আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ০২:৪২ এএম
ছবি সংগ্রহীত
আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। সোমবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
আসিয়ানের এই সিদ্ধান্তকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার ইব্রাহিম সোমবার মিয়ানমারে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ১১ সদস্যের আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতারা যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে ‘‘গভীর উদ্বেগ’’ প্রকাশ করেন এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় ‘‘বাস্তব অগ্রগতির অভাব’’ নিয়ে সতর্ক করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের আগে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে আসিয়ান দেশগুলোকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হলেও, জোটের ভেতর কোনও ঐকমত্য না থাকায় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে না বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
একজন আঞ্চলিক কূটনীতিক এএফপিকে বলেন, ‘‘আসিয়ানের ব্যানারে কোনও পর্যবেক্ষক দল মিয়ানমারে যাবে না, যদিও কিছু দেশ চাইলে দ্বিপাক্ষিকভাবে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে।’’
সোলারিস স্ট্রাটেজিস সিঙ্গাপুরের বিশ্লেষক মুস্তাফা ইজুদ্দিন বলেন, ‘‘আসিয়ানের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের বৈধতা অর্জনের প্রচেষ্টায় বড় আঘাত হানবে। এতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।’’
এদিকে জান্তা সরকার জানিয়েছে, দেশের বিশাল অংশে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে না, কারণ ওইসব এলাকা এখনো গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা ও জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতিকে ‘‘বিপর্যয়কর’’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটি একের পর এক সংকটে জড়িয়েছে। সেনাবাহিনী জনগণকে রক্ষা করার বদলে এখন তাদের ওপরই হামলা চালাচ্ছে।’’
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে ‘‘প্রহসন’’ বলে আখ্যা দিয়েছে, আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে যে জান্তা সরকার ‘‘দমনমূলক কৌশল’’ অবলম্বন করে ভোটবিরোধীদের গ্রেপ্তার করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার কাইসা অলংগ্রেনও বলেন, ‘‘মিয়ানমারের এই নির্বাচন না অবাধ, না সুষ্ঠু। এমন প্রক্রিয়ায় আমরা পর্যবেক্ষক পাঠাব না, যাকে আমরা নির্বাচন বলে স্বীকৃতি দিই না।’’
বর্তমানে আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং সর্বশেষ যোগ দেওয়া পূর্ব তিমুর। অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা নেতাদের আসিয়ানের বৈঠকে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে।
এর আগে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ সতর্ক করেছিলেন—‘‘জান্তা সরকারের প্রহসনকে বৈধতা দিতে মিয়ানমারে পর্যবেক্ষক পাঠানো উচিত হবে না আসিয়ানের।’’
ভোরের আকাশ//হর