প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে নিজের ফার্মেসিতে বসে দীর্ঘদিন যাবৎ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছিলেন তিনি। একটা সময় তিনি নিজেই ছিলেন দীর্ঘদিনের চর্মরোগের রুগী। অন্যদিকে তিনি দ্বিতীয়বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয়বারই হয়েছেন অকৃতকার্য। এরপর আর পরীক্ষাই দেননি তিনি। সম্প্রতি তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন ভবেশ চন্দ্র কর।
গত ২১ জানুয়ারি রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়। আটক চিকিৎসকের নাম এস এম মেহেদী হাসান পিয়াল। তিনি নগরীর ছোট বয়রা এলাকার হাসানুর রহমানের ছেলে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাতের সময় মেহেদী হাসান হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাকে দেখে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্দেহ হয় এবং তাকে অহেতুক ঘোরাফেরা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে তিনি তার পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আটকে রাখে। এ সময় তার কাছ থেকে পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়, যেখানে তার নাম পিয়াল হাসান লেখা ছিল।
এভাবে দেশের সর্বত্র অলিগলিতে চেম্বার সাজিয়ে বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখে যাচ্ছেন অনেক ভুয়া চিকিৎসক।
বিএমডিসি কী বলছে : বিএমডিসি আইনের কিছু অংশ উল্লেখ করে চিকিৎসকদের বারবার সতর্ক করে দেয় বিএমডিসি। বিএমডিসি আইনের ২২(১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ব্যতীত এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোন আইনে যা, কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমত, ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই ধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদ অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না।
হাইকোর্টের নির্দেশে যা বলা হয়েছে : সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতির মধ্যেই আদালতের এ সিদ্ধান্ত এল। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে দুটি রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার এ রায় দেয়। আদালত বলেছেন, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া আজ পর্যন্ত যারা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আইন ভঙ্গ করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না এই নিয়মসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতির মধ্যেই আদালতের এ সিদ্ধান্ত এল।
অভিযোগের শেষ নেই : অভিযোগ উঠেছে, দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি আইনের লঙ্ঘন। স্বীকৃত চিকিৎসা থেকে ডাক্তার হয়েও অনেকে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে থাকেন। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এ ধরনের চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য। রোগীদের ভালো-মন্দ বিবেচনায় রাখেন না তারা। মহান পেশা চিকিৎসাসেবা তাদের কাছে হয়ে ওঠে ‘রোগী মেরে টাকা উপার্জনের সেন্টার’। স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি অস্বীকৃত কোয়াক চিকিৎসকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। দেশে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ‘কোয়াক চিকিৎসক’। এ ধরনের চিকিৎসকদের থাকে না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতা। কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যায়। এতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারি অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরাল করার দাবি জানিয়েছেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি ও বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদী-ই-মাহবুব। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্বল মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়ী। কেউ কারো দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন না। দেশে ভুয়া চিকিৎসকের অভাব নেই। এতে দেশের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২ সপ্তাহ আগে
আপডেট : ৮ ঘন্টা আগে
ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য কমেনি
নিখিল মানখিন : ভুয়া চিকিৎসকদের নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা! এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই ধরা পড়ছে ভুয়া চিকিৎসক। কিন্তু কমছে না তাদের অসাধু ব্যবসা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দেশে কার্যকর অভিযান নেই। সতর্কবার্তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)। র্যাবসহ কয়েকটি সংস্থার অভিযান কার্যক্রমও চলে সীমিত পরিসরে। তাদের পক্ষেও অলিগলিতে বসে থাকা ভুয়া চিকিৎসকের দশভাগের কাছেও পৌঁছা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত না হয়েও অনেকে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক রোগী। রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়ছেন আর্থিক ক্ষতিতে। গত বুধবার এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করা যাবে না নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কয়েকদিন আগে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলনও করেছেন মেডিকেল শিক্ষার্থী ও প্রকৃত চিকিৎসকরা।
কয়েকদিন পরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধরা পড়ছে ভুয়া চিকিৎসক। গত ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বার্ন ইউনিট ভবনের তৃতীয় তলায় এক রোগীকে আত্মীয় বানিয়ে চিকিৎসা দিতে এসে হাতে-নাতে আটক হন ডালিয়া নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। পরে আনসার সদস্যদের কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়। এর আগে গত বছর মুনিয়া খান রোজা, পাপিয়া আক্তার স্বর্না ও রিপা আক্তার নামে তিন ভুয়া নারী চিকিৎসককে ঢামেক হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এসএসসিতে দ্বিতীয়বার ফেল করে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদুরে ও প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে নিজের ফার্মেসিতে বসে দীর্ঘদিন যাবৎ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছিলেন তিনি। একটা সময় তিনি নিজেই ছিলেন দীর্ঘদিনের চর্মরোগের রুগী। অন্যদিকে তিনি দ্বিতীয়বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয়বারই হয়েছেন অকৃতকার্য। এরপর আর পরীক্ষাই দেননি তিনি। সম্প্রতি তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন ভবেশ চন্দ্র কর।
গত ২১ জানুয়ারি রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়। আটক চিকিৎসকের নাম এস এম মেহেদী হাসান পিয়াল। তিনি নগরীর ছোট বয়রা এলাকার হাসানুর রহমানের ছেলে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাতের সময় মেহেদী হাসান হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাকে দেখে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্দেহ হয় এবং তাকে অহেতুক ঘোরাফেরা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে তিনি তার পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আটকে রাখে। এ সময় তার কাছ থেকে পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়, যেখানে তার নাম পিয়াল হাসান লেখা ছিল।
এভাবে দেশের সর্বত্র অলিগলিতে চেম্বার সাজিয়ে বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখে যাচ্ছেন অনেক ভুয়া চিকিৎসক।
বিএমডিসি কী বলছে : বিএমডিসি আইনের কিছু অংশ উল্লেখ করে চিকিৎসকদের বারবার সতর্ক করে দেয় বিএমডিসি। বিএমডিসি আইনের ২২(১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ব্যতীত এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোন আইনে যা, কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমত, ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই ধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদ অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না।
হাইকোর্টের নির্দেশে যা বলা হয়েছে : সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতির মধ্যেই আদালতের এ সিদ্ধান্ত এল। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে দুটি রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার এ রায় দেয়। আদালত বলেছেন, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া আজ পর্যন্ত যারা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আইন ভঙ্গ করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না এই নিয়মসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতির মধ্যেই আদালতের এ সিদ্ধান্ত এল।
অভিযোগের শেষ নেই : অভিযোগ উঠেছে, দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি আইনের লঙ্ঘন। স্বীকৃত চিকিৎসা থেকে ডাক্তার হয়েও অনেকে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে থাকেন। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এ ধরনের চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য। রোগীদের ভালো-মন্দ বিবেচনায় রাখেন না তারা। মহান পেশা চিকিৎসাসেবা তাদের কাছে হয়ে ওঠে ‘রোগী মেরে টাকা উপার্জনের সেন্টার’। স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি অস্বীকৃত কোয়াক চিকিৎসকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। দেশে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ‘কোয়াক চিকিৎসক’। এ ধরনের চিকিৎসকদের থাকে না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতা। কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যায়। এতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারি অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরাল করার দাবি জানিয়েছেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি ও বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদী-ই-মাহবুব। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্বল মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়ী। কেউ কারো দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন না। দেশে ভুয়া চিকিৎসকের অভাব নেই। এতে দেশের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।