আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ১১:১৪ পিএম
যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মহড়া: সারাদেশে তৎপর ভারত
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা মহড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় রাজ্যভিত্তিক নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মহড়াটি শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে, যার মূল লক্ষ্য সাধারণ নাগরিকদের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা। ভারতের ২৭টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২৫৯টি সিভিল ডিফেন্স ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেরও ৩১টি স্থান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এনডিটিভি জানায়, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসহ মোট ২৪৪টি এলাকায় মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দিল্লির পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি, শোধনাগার এবং জলবিদ্যুৎ বাঁধের মতো স্পর্শকাতর এলাকাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কীভাবে চলবে মহড়া?
মহড়ায় মূলত বিমান হামলার সময় করণীয় বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা হবে। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, সাইরেন সিস্টেমের কার্যকারিতা যাচাই করা, ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ প্রক্রিয়ায় দ্রুত আলো নিভিয়ে শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করার মহড়া, এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর ঢেকে রাখার প্রস্তুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া সিভিল ডিফেন্সের স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ড এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে অনুশীলন করা যায়।
মাঠে নেমেছে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী
খবর অনুযায়ী, বেশ কিছু জেলায় মহড়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এনডিআরএফ, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে মহড়াগুলো পরিচালিত হচ্ছে। জম্মুর একটি স্কুলে বিমান হামলার সাইরেন বাজলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ডেস্কের নিচে আশ্রয় নেয়—এমন একটি দৃশ্যও এএনআই ভিডিওতে প্রকাশ পায়।
উত্তর প্রদেশে পুলিশের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারাও আগুন নির্বাপণের মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। লাক্ষ্নৌতে হামলার সময় নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় পদপিষ্ট হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশে ১৯টি স্থানকে উচ্চ-ঝুঁকির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের পাশাপাশি রাজস্থান, পাঞ্জাব, উড়িষ্যা, কর্নাটক, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও মনিপুরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের ২০টি ও উড়িষ্যার ১২টি স্থানে, গুজরাটের ১৫টি, মহারাষ্ট্রের ১৬টি এবং কর্নাটকের তিনটি স্থানে সাইরেনসহ মহড়া চালানো হবে।
সতর্ক ভারত, প্রস্তুত রাজ্য প্রশাসন
সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলিতে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে যেন জঙ্গিরা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। ফলে এসব অঞ্চলে পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
এই মহড়া ভারতের যুদ্ধ-প্রস্তুতির একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে তৎপর রয়েছে।
ভোরের আকাশ//হ.র