গাজা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর
গাজায় চলমান যুদ্ধ অবসানে নতুন উদ্যোগে একত্রে কাজ করছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে বিতর্কিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্প্রসারণের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইসরায়েল হায়োম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ ২০ মাস ধরে চলা গাজা সংঘাতের অবসান টানতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। যুদ্ধ সমাপ্তির শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসকে গাজা উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে গাজা থেকে সরিয়ে চারটি আরব রাষ্ট্রকে অঞ্চলটির প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে আলোচনায়। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, বাকি দুটি দেশের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
একইসঙ্গে গাজার পুনর্গঠন এবং যুদ্ধাক্রান্ত বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়দাতা দেশগুলোর প্রস্তুতির কথাও বলা হয়েছে। যেসব ফিলিস্তিনি গাজা ত্যাগ করতে ইচ্ছুক, তাদের অভিবাসনের সুযোগ দিতে একাধিক দেশ সম্মত হতে পারে বলেও জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম তীরের নির্দিষ্ট অংশে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিতে পারে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিতে বলা হচ্ছে।
দাবি করা হয়েছে, এতে করে সৌদি আরব ও সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।
তবে বিষয়টির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা রয়েছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া মন্তব্যকেও অনেকে “জনমত গঠন” কৌশল হিসেবে দেখছেন।
গাজা যুদ্ধ থামাতে মিশরের কায়রোতে চলমান মধ্যস্থতাকারী আলোচনা এখনো কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি পায়নি। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল আলোচনায় প্রতিনিধি না পাঠালে, তারাও সিনিয়র প্রতিনিধি পাঠাবে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) ধারণা করছে, গাজায় হামাসের হাতে এখনো ৫০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত থাকতে পারে।
ভোরের আকাশ/হ.র
সংশ্লিষ্ট
চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই অবশেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্থানীয় সময় এ ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় প্রশাসন।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, চুক্তিটি বিরল খনিজ ও প্রযুক্তি পণ্যসংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর কেন্দ্রীভূত। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পণ্যের রপ্তানি আবেদন পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেবে তারা। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেবে।বিবৃতিতে চীনা পক্ষ বিস্তারিত কিছু না জানালেও, এর আগেই হোয়াইট হাউস জানায়—জেনেভা ভিত্তিক পূর্ববর্তী আলোচনার ধারাবাহিকতায় এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।মাসের শুরুতে লন্ডনে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন ট্রেজারি মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হে লাইফেং—দুই পক্ষের নেতৃত্বে বৈঠকে জেনেভা ঐকমত্য বাস্তবায়নের বিষয়ে চুক্তিতে উপনীত হয় তারা।দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে আসছে, চীন বিরল খনিজের রপ্তানিতে নানা বাধা দিচ্ছে। অন্যদিকে বেইজিং অভিযোগ তোলে, ওয়াশিংটন প্রযুক্তি খাতে বিধিনিষেধ ও চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।চীনের এই বিবৃতি পূর্বের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। দ্য কনফারেন্স বোর্ডের চীন কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আলফ্রেডো মন্টুফার-হেলু বলেন, “যেহেতু বিরল খনিজ এখনো দুই পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত উপাদান, তাই এই খাতে বাণিজ্য এখনই পুরোপুরি উন্মুক্ত হবে না।”বাণিজ্যচুক্তি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমরা অনেক দেশের সঙ্গে চুক্তি করিনি। তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি—ধন্যবাদ, আপনাকে ২৫, ৩৫ বা ৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটাই সহজ নিয়ম।”এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন পারস্পরিক শুল্কনীতি চালু করেছিল—যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যেমন শুল্ক চাপায়, আমেরিকাও সেই দেশের পণ্যে ততটাই শুল্ক আরোপ করে। যদিও এপ্রিলের ৯ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।তবে চীনের ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর না হওয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা নেয় বেইজিং। তখন উভয় দেশের মধ্যে শুল্কহার বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৪৫ শতাংশ ও ১২৫ শতাংশে। ভোরের আকাশ/হ.র
ফ্লাইট চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের এক ক্রু সদস্য মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জেদ্দা থেকে লন্ডনগামী সৌদিয়ার এসভি-১১৯ ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে।ফ্লাইটটি আকাশে থাকাকালীন সময় ওই ক্রু, যিনি ক্রু ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে ফ্লাইটটি মিসরের রাজধানী কায়রোতে জরুরি অবতরণ করে। পরে কায়রোতে নামার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের নাম মোহসিন বিন সায়েদ আলজাহরানি।এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী ফ্লাইটে যাত্রী বা কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় বিমানকে জরুরি অবতরণ করানো হয়ে থাকে। এর আগে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে এমনই এক ঘটনায় তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একজন পাইলট মাঝ আকাশে মারা গেলে বিমানটি নিউইয়র্কে জরুরি অবতরণ করেছিল।ভোরের আকাশ/হ.র
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সাম্প্রতিক সংঘাতে গত তিন দিনে অন্তত ১৫ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, শুক্রবার উত্তর গাজার তুফাহ এলাকায় একটি সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেড। এতে ওই যানে থাকা ১৭ সেনার মধ্যে ৭ জন নিহত হন এবং বাকিরা আহত হন।এর আগে বৃহস্পতিবার গাজা সিটি এলাকায় আল কাসামের হামলায় আরও একজন সেনা নিহত হন বলে জানায় তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি। এদিন ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া যান ও একটি বুলডোজার ধ্বংস করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।বুধবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় আল কাসাম ব্রিগেডের গুলি ও রকেট হামলায় প্রাণ হারান আরও ৭ সেনা, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার।রয়টার্স-এর মতে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ফের অভিযানে যাওয়ার পর এত অল্প সময়ে সেনা হতাহতের এমন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায়, যাতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৬ হাজার ৩৬৫ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ২৩৯ জন।চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও মাত্র দুই মাসের মাথায় ১৮ মার্চ থেকে আবারও অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। পাশাপাশি গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়ার ফলে সেখানে মারাত্মক মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হেফাজতে থাকা ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনও জীবিত। তাদের উদ্ধারে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধে বারবার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে একটি মামলাও চলমান রয়েছে।যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার শুরু থেকেই মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো পক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। ভোরের আকাশ/হ.র
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফেরাতে সক্রিয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে মিলিত সামরিক অভিযানের পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় মার্কিন প্রশাসন। এর পরপরই নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার অংশ হিসেবে তেহরানকে দেওয়া হয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব। এই তথ্য উঠে এসেছে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে।যুক্তরাষ্ট্রের মূল দাবি, ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ— অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম উৎপাদন— চিরতরে বন্ধ করে। এর পরিবর্তে ইরানকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বেসামরিক ব্যবহার উপযোগী একটি পরমাণু প্রকল্প স্থাপনের, যার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার।যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই বিনিয়োগ সরাসরি ওয়াশিংটনের তহবিল থেকে নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলোর পক্ষ থেকেই এই অর্থায়ন করা হবে।প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বিদেশি ব্যাংকে আটকে থাকা ইরানের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার তহবিল মুক্ত করার পাশাপাশি একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল বা বাতিলের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তেহরানের রাজি হলে এসব ছাড়ের বাস্তবায়ন হতে পারে।সিএনএনের তথ্যমতে, গত ২০ জুন হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে একটি গোপন বৈঠক হয়। সেখানে উপসাগরীয় অংশীদারদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নতুন পরমাণু প্রকল্প গঠনের প্রস্তাব, ফরদো স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি এবং বিনিয়োগ কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এই আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর অনেক বিষয়ই পরিবর্তনশীল।যদিও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বসতে পারে, তবে তেহরান সে বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই স্পষ্ট করে বলেন, এমন কোনো বৈঠকের বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা নেই। ভোরের আকাশ/হ.র